রাইজিংবিডি স্পেশাল

ঝুঁকি জেনেও অবৈধভাবে পাঠায় পরিবার

আহমদ নূর: ২০১৩ সালে শ্রমিক ভিসায় ওমান যান সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার পাভেল আহমেদ। সেখানে গিয়ে ইউরোপ পাড়ি দেওয়ার লক্ষ্য স্থির করেন। পরিবারের অন্য সদস্যরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে থাকায় সেখানে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা তৈরি হয় তার।

ওমানে তিন বছর থাকার পর পাভেল অবৈধ পথে ইউরোপ প্রবেশের চেষ্টা শুরু করেন। ২০১৯ সালের জুন মাসে পাভেল ইউরোপের দেশ ফ্রান্সে চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। এখন নিয়মিত কাজও করছেন সেখানে।

তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান থেকে ইউরোপ যাওয়াটা সহজ ছিল না পাভেলের জন্য। ওমান থেকে ইরান, ইরাক, গ্রিস, লিবিয়া হয়ে প্রথমে ইতালি প্রবেশ করেন তিনি। এরপর ইতালি থেকে ফ্রান্স যান। এ পথে পাভেলের সামনে মৃত্যু ঝুঁকিও ছিল। মাইলের পর মাইল পথ হেঁটেছেন তিনি। থেকেছেন জঙ্গলে। খাবার হিসেবে কখনো খেয়েছেন রুটি আবার কখনো শুধু পানি।

পাভেলের এ পরিস্তিতির কথা তার পরিবারের সদস্যরাও জানতেন। কিন্তু তারা কখনো তাকে ঝুঁকিপূর্ণ এ পথ থেকে সরে আসার জন্য বলেননি। বরং তাকে আরো কষ্ট করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা।

পাভেলের বোন নেহা আক্তার বলেন, দেশে থাকতে কোনো কাজ করতো না তার ভাই। এ জন্য প্রথমে ওমান পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে প্রায় ৯ লাখ টাকা খরচ করে অবৈধভাবে ফ্রান্সে যায় পাভেল।

পাভেলের বোন জানান, ওমান থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত যেতে তার প্রায় তিন বছরের মতো লেগেছে। দেশে দেশে গিয়ে দালাল বদলাতে হয়েছে। সীমানা পার হতে ২ মাস থেকে শুরু করে ৬ মাস পর্যন্ত একেকটি দেশে অপেক্ষা করতে হতো। সুযোগ তৈরি হলে দালালরা দীর্ঘ পথ হাটিয়ে সীমানায় নিয়ে যেত। দিনে জঙ্গলে ঘুমাত, রাতে হাটত। এরকম ১০/২০ দিনে এক একটি সীমান্ত পাড়ি দিতে হতো। খাবার ফুড়িয়ে যেত। কিন্তু কিনতে পাওয়া যেত না।

তিনি আরো জানান, পাভেল ওমান থেকে প্রথমে ইরান যায়। ইরান থেকে ইরাক-তুরষ্ক হয়ে গ্রিস যায়। তুরষ্ক থেকে গ্রিস পর্যন্ত যেতে দীর্ঘ সাগর পাড়ি দিতে হয়েছিল তার। সমুদ্রে ছোট ট্রলারে অনেককে তোলা হয়েছিল। বিশাল ঢেউ ট্রলারে আছড়ে পড়েছিল।  বড় বড় ট্রলার ডুবে যেত। আগে যারা গেছে তাদের মাধ্যমে ঝুঁকির বিষয়টি জানা যায়। কিন্তু কষ্ট করে যাওয়ায় এখন সে ফ্রান্সে আছে। সামনে সিটিজেনশিপ পাবে।

শুধু পাভেলের পরিবার নয়, অবৈধভাবে যারা ইউরোপ ঢুকতে চান- কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া সবার পরিবারই তাদের বাধা দেন না। বরং কষ্টের মুহুর্তগুলো আসলে সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা দেখিয়ে উৎসাহ দেন।

সিলেটের আরেক যুবক ফয়েজ আহমেদ। অবৈধপথে ইউরোপ প্রবেশের জন্য গত চার মাস ধরে মরক্কোতে অবস্থান করছেন। সুযোগ পেলেই দালাল ঢুকিয়ে দেবে স্পেনে। সে সুযোগের অপেক্ষায় আছেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে ফয়েজ জানান, ভারতীয় এক দালালের আশ্রয়ে আছেন তিনি। তার সঙ্গে ভারতের আটজন ও পাকিস্তানের দুই  ও শ্রীলঙ্কার দু’জন আছেন। সবাই অবৈধভাবে স্পেন যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন।  

তিনি জানান, অবৈধভাবে ইউরোপ যেতে তার প্রায় ১০ লাখ টাকার বেশি খরচ পড়ছে। সব টাকা তার বাবা জয়নুল ইসলাম বহন করছেন। দালালদের সঙ্গে তার বাবাই নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

ব্র্যাকের অভিভাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল ইসলাম হাসান বলেন, তারা ঝুঁকি জেনেও এ পথে পা বাড়ায়। তাদের পরিবারও এসব বিষয়ে জানে। কারণ, এ পথে যেতে যে খরচ হয় তা বহন করে তার পরিবার।

তিনি বলেন, যারা অবৈধভাবে ইউরোপ যেতে চায় তারা মনে করে সেখানেই সব সুখ-শান্তি। সবাইকে বলে দেশে কর্মসংস্থান নেই। কিন্তু তারা এটা কখনো চিন্তা করে না- যে টাকা খরচ করে ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপ যায় সে টাকা দিয়ে ব্যবসা করে ভালো উপার্জন সম্ভব। আর এখন দেশে ব্যবসায় ঝুঁকিও নেই। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ আগস্ট ২০১৯/নূর/এনএ