রাইজিংবিডি স্পেশাল

এগিয়ে চলছে প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কাজ

কেএমএ হাসনাত : বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে স্থবির অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে সেগুলো বাস্তবায়নে মনোনিবেশ করে।পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন খাতে এমন কিছু বৃহৎ প্রকল্প  হাতে নিয়েছে যেগুলো অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। বর্তমানে দ্রুততার সঙ্গে চলছে প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক ১০টি মেগা প্রকল্পের কাজ। এসব প্রকল্পে অর্থায়নসহ নানা বিষয়ে অর্থ বিভাগের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ভবিষ্যতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখার ভিত্তি রচনার ক্ষেত্রে মেগা প্রকল্পগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে বহুল আলোচিত ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’। বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থাগুলো দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রতিশ্রুত অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু হয়। এ অবস্থায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নানা ধরনের টিপ্পনি কাটতে কুণ্ঠা বোধ করেনি। নানা সমালোচনার মুখে কালি লেপন করে প্রকল্পটির প্রায় অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রকল্পে অর্থ যোগান দেওয়ার পেছনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিরাট ‍ভূমিকা আছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দূরত্ব কমবে। যোগাযোগে সময়ও কম লাগবে। জিডিপি আনুমানিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকার প্রকল্পটি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত জুন পর্যন্ত ১৬ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। রাজধানীর যানজট কমিয়ে জনগণের যাতায়াত সহজ এবং দ্রুত করার লক্ষ্যে নির্মিত হচ্ছে মেট্রোরেল প্রকল্প। উত্তরা ফেজ-৩ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০ দশমিক ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল লাইন-৬ বাস্তবায়নের কাজ শেষ হলে গণপরিবহন অনেক সম্প্রসারিত হবে। জাইকার আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটিতে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ৫ হাজার ৬৫ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। প্রকল্পের প্রায় ২৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ কাজ হয়েছে। ‘পদ্মা রেল সংযোগ সেতু’ এর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। চীনের আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গত জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির ২৩ দশমিক ১২ শতাংশ কাজ হয়েছে। ‘দোহাজারি এবং রামু থেকে ঘুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কক্সবাজারের সঙ্গে রেলযোগাযোগ বৃদ্ধি এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটিতে গত জুন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জীভূত ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন (২য় পর্যায়)’ প্রকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় উৎস হিসেবে কাজ করবে। এ প্রকল্পে আর্থিক ও কারিগরী সহায়তা দিচ্ছে রাশিয়া। গত জুন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জীভূত ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। ‘মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার’ প্রকল্প থেকে আসবে বিপুল পরিমাণ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ। জাইকার আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। গত জুন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জীভূত ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৯০ কোটি টাকা। ‘এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে কক্সবাজারের মহেশখালীতে একটি ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। আরো এফএসআরইউ স্থাপনের কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। গ্যাসের প্রাকৃতিক উৎস ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে। ফলে জ্বালানি  নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটি একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। ভারতের আর্থিক ও কারিগরী সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন ‘রামপাল থার্মাল বিদ্যুৎ প্রকল্প’ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করবে। এ প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ১৬ হাজার কোটি টাকা। গত জুন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জীভূত ব্যয় হয়েছে ২৯৪ কোটি ২ লাখ টাকা। ‘পায়রা বন্দর নির্মাণ (১ পর্যায়) প্রকল্প’ বাস্তবায়িত হলে সমুদ্র বন্দরের সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে।এ প্রকল্পটি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।গত জুন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জীভূত ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৫০ হাজার কোটি টাকা।প্রকল্পটি জি-টু-জি এর মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন সহযোগী দেশ/দাতা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। মেগা প্রকল্প ছাড়াও ২০৩০ সালের মধ্যে মোট ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।২০১০ সালে ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন’ প্রণয়নের মাধ্যমে এ কার্যক্রমের সূচনা হয়েছিল। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো প্রতিষ্ঠিত হলে ৪০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ রপ্তানি আয় সম্ভব হবে। এছাড়া, ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ নভেম্বর ২০১৮/হাসনাত/রফিক