রাইজিংবিডি স্পেশাল

কামারপল্লিতে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা

আসাদ আল মাহমুদ : পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র এক দিন বাকি। এরইমধ্যে জমে উঠেছে কোরবানির জন্য প্রয়োজনীয় দা, ছুরি ও চাপাতির বেচাকেনা। সময় যত ঘনিয়ে আসছে, রাজধানীর কামারদের ব্যস্ততাও তত বাড়ছে। দা, বটি, কুড়াল, ছুরি, চাপাতিসহ ধারালো জিনিস তৈরিতে যেন দম ফেলার সময় নেই কামারদের। দিনরাত সমান তালে টুং টাং শব্দে মুখর রাজধানীর বিভিন্ন এলকার কামারপট্টি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কামারপাড়ার চিত্র এখন এমনই। রাজধানীর রায়েরবাগ, শনির আখড়া, খিলগাঁও ও যাত্রাবাড়ী বাজারের কামারপল্লি ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। দা-ছুরি বিক্রেতা সবুজ বলেন, বছর ঘুরে কোরবানির ঈদ এলেই স্বাভাবিকের চেয়ে ব্যস্ততা একটু বেশিই থাকে। এক দিন পড়ে ঈদ। তাই ক্রেতার চাপ অনেক বেশি। সবাই গরু কেনাকাটায় ব্যস্ত। তবে আমাদের প্রস্তুতি আমরা নিয়ে নিচ্ছি। আশা করি, কাল বেচাকেনা বাড়বে। আব্দুর রহমান নামের এক ক্রেতা কোরবানির পশু জবাই করার ছুরি ও মাংস কাটার জন্য একটি চাপাতি কিনেছেন। তিনি বলেন, রাজধানীতে ছুরি ও চাপাতি মূলত মৌসুমি কসাইরাই বেশি কিনে থাকেন। অনেকে শখের বশে কেনেন। কারণ, রাজধানীর কোরবানির পশুর কাটাকাটি মূলত কসাইরাই করে থাকেন। তবে যিনি কুরবানি দেন তিনিও তাদের সহযোগিতা করেন। দা-ছুরি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি পিস চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা। চামড়া খোলার ছুড়ি ৩০ থেকে ১৫০ টাকা। চাইনিজ কুড়াল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। দা ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। বটি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা। গরু জবাইয়ের ছুরি প্রতিটি ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। পুরনো যন্ত্রপাতি শান দিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। রায়েরবাগ কামারপাড়ার কারিগর মো. রমজান হোসেন জানান, তিনি ১৫ বছর ধরে এ পেশায় আছেন। প্রতি বছরই এ সময়টায় অনেক ব্যস্ত সময় পার করেন তিনি। এখন অনেক ব্যস্ততা। দিন যত গড়াবে ব্যস্ততা বাড়বে। এ সময় প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত কাজ করেন তিনি। চলবে ঈদের আগের দিন রাত ২টা পর্যন্ত। কোরবানির ঈদের আগের ১ সপ্তাহ দোকানভেদে ২ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। ঈদের আগের রাত পর্যন্ত কাজ করে ঈদের দিন সকালে গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ যান তিনি। আরেক কামার নয়ন মিয়া বলেন, ‘যত কাজ তত টাকা। ভাত খাওয়ার সময় পাই না। ঈদের তিন দিন আগে থেকে বেশি ব্যস্ততা থাকে। এই সময়ে কাজ ছাড়া কিছু বুঝি না।’ খিলগাঁও বাজারের কামার সুব্রত দাস জানান, সারা বছর খুব একটা কাজ থাকে না। কোরবানি এলেই কাজ বেড়ে যায়। তাই এ সময়টাতে কাজ একটু বেশি করেন। এই সময়টাতে একটু বাড়তি আয়ের উদ্দেশ্যে দিন-রাত পরিশ্রম করেন। অপরদিকে, ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, ঈদ মৌসুমে ক্রেতা সমাগম বেশি হওয়ায় কামাররা ইচ্ছেমতো দাম হাঁকাচ্ছেন। অন্য সময়ের তুলনায় প্রত্যেকটা সরঞ্জামের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি নিচ্ছেন। রায়েরবাগ বাজারে গরু জবাইয়ের ছুরি কিনতে আসা এম জামান বলেন, এখন প্রত্যেকটা ছুরি এবং বটির দাম বেশি নিচ্ছে। ঈদ আসলেই তারা এমনটা করে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ আগস্ট ২০১৮/আসাদ/রফিক