রাইজিংবিডি স্পেশাল

জং ধরে রং গেছে

মাকসুদুর রহমান : খুলনা মেট্রো-হ। রেজি: ১১-৪৭৯১। ১৭ বছর আগে মোটর সাইকেলটি মতিঝিল থানা পুলিশ আটক করে। পরে সাইকেল এবং এর মালিকের বিরুদ্ধে চুরির মামলা হয়। দীর্ঘ সময় মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় মোটরসাইকেলটি বাইরে থেকে রোদে পুড়ে কঙ্কালরূপ ধারণ করেছে।

থানার মালখানার অফিসার এসআই মো. ফারুক বলেন, ‘দুই বছর পর ৯ ডিসেম্বর মামলাটির চার্জশিটও আদালতে দেওয়া হয়। এটি মামলার আলামত। মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। আবার ঠিকমতো রাখতেও পারছি না। মোটর সাইকেলটি এর মালিক বা অন্য কারো কোন কাজেও আসবে না।’

থানার নথি ঘেঁেট দেখা গেছে, ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে মতিঝিল এজিবি কলোনির সামনে থেকে ঢাকা মেট্রো-ম ০২-৭৮০৩ নম্বরের একটি কাভার্ড ভ্যান আটক করে পুলিশ। মামলা হয় বিশেষ ক্ষমতা আইনে। মামলার আলামত হওয়ায় এটিকে পল্টন থানায় খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে। রোদে পুড়ে এবং বৃষ্টিতে ভিজে এর এখন অস্তিত্বই ধরে রাখা কষ্ট হচ্ছে। ভ্যান থেকে কিছু যন্ত্রাংশও গায়েব হয়ে গেছে।

শুধু এ দুটিই নয়, এ থানায় এ রকম ৬৮টি মামলার আলামত হিসেবে মোটর সাইকেল, প্রাইভেট কার, ভ্যান, অটোরিকশা, ট্রাক জায়গা স্বল্পতার কারণে বাইরে রাখতে হচ্ছে বলে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ওমর ফারুক জানান।

তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘রাস্তার ওপর শেকল দিয়ে একটার পর এক মোটর সাইকেল, প্রাইভেট কার বেঁধে রাখা হয়েছে। কোনোটা কঙ্কালসার, কোনটা আবার জং ধরে রং বদলে গেছে।’

সরেজমিন যাত্রাবাড়ী, সবুজবাগ, শাহবাগ, ওয়ারী এবং আরও কয়েকটি থানা ঘুরে দেখা যায়, থানার সামনের রাস্তা কিংবা কম্পাউন্ডের ভেতর খোলা আকাশের নিচে আলামত হিসেবে জব্দ করা কার, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান. মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা সারিবদ্ধভাবে রাখা আছে। গাড়িগুলোর বেশিরভাগ যন্ত্রাংশ খোলা। বেশ কিছু গাড়ির শুধু বডি আছে। কোনোটির চাকা, কোনোটির দরজা, কোনোটির কাঁচ নেই। উন্মুক্ত স্থানে পড়ে থাকায় এগুলোর এই অবস্থা হয়েছে।

পুলিশের দায়িত্বশীলরা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘হত্যা, অস্ত্র, ডাকাতি, মাদক, চোরাচালানসহ বিভিন্ন মামলার আলামত বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আদালতের মাল খানায় রাখার নিয়ম। কিন্তু আদালত এলাকায় মালখানার স্বল্পতার কারণে পুলিশই এক প্রকার বাধ্য হয়ে এসব আলামত রাখছে। অথচ এভাবে রাখতে গিয়ে মূল্যবান সম্পদ এখন কঙ্কাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোন মামলা এক যুগ, কোন কোনটি ২০ থেকে ৩০ বছর হয়ে গেলেও মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হচ্ছে না। মামলা শেষ হলেও এসব সম্পদ আর ব্যবহার করা যাবে না।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়ার। বুধবার তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমাদের করার কিছুই নেই। আদালত কোন সিদ্ধান্ত না দিলে আমরা নিলামও করতে পারছি না। তারপরও পুলিশ আলামতগুলো সংরক্ষণে রাখতে সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। কেননা, মামলা প্রমাণে এগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম।’

নি¤œ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘অপরাধ প্রমাণের জন্য যে কোনো মামলায় জব্দ করা আলামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জব্দ তালিকায় থাকা সাক্ষিরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে আলামতগুলো শনাক্ত করেন। এ ক্ষেত্রে আলামত যদি নষ্ট হয়ে যায় অপরাধ প্রমাণ করা যাবে না। কারণ, সাক্ষী যে আলামত দেখেছেন তার হেরফের হলে তিনি শনাক্ত করতে পারবেন না। এ ছাড়া আলামতগুলো নষ্ট হয়ে গেলে, মামলা নিষ্পত্তির পর নিলামে বিক্রি করা হলে উপযুক্ত মূল্যও পাওয়া যাবে না। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে।’ এগুলো তো আদালতের মালখানায় রাখার নিয়ম রয়েছে- এ প্রশ্নের জবাবে এ আইনজীবী বলেন, ‘চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজিএম) আদালতে দুটি মালাখানা রয়েছে। কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় অনেক ছোট জায়গা। এ কারণে মালাখানা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে, সেভাবেই কাজ চলছে।’ 

অবশ্য এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে গত সপ্তাহে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাহেদুল কবিরের নেতৃত্বে ঢাকার সব থানার অফিসার ইনচার্জদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এই মূল্যবান সম্পদ রক্ষা করার জন্য মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তিকরণে আইনি দিকে নিয়ে বিষদ আলোচনা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির তাগিদ দেওয়া হয় বলে সভার একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জুন ২০১৯/মাকসুদ/শাহনেওয়াজ