রাইজিংবিডি স্পেশাল

সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকতে চায় ইসি

হাসিবুল ইসলাম মিথুন : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই লক্ষে ইসি ইতোমধ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সকল কমিশনারের লক্ষ্য হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার ও দেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করার।  তাই নির্বাচন কমিশন গত ১৬ জুলাই সাতটি কর্মপরিকল্পনা সামনে রেখে বই আকারে একটি রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে। এই রোডম্যাপ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচনী রোডম্যাপের এই দলিলই সর্বশেষ নয়। সময় ও বাস্তবতার নিরিখে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে কমিশন কর্মকর্তারা আরো বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সময়ের প্রয়োজনে ঘোষিত রোডম্যাপে পরিবর্তন আসতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ আস্থাশীল। নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে বিদ্যমান আইনই যথেষ্ট।’ ইসির সাতটি কর্মপরিকল্পনা হচ্ছে সংলাপ, নির্বাচনী আইন ও বিধি সংস্কার, সীমানা পূনঃনির্ধারন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, ভোট কেন্দ্র স্থাপন এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ। এছাড়া আগামী ৩১ জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চলবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে সংলাপ। এই লক্ষে ইতোমধ্যে সুশীল সমাজের সেবক হিসেবে আছেন এমন ৬০ জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইসি। এই সংখ্যাটা আরো বাড়তে পারে। আগামী ৩১ জুলাই সকাল ১১টায় নির্বাচন ভবণের সম্মেলন কক্ষে সুশীল সমাজের অংশগ্রহণে এই সংলাপ শুরু হতে যাচ্ছে। রোডম্যাপ প্রকাশের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের এই রোডম্যাপ জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে।’ আবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলছে ইসির ঘোষিত ‘রোডম্যাপ’ খুবই সুন্দর হয়েছে এবং বাস্তবসম্মত হয়েছে। এদিকে বিএনপির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের জন্য ইসি অনেক পরিকল্পনাই হাতে নিয়েছে যা আপনারা সবাই ইতোমধ্যে দেখতে পেয়েছেন। আমরা চাই আমরা সকল সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকি। আমরা দেশের জনগণকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে চাই। সেই লক্ষেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘রোডম্যাপ নিয়ে অনেকেই আলোচনা-সমালোচনা করছেন আমরা তা জানি। আমরা এটাও জানি যে, এটা বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন একটা কাজ। তবে আমরা আশাবাদী যে, এই কঠিন কাজে আমরা সফলতা বয়ে আনতে পারবো এবং সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবো। সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যদি আমরা সামনের দিকে এগোতে পারি তাহলে আমরা অবশ্যই একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য একটা ক্ষেত্র তৈরি করতে পারবো, যেখানে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারবো।’ তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব গ্রহনের পর কুমিল্লা সিটি নির্বাচন করেছি। দেশের মানুষ সেই নির্বাচন থেকেই দেখেছে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারি কিনা। সেই নির্বাচনে কিন্তু কোন ধরনের সহিংসতা হয়নি। সবার কাছে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’ কবিতা খানম আরো বলেন, ‘আগামীতে আরো কিছু সিটি নির্বাচন আছে যেমন রংপুর, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, সিলেট ও গাজীপুর। এই নির্বাচনগুলো যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সেই জন্য কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। দেশের প্রথম এই নারী নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনী আইন প্রসঙ্গে বলেন, ‘নির্বাচনকে যুগোপযোগী করার জন্যই প্রতিবছর আইন সংস্কার করা হয়। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে সেই ফ্লোর তৈরি করা। তাই নির্বাচনী আইন সংস্কার করে নির্বাচন সহজ করা হয়ে থাকে। এতে ভোটাররা যেমন ভোট দিতে সুবিধা পায়, তেমনি  ইসির মাঠপর্যায়ের কর্মীরাও বিভিন্ন জটিলতা থেকে মুক্তি পায়। ইসি সূত্রে জানা যায়, একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশাল কর্মযজ্ঞ গুছিয়ে নিতে চারটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি করা হয়েছে। ইসি সচিব ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের এ কমিটিতে রাখা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও পদোন্নতি; নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম সীমানা পুনর্নির্ধারণ; নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ভোটার তালিকা, জাতীয় পরিচয়পত্র ও স্মার্টকার্ড প্রস্তুতি এবং নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম আইন সংস্কার কমিটির প্রধান থাকবেন এবং ইসি সচিব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সাচিবিক দায়িত্বে থাকছেন। ইসি সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ জুলাই ২০১৭/হাসিবুল/শাহনেওয়াজ