রাইজিংবিডি স্পেশাল

দুদকের কাছে রিহ্যাবের আবদার

এম এ রহমান : অপ্রদর্শিত অর্থ কিংবা কালো টাকা প্লট বা ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ  করলে ওই অর্থের উৎস নিয়ে দুদক যেন প্রশ্ন না করে- এমন আবেদন করেছে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব।

 

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে মঙ্গলবার সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রতিনিধিদের রুদ্ধদার বৈঠকে তারা এমন দাবি জানান। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র রাইজিংবিডিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

সূত্রটি ‍জানান, রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেন। বেলা ৩টা থেকে ওই বৈঠক বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলে। যেখানে দুদক চেয়ারম্যান ছাড়াও দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল ও দুদকের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন।

 

বৈঠকে রিহ্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, দুদকের দুর্নীতি বিরোধী সকল কার্যক্রমে রিহ্যাবের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তবে দুদক রিহ্যাবে সদস্যদের যাতে অযথা সম্পদের নোটিশ কিংবা গ্রেপ্তারের নামে হয়রানি না করে, সেই জন্য দুদক চেয়ারম্যানের কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন।

 

রিহ্যাব জানায়, তাদের ১২০০ সদস্য রাজধানীর আবাসন উন্নয়নে কাজ করছে। দুদকের পক্ষ থেকে রিহ্যাবের কোনো সদস্যকে সম্পদের বিবরণী নোটিশ কিংবা অন্য কোনো দুর্নীতিবাজের প্লট বা ফ্ল্যাটের বিষয়ে রিহ্যাবকে বার বার চিঠি দেওয়া হয়,  এতে অনেক সময় সংগঠন হিসেবে রিহ্যাবকে  অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এ নিয়ে রিহ্যাব সদস্যদের মধ্যেও ক্ষোভ দেখা দেয়। সদস্যদের দাবি, দুদক চিঠি দিয়ে অযথা হয়রানি করছে। তাই দুদক যেন সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে আবাসন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যায়। অযথা কোনো হয়রানি যেন করা না হয়।

 

রিহ্যাব জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে আবাসন ব্যবসা এমনিতেই খারাপ যাচ্ছে। তার ওপর দুদকের বর্তমান দুর্নীতি বিরোধী কর্মকাণ্ড ও দুদক চেয়ারম্যানের সেক্টর ভিত্তিক দুর্নীতি দমনের ঘোষণায় মানুষ আবাসন খাতে বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছে। এ অবস্থায় কেউ যদি অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা কর দিয়ে আবাসন খাতে বিনিয়োগ করে, তাহলে যেন ওই অর্থের উৎস সম্পর্কে দুদক কোনো প্রশ্ন না করে বা অনুসন্ধান না করে। রিহ্যাবে পক্ষ থেকে এমন অনুরোধ করা হয়।

 

এমন অনুরোধের প্রেক্ষিতে বৈঠকে দুদকের পক্ষ থেকে রিহ্যাবকে জানানো হয়, দুদকের আইন অনুসারে রিহ্যাবের ওই অনুরোধ রাখা সম্ভব নয়। কেননা দুদক দুর্নীতি বিরোধী প্রতিষ্ঠান। কারো অবৈধ অর্থ বা সম্পদের বৈধতা এই সংস্থা দিতে পারে না। দুদক আইন দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান।

 

দুদকের পক্ষ থেকে রিহ্যাবকে বলা হয়, রিহ্যাবের সদস্যরা প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রয়কালে যেন প্রকৃত তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে। সেক্ষেত্রে সদস্যরা কোনো ধরনের তথ্য গোপন না করে। এ বিষয়টি যেন রিহ্যাব খেয়াল রাখে। কারণ দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অধিকাংশ রেজিস্ট্রেশন নিন্ম রেটে হচ্ছে। এর ফলে সরকার প্রচুর রাজস্ব হারাচ্ছে।

 

দুদক ও রিহ্যাবের বৈঠকের বিষয়ে দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল রাইজিংবিডিকে বলেন, আজ রিহ্যাব থেকে তিন সদস্যের একটি টিম দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে রিহ্যাব দুদকের চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযানকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে। তবে কিছু বিষয়ে রিহ্যাব অনুরোধ করে বলেছে, তাদের কোনো সদস্যকে যেন অযথা হয়রানি করা না হয়।

 

অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। রিহ্যাবের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে দুদক যেন সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে নামে।’

 

গত ২৫ অক্টোবর রিহ্যাবের রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি জানান, দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দুদককে অন্যভাবে কাজ করতে হবে। কেবল চিঠি দিয়ে সমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি করলে দেশের টাকা বিদেশে যাবে ও মানুষ টাকা লুকানোর কৌশল রপ্ত করবে। মূলত ডিজিটাল পদ্ধতি যত বেশি কার্যকর হবে, তত দুর্নীতি এমনিতেই কমে যাবে। সেজন্য দেশের টাকা দেশে বিনিয়োগ করার সুযোগ সৃষ্টির জন্য দুদককে কথিত চমক না দেখিয়ে দুর্নীতিতে অর্থ অর্জনের পথগুলো বন্ধ করতে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারি অফিসের দুর্নীতি সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।

 

দুদকের প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, বৈধ উপায়ে অর্জিত অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ আছে। তবে দুদকের কিছু প্রশ্নের জন্য এটি ব্যবহৃত হচ্ছে না। তারা চান না দুদকের কার্যক্রম বন্ধ হোক। তবে সবকিছু মাথায় রেখে দুদকের কাজ করা উচিত। চিঠি দিয়ে দুদক অমুক ভদ্রলোকের নামে ফ্ল্যাট বা প্লট আছে কিনা জানতে চায়। এতে করে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যারা সৎ তারাও ফ্ল্যাট কেনার সাহস পান না।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ নভেম্বর ২০১৬/এম এ রহমান/বকুল