রাইজিংবিডি স্পেশাল

তাপমাত্রা কমাতে ‘সবুজ ঢাকা’

আসাদ আল মাহমুদ : দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় ঢাকার তাপমাত্রা বাড়ছে বেশি করে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কবল থেকে রেহাই পেতে ‘সবুজ ঢাকা’ গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।

 

রাজধানীতে একের পর এক তৈরি করা হচ্ছে বহুতল ভবন। কিন্তু নতুন করে সৃষ্টি করা হয়নি কোনো হ্রদ ও উদ্যান। ফলে তাপমাত্রা বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

 

রাজধানীর তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ‘গ্রিন ঢাকা’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০১৭ সাল থেকে ।

 

ডিসিসি দক্ষিণের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নির্মল বাতাস উপহার দিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ‘গ্রিন ঢাকা’ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। নগরবাসীকে এ কাজে সম্পৃক্ত করতে হোল্ডিং ট্যাক্স কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক বাড়ির মালিক ছাদ ও আঙিনায় নানা জাতের গাছের চারা রোপন করেছেন। এছাড়া ডিসিসি দক্ষিণের  প্রধান সড়কে মিডিয়ান ও ফুট ওভারব্রিজে বিভিন্ন জাতের গাছ লাগনো হয়েছে। আগামি বছর রাজধানীর বড় বড় সড়কে বৃক্ষরোপন করা হবে। এর উদ্দেশ্য বৃক্ষায়ন করে রাজধানীর তাপমাত্রা কমানো ও রাজধানীকে সুন্দর করে তোলা।’

 

তিনি বলেন, ‘গ্রিন ঢাকা প্রকল্পের মাধ্যমে রাজধানীর তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে আনা সম্ভব।’

 

তাকালেই দেখা যায়, রাজধানীতে নতুন নতুন সুউচ্চ ভবন গড়ে উঠছে। কোন কোন প্লটে দু’একটা গাছ থাকলেও তা কেটে ফেলা হচ্ছে। নতুন করে উদ্যান গড়ে উঠছে না। ফলে ফলে সবুজ প্রকৃতির ছোঁয়াও মিলছে না।

 

সম্প্রতি প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৫০ সালে ঢাকা নগরীতে জনসংখ্যা ছিল ৪ লাখ ১৭ হাজার। ২০১৬ সালে জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি। গত ৫০ বছরে দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় ঢাকার তাপমাত্রা বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা দেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ছিল শূন্য দশমিক ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ১ দশমিক ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

 

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলেছেন, গাছপালা কেটে ফেলা, জলাশয়, নালা-ডোবা ভরাট করা, যানবাহন ও কংক্রিটের বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বৃক্ষ-উদ্যানসমৃদ্ধ এলাকার তাপমাত্রা বৃক্ষহীন এলাকার চেয়ে কম। ঢাকা নগরীর গড় তাপমাত্রার চেয়ে রমনা পার্ক এলাকার তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। অন্যদিকে মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার গড় তাপমাত্রা অন্যান্য এলাকার চেয়ে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, গাছপালা পরিবেশ রক্ষায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

 

‘গ্রিন ঢাকা’ গড়ে তোলার কাজে নগরবাসীকে উৎসাহিত করতে হোল্ডিং কর ১০ শতাংশ রেয়াত ঘোষণা করা হয়েছে। এর পরপর অনেক ভবনের ছাদ এবং বারান্দার টবে নানা জাতের গাছ লাগানো শুরু হয়েছে।

   

এদিকে ডিসিসি দক্ষিণ ২০টি প্রধান সড়কের মিডিয়ানে বিভিন্ন জাতের বৃক্ষরোপন করার পরিকল্পনা করেছে। এরই মধ্যে কয়েকটি সড়কের মিডিয়ানে বৃক্ষরোপন করা হয়েছে।

 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাপমাত্রা কমানোর জন্য কৃত্রিম উদ্যান তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টোকিওর মেট্রোপলিটন সরকার ছাদে ন্যূনতম ২০ শতাংশ জায়গায় বাগান করা বাধ্যতামূলক করেছে। এর ফলে টোকিওর গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেয়েছে। সিঙ্গাপুরে রাস্তার ফুটপাতগুলো সবুজ ঘাসে আবৃত করা হয়েছে। ফলে তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েছে বহুলাংশে।

 

এ বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রেখে ডিসিসি দক্ষিণও গ্রিন ঢাকা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বৃক্ষরোপণে নগরবাসীকে উদ্বুদ্ধ করা। বাসার খালি জায়গায় ও ছাদে বিভিন্ন জাতের বৃক্ষ রোপন করা ইত্যাদি।

 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ‘গ্রিন ঢাকা গড়তে চাই। সে জন্য ঢাকায় সবুজায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।   

 

তিনি আরো বলেন, ‘নগরবাসীদেরকে এ কাজে সম্পৃক্ত করতে হোল্ডিং করের ওপর ১০ শতাংশ রেয়াত ঘোষণা করা হয়েছে।’

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/ সেপ্টেম্বর ২০১৬/আসাদ/হাসান/তৈয়বুর রহমান/শাহনেওয়াজ