রাইজিংবিডি স্পেশাল

৩৫০ বৈজ্ঞানিক সহকারীর অবাক কাণ্ড

এম এ রহমান মাসুম : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) ৩৫০ বৈজ্ঞানিক সহকারীর গ্রেড পরিবর্তন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই নাকি তারা ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে (দ্বিতীয় শ্রেণি) উন্নীত হয়েছেন। এতে অবৈধ লেনদেন হয়েছে অন্তত ৫ কোটি টাকা।

একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ইনস্টিটিউট থেকে দপ্তরাদেশ ইস্যু করে ১০ম গ্রেডে বেতন-ভাতাও দেয়া হয়েছে ইতোমধ্যে। এতে সরকারের প্রায় ১০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এর আগে গাজীপুরের জয়দেবপুরে অবস্থিত ওই ইনস্টিটিউটে প্রায় অর্ধশত বৈজ্ঞানিক সহকারীকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে ওই চক্রের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির বিভাগীয় তদন্তে এমন অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে বলেও জানা যায়।

এমন আরো অভিযোগসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরপরই অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র তলব করে গত আগস্টের শেষ সপ্তাহে চিঠি দিয়েছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র রাইজিংবিডিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আযাদ বরাবর পাঠানো চিঠিতে চাওয়া রেকর্ডপত্র আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আযাদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।  তবে মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, দুদকের এ সংক্রান্ত চিঠি তারা পাননি। এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকার করে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেন মহাপরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারী।

অন্যদিকে, অনুসন্ধানের তদারককারী কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক কাজী শফিকুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি অনুসন্ধানাধীন বিষয়ে বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেন।

অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৩৫০ বৈজ্ঞানিক সহকারী ১০ম গ্রেডের (দ্বিতীয় শ্রেণি) কর্মকর্তা না হওয়া সত্বেও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে দপ্তরাদেশ জারি করে বেতন-ভাতা উত্তোলন করায় সরকারের ১০ কোটি টাকা আত্মসাত হয়েছে।

এজন‌্য যাদের দায়ী করা হয়েছে তারা হলেন- বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ‌্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মাহমুদুল হাসান, জ‌্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (অডিট) মো. ইউনুস আলী, উপ-পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মো. শাহ্ আলম মৃধা, বৈজ্ঞানিক সহকারীদের নেতা ফকির মো. বেলায়েত হোসেন।

অভিযোগে বলা হয়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক সহকারীদের নেতা ফকির মো. বেলায়েত হোসেন ৩৫০ বৈজ্ঞানিক সহকারীর কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালককে অবৈধভাবে ম্যানেজ করে বৈজ্ঞানিক সহকারীদের ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তা বানানোর অবৈধ দপ্তরাদেশ করাতে সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।

এভাবে আরো অনেক বিধিবহির্ভূত কাজ করে ফকির বেলায়েত হোসেন প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে, জয়দেবপুরের ছায়াবিথীতে ছয়তলা বাড়ি, প্রাইভেট কার, ইসলামী ব্যাংকের জয়দেবপুর শাখায় প্রায় এক কোটি টাকা, গাজীপুরের সালনা মৌজায় ২০ কাঠা জমি এবং তার গ্রামের বাড়িতে স্ত্রীর নামে কেনা ৫ একর জমি।

সূত্র আরো জানায়, ২০১৩ সালে সাবেক মহাপরিচালক ড. মো. রফিকুল ইসলাম মন্ডল ও তার আত্মীয় উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান সংঘবদ্ধ হয়ে কোনো লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ছাড়াই প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে ৪৫-৫০ জন বৈজ্ঞানিক সহকারী নিয়োগ করেন। যা বিভাগীয় তদন্ত কমিটির তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে ৪২ জনের নামে পৃথক অভিযোগপত্র তৈরি করার সুপারিশ ছিল যার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯/এম এ রহমান/রফিক