রাইজিংবিডি স্পেশাল

শুরু হলো নাজাতের দিন

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন : রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস এই মাহে রমজান। দেখতে দেখতে বিদায় নিলো মাগফেরাতের দিনগুলি। আজ ২১ রমজানের মধ্য দিয়ে শুরু হলো নাজাতের বিশেষ দশদিন।

 

নাজাতের অর্থই হচ্ছে পরিত্রাণ কিংবা মুক্তি। যেহেতু সিয়াম সাধনা তথা এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে বান্দা গুনাহ থেকে মুক্তি পান, পরকালে কঠিন শাস্তি তথা দোজখ থেকে মুক্তি পেয়ে থাকেন, এজন্যই মাহে রমজানকে নাজাতের মাস বলা হয়েছে।

 

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন, ‘যাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা হয়েছে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে সে-ই সফলতা লাভ করেছে।’ (আল ইমরান-১৮৫)।

 

এই আয়াতে বান্দার প্রকৃত সফলতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে নাজাতকে। মাহে রমজানের যত ফজিলত রয়েছে তার শেষ কথাই হচ্ছে নাজাত। এই একমাসে ইফতার, সাহরি, সিয়াম সাধনা, নামাজ, দোয়া, এবাদত বন্দেগী, দান সদকা ও ভাল কাজের সফলতাই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি তথা এই নাজাত।

 

মাহে রমজানকে মহানবী (সা.) নিজেই রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি (সা.) বলেছেন, এটি এমন একটি মাস, যার প্রথম ভাগে আল্লাহর রহমত, মধ্যভাগে গুনাহের মাগফেরাত এবং শেষ ভাগে দোজখের আগুন থেকে মুক্তিলাভ রয়েছে।’ (মিশকাত)।

 

রমজানে বান্দার মুক্তিলাভের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে- এমন অনেক সহিহ হাদিস রয়েছে।

 

হযরত হুযাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে করিম (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য কালেমা পড়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করেছে এবং তার শেষ নিঃশ্বাসও কালেমার উপর হবে। যে ব্যক্তি কোনো দিন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখলো তার শেষ নিঃশ্বাসও সেটার উপর হবে এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সদকা করেছে তার শেষ নিঃশ্বাসও সেটার উপর হবে এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসনাদে ইমাম আহমদ ৯ম খণ্ড, ৯০ পৃষ্ঠা)।

 

বায়হাকি, সুনানে তিরমিজি ও সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, রমজান মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দেয়া হয়।

 

অন্য এক হাদিসে আছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা রমজান মাসে প্রতি ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তিদান করেন। প্রতি রাতেই তা হয়ে থাকে (সুনানে ইবনে মাজা, মুসনাদে আহমাদ)।

 

অন্য হাদিসে আছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা রমজান মাসে প্রত্যেক দিন ও রাতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। আর প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দোয়া কবুল করেন। (মুসনাদে আহমাদ)।

 

বর্ণিত হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায়, রমজানে প্রকৃত রোজাদারকে দিন রাত প্রতিটি মুহূর্তে ক্ষমা করা হয়। 

 

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, যে রমজানে ঈমান এবং ইহতিসাব (আল্লাহের কাছ থেকে পুরস্কারের আশা করা) এর সাথে সিয়াম পালন করবে, তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (আল বুখারি (৩৮), নাসাই, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, ইবনে হাব্বান)।

 

মাহে রমজানের এই নাজাতের দিনগুলিতে এবাদত বন্দেগী করে, আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে নিজের মুক্তি অর্জন করতে না পারলে সে প্রকৃত অর্থেই সবচেয়ে বড় দুর্ভাগা মুসলমান। কারণ, সে জীবনে এই মাহে রমজান আর নাও পেতে পারে, এটিই তার শেষ রমজান হতে পারে। তাই প্রত্যেক বান্দার উচিত এই সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগানো।

 

এক হাদিসে রয়েছে, হযরত জিবরাইল (আ.) এসে নবীজীকে (সা.) বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি, যে রমজান মাস পাওয়ার পরও নিজের গুনাহ মাফ করে নিতে পারলো না। তখন নবীজী (সা.) বললেন, আমীন। (মুসতাদরাকে হাকেম)

 

তাই বান্দার উচিত পবিত্র রমজানের শেষ দশদিনে আগের যত গাফিলতি, ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে তা দূর করে একাগ্রচিত্তে সিয়াম সাধনা করে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন করার মধ্য দিয়ে নাজাত প্রাপ্ত হওয়া। কোনোভাবেই যেন আমরা মাহে রমজানের মতো আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামতকে হেলায় শেষ করে না দেই।

 

মাহে রমজানের শেষ দশদিন তথা নাজাতের এই দিনগুলোতে মহানবী  (সা.) এর সিয়াম সাধনা আমাদের জন্য জ্বলন্ত উদাহরণ। মহানবীকে (সা.) অনুসরণ করার মধ্যদিয়ে দুনিয়া ও আখেরাত থেকে মুক্তি পেতে হবে। প্রিয় নবী (সা.) রমজানের শেষ দশদিনে কীভাবে আমল করতেন তার সম্পর্কেও অনেক হাদিস রয়েছে।

 

উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রমজানের শেষ দশক আসত তখন নবী করীম (সা.) তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশি বেশি এবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাতে জেগে থাকতেন ও পরিবার পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (সহিহ বুখারী)

 

তাই আসুন! নাজাতের এই মাসে যথাযথ সংযম ও অন্তঃবিগলন নিয়ে আল্লাহ তা’আলার দরবারে নিজেদের আত্মসমর্পন করি। সব ধরনের পাপাচার থেকে নিজেকে সরিয়ে বাকী জীবন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে চলার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করি। তবেই আল্লাহর বান্দা হিসেবে আমরা সফলকাম হতে পারি।

 

আল্লাহ আমাদের সবাইকে তওফিক দিন… আমীন ।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জুন ২০১৬/নঈমুদ্দীন/শাহনেওয়াজ