রাইজিংবিডি স্পেশাল

উদ্বেগের নতুন কারণ বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ

নাসির উদ্দিন চৌধুরী : দেশের ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে আস্থা কমছে মানুষের। এ খাতে অনিয়ম দূর করে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও কোনোভাবেই তা সফলতার মুখ দেখছে না। মূলত খেলাপি ঋণ বেশি ভাবাচ্ছে সরকারকে। পুরো ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে এ খেলাপি ঋণ।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল ব্যাংক মালিকদের সংগঠন ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক শেষে বলেছিলেন, ‘আজকের পর থেকে খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না। ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে আমার একটা শর্ত ছিল। কোনো কিছু আলাপ করার আগে আমার এক দফা। আজকের পর থেকে খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়তে পারবে না। আপনারা কীভাবে বন্ধ করবেন, কীভাবে টেককেয়ার করবেন, কীভাবে ম্যানেজ করবেন, আপনাদের ব্যাপার। এমডিরা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। তাই বলেছি, আজকের পর থেকে খেলাপি ঋণ বাড়বে না।’

কিন্তু এর পরেও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছরের মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় জুন প্রান্তিকে সরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমলেও বেড়েছে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ। শুধু বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা। গত মার্চ মাসের শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৯ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ। জুনের শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ।

বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আরো বাড়ায় নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ অনেক দিন ধরেই বাড়ছে। এটা নতুন কিছু না। আর নিঃসন্দেহে এটা উদ্বেগজনক। সার্বিকভাবে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলছে। অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না, সেই ভবিষ্যদ্বাণী তো ঠিক হয়নি। আমরা যারা অর্থনীতি বিশ্লেষণ করছি, অনেক দিন ধরেই সতর্ক করছি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ এ খাতের অন্যান্য সংস্থা তারাও এ কথা বলছে। অর্থমন্ত্রী নিজেও স্বীকার করেছেন যে, ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের মাত্রা বাড়া উচিত না। কিন্তু এত কিছু সত্বেও তো সুফল তো মিলছে না।

তাই ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ঋণ দেয়া ও আদায়ের ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখানো যাবে না বা রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো যাবে না। বিচারে দীর্ঘসূত্রতার ফলে অনেক মামলা আটকে আছে। ব্যাংক আইনের সংস্কারসহ আরো কিছু বিষয় রয়েছে, এগুলো যদি সুরাহা করা যায় তাহলেই সমস্যার সমাধান হবে।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত ছয় মাসে  খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন শেষে অবলোপন বাদেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। গত মার্চ মাসের শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ ছিল ৫৩ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা বা ৩২ দশমিক ২০ শতাংশ। জুন প্রান্তিকে এসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা বা ৩১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। একইভাবে গত মার্চ পর্যন্ত বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। জুন শেষে তা কমে হয়েছে ২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এ সময়ে বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিকে তাদের খেলাপি ঋণ ছিল ৪ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ আগস্ট ২০১৯/নাসির/রফিক