রাইজিংবিডি স্পেশাল

গ্রাহকদের হাজারো অভিযোগ, অনুপস্থিত অপারেটররা

আবু বকর ইয়ামিন : মোবাইল গ্রাহকদের হাজারো অভিযোগ থাকলেও টেলিকম অপারেটরদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) আয়োজিত গণশুনানিতে।

 

যদিও সেবাদাতা মোবাইল গ্রাহকদের কাছ থেকে সরাসরি টেলিযোগাযোগ সংক্রান্ত সেবার অভিযোগ জানতে এ গণশুনানির আয়োজন করে বিটিআরসি।

 

বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত পদস্থ কর্মকর্তারা শুনানিতে অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও তাদের কাউকেই শুনানিতে দেখা যায়নি। এ নিয়ে উপস্থিত গ্রাহকদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

 

বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, মোবাইল অপারেটরগুলোকে শুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানালেও তারা শুনানিতে অংশ নেননি। তবে কী কারণে তারা অংশ নেননি, এ বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

 

গণশুনানিতে অংশ নেওয়া গ্রাহকরা মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের নানা বিড়ম্বনা আর অভিযোগ তুলে ধরেন অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে বিভিন্ন সুপারিশের পাশাপাশি বিটিআরসির ভূমিকা পালনের দাবি জানান তারা।

 

শুনানিতে কলড্রপ, ভয়েস কল তথা ইন্টারনেট বান্ডেল প্যাকেজ, অযাচিত ম্যাসেজ এবং মূল্য নিয়ে অভিযোগ করেন মহিউদ্দিন আহমেদ নামের একজন গ্রাহক। তিনি বলেন, কলড্রপ হলে তার ফিরতি কোনো সুবিধা আমি কখনো পাইনি। সারাদিন ম্যাসেজ আসে। যাদের মোবাইল ফোনে এ ধরনের ম্যাসেজ যাবে তাদের চার্জ দিয়ে ম্যাসেজ দেওয়া উচিত। এছাড়া ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছি। তা দেখার জন্য যেন কেউ নেই।

 

শুনানিতে অংশ নেওয়া সেবা গ্রহীতা এস এম বদিউজ্জামান জানান, রাত-দিন অহেতুক বিভিন্ন এসএম দেওয়া হয়। বিভিন্ন কোম্পানি থেকে নানা অফার নিয়ে আমাদের কাছে এসএমএস আসে। আমি একজন গ্রামীণফোন অপারেটরের গ্রাহক। আমার নাম্বারটি বিটিআরসি কিংবা অপারেটরগুলো সংরক্ষণ করবে। কিন্তু সেটি কীভাবে বিভিন্ন ব্যবসায়িক গ্রুপের হাতে যায় সেটি দেখা দরকার।

 

ব্যবসায়ী সাওন মজুমদার বলেন, বিভিন্ন সময় অপ্রয়োজনীয় সব তথ্য দিয়ে আমাদের কাছে ম্যাসেজ পাঠানো হয়। বলা হয়, আমি এত পয়েন্ট পেয়েছি। আমি এটা পেয়েছি, সেটা পেয়েছি। কিন্তু বাস্তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে দেখা যায় ভিন্ন একটি বিষয় আমাকে বলছে অথবা এটির জন্য বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। বিষয়গুলো বিটিআরসির অবগত আছে কিনা, এটি আমার প্রশ্ন।

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উম্মে কুলছুম বলেন, আমরা হলে থাকাকালে রুমের ভেতর নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। এর জন্য আমাদের বাইরে গিয়ে কথা বলতে হয়। কিন্তু রাতে আমাদের বাইরে যাওয়া যায় না। এ সময় যেকোনো দুঃসংবাদও আসতে পারে। কিন্তু নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে সেটি জানা যায় না। তাই বলছি, সব অপারেটরের নেটওয়ার্ককে আরো শক্তিশালী করা গেলে আমাদের যোগাযোগ রক্ষা করতে সুবিধা হতো।

   

ইন্টারনেটের নানা অফারের ক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটরগুলোর কৌশল প্রকারান্তরে গ্রাহকের ক্ষতি করে বলে অভিযোগ করে এরশাদ হোসেন নামের এক গ্রাহক বলেন,  প্রায়ই দেখা যাচ্ছে মোবাইল অপারেটরগুলোর নেটের অফার বা কম রেটের কল অফারগুলো রাতের বেলায় দিয়ে থাকে। এর জন্য রাতে পড়াশোনা বাদ দিয়ে অনেকেই ব্যস্ত থাকে নেট নিয়ে। এ ব্যাপারে নজর দেওয়া উচিত।

 

ইশমাত জাহান বলেন, দেশি অপারেটর হিসেবে সবাইকে টেলিটক সেবাকে আরও আকর্ষণীয় করতে এর নেটওয়ার্কের মান উন্নয়ন করা উচিত।

 

এছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে শুনানিতে আসা গ্রাহকরা মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর  প্যাকেজের (ভয়েস, ডাটা, বান্ডেল) মূল্য নিয়ে, প্রি-পেইড ও পোস্ট পেইড প্রতারণা, টেলিটকের নেটওয়ার্কের মান উন্নয়ন,  প্রতারণামূলক এসএমএস করলে শাস্তির বিধানসহ সাইবার অপরাধ,  মোবাইল ফোনে হুমকি,  ফেসবুক ব্যবহারে নিরাপত্তা চেয়ে গণশুনানিতে পরামর্শ ও সুপারিশ তুলে ধরেন।

 

শুনানি শেষে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাজাহান মাহমুদ মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সেবার মান নিয়ে গ্রাহকদের বিরক্তি আর অভিযোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, এসব সমাধানে তারা উদ্যোগী হতে চান। এজন্য প্রতি ছয় মাস অন্তর এ রকম গণশুনানির আয়োজন করবে বিটিআরসি। গ্রাহকদের অভিযোগ শুনে তা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

 

শাজাহান মাহমুদ বলেন, গ্রাহক ভোগান্তি কমাতে শক্তিশালী করা হচ্ছে বিটিআরসিকে। এর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অনেক যন্ত্রপাতিসহ লোকবল বাড়ানো হচ্ছে। গ্রাহকদের স্বার্থ যাতে পুরোপুরি রক্ষা হয়, সেদিকে লক্ষ রেখে কাজ করে যাবেন তারা।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ নভেম্বর ২০১৬/ইয়ামিন/মুশফিক