রাইজিংবিডি স্পেশাল

তৃণমূলের দ্বন্দ্ব ভাবাচ্ছে আ.লীগকে

এসকে রেজা পারভেজ : টানা তিন মেয়াদে সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ যখন উন্নয়নকে প্রধান্য দিয়ে এগোচ্ছে, তখন তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব ভাবাচ্ছে দলটির নীতি নির্ধারকদের।

দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে-এই বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নিয়ে তা নিরসনে এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে  ‘উঠান বৈঠকের’  মাধ্যমে সংকট নিরসনে চেষ্টা চালালেও কিছু ক্ষেত্রে সাংগঠনিকভাবে কড়া পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। বিশেষ করে অন্তর্দ্বন্দ্ব জিইয়ে রেখে স্থানীয় নির্বাচনের সময়ে দলের মনোনীতদের বিপক্ষে কাজ করায় দলের অবস্থান কঠোরই হচ্ছে।

দলীয় সূত্র বলছে, গত কয়েক বছরে স্থানীয় রাজনীতিতে নেতা-কর্মীদের মাঝে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। গত পাঁচ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মাধ্যমে তা প্রকাশ্যে এসেছে। ওই নির্বাচনে ৪৭৩টি উপজেলার নির্বাচনে ১৪৯টিতে চেয়ারম্যান পদে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।  এর মধ্যে ১৪৩ জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।  অর্থাৎ প্রায় এক তৃতীংশ উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ ছিল আওয়ামী লীগ। এমন আরো অনেক উপজেলা রয়েছে, যেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও স্থানীয় কোন্দলের বিষয়টি জোরেসোরে উঠে এসেছে।  বিষয়টি নিয়ে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তৃণমূলের দ্বন্দ্ব দলটিকে বেশ ভাবাচ্ছে।  

মূলত এলাকায় প্রভাব বজায় রাখতে গিয়ে নেতাদের মধ্যে প্রথমে গ্রুপিং, পরে দ্বন্দ্ব তৈরির এই সূত্রপাত। অনেক এলাকায় এমপি-মন্ত্রী নিজেরাও প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে এই দ্বন্দ্ব বড় হচ্ছে। তারা নিজেরাও জড়িয়ে পড়েছেন দ্বন্দ্বে। উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থীর যে তালিকা করেছে, সেখানেও অন্তত ৬০ জন মন্ত্রী-এমপির নাম এসেছে, যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন।   

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য জানান, আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব কাটিয়ে দলে সুশৃঙ্খলা ফেরাতে এবং সংগঠনের সাংগঠনিক ভিত্তি আরো সুদৃঢ় করার জন্য আটটি বিভাগে আটটি টিম হয়েছে। এসব টিমে  অনেক কেন্দ্রীয় নেতারা  রয়েছেন। তারা জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বর্ধিত সভা করছেন।

দলের বেশ কয়েকটি সূত্র জানায়, তৃণমূলে উন্নয়নের সুফল পৌঁছে দিতে স্থানীয় রাজনীতিতে ঐক্যের বিকল্প নেই বলে মনে করছে দলটি। এজন্য দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি এই বিষয়ে কড়া নির্দেশনা রয়েছে, যেকোনো মূল্যে দ্বন্দ্ব নিরসনের।  অক্টোবরে কাউন্সিলের আগে সংগঠিত ঐক্যবদ্ধ তৃণমূল দেখতে চায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।

এদিকে আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক জানিয়েছেন, দেশে ডেঙ্গু ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে সোমবার থেকে (২৮ জুলাই) উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে শোকজ ও বহিস্কারের যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল, তা স্থগিত করা হয়েছে।  পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী করণীয় নিয়ে বৈঠক করবেন সম্পাদকমণ্ডলী। তবে সেপ্টেম্বরের আগে এই প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে না। কারণ শোকের মাস আগস্টে আওয়ামী লীগ এমন সাংগঠনিক কোনো কর্মসূচি রাখে না। 

উপজেলা নির্বাচন ও নেতা-কর্মীদের দ্বন্দ্ব সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম রাইজিংবিডিকে বলেন, রাজনীতি করতে গেছে যেমন দ্বন্দ্ব থাকবে আবার তার সামাধানও হবে। এটি রাজনৈতিক দলের একটি প্রক্রিয়া। তবে দ্বন্দ্বের কারণে দলীয় মনোনয়নের বাইরে গিয়ে কাজ করা অন্যায়। উপজেলা নির্বাচনে যারা সরাসরি অভিযুক্ত, পদে আছেন তাদের শোকজ ও বহিস্কার করা হবে। এখন এটা বিচারের প্রক্রিয়া আছে। অভিযুক্তদের পরবর্তীতে সহানুভূতি দেখানো হবে কি না-সেটি পরে দেখা যাবে।

তৃণমূলে দ্বন্দ্ব নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীল সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সারা দেশে বিভিন্ন ইউনিটে ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলা জেলা পর্যন্ত সংগঠনের যে ভালো দিক আছে, সেগুলো আলোচনা হচ্ছে। পাশপাশি যেসব নেতিবাচক ও দুর্বল দিকগুলো আমাদের ভুল-ভ্রান্তি বা ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে, সেগুলো গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনেক কেন্দ্র করে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় মনোনয়ন প্রার্থীদের বিরুদ্ধেও অনেক বিদ্রোহ প্রার্থী ছিল। নিজেদের মধ্যে ছোট-খাটো দ্বন্দ্ব কোন্দল লক্ষ করা গেছে। এগুলো সমাধানে কাজ চলছে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জুলাই ২০১৯/রেজা/সাজেদ/সাইফ