রাইজিংবিডি স্পেশাল

প্রশ্নবিদ্ধ নিরীক্ষা আপত্তি রবির: অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

বেসরকারি মোবাইল অপারেটর রবির দাবি, প্রশ্নবিদ্ধ নিরীক্ষা আপত্তির অর্থ পরিশোধ না করায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) গ্রামীণফোনের পাশাপাশি রবিরও সব ধরনের অনাপত্তিপত্র (এনওসি) ইস্যু বন্ধ রাখায় রবিই সবচেয়ে বেশি ক্ষস্তিগ্রস্ত হচ্ছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রবির পক্ষ থেকে বিস্তারিত অবহিত করে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে বলে রবির সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অর্থমন্ত্রী বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন। তিনি দেশে না ফেরা পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না।

এর আগে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে গ্রামীণফোন এবং রবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন মোবাইল ফোন অপারেটরদের সঙ্গে বিটিআরসির বিরোধ শিগগিরই   আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে। এরপর অর্থমন্ত্রী বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। এর মধ্যে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোতে প্রশাসক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রবির পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

মোবাইল ফোন অপারেটর রবির বিরুদ্ধে মোট ৮৬৭ কোটি টাকা নিরীক্ষা আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছে। এই টাকার মধ্যে বিটিআরসি দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ ৬৭৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে আসল ৫০৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এবং সুদ ১৬৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে, এনবিআর দাবিকৃত টাকা ১৮৯ কোটি  ৫০ লাখ টাকা। আসল ১৬১ কোটি ৪০ লাখ এবং সুদ ২৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। বিটিআরসির পক্ষ থেকে এই অর্থ দ্রুত পরিশোধ করার জন্য কোম্পানিকে একাধিকবার তাগিদ দেয়া  হয়েছে। দাবি পরিশোধ না করায় এখন বিটিআরসির পক্ষ থেকে কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ করারও প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আবার এরই মধ্যে রবির পক্ষ থেকে নিরীক্ষা আপত্তির বিষয়ে আদালতে মামলাও করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে কোম্পানিটি বলেছে, রবি সব সময়ই নিয়ম-কানুন মেনে এ দেশে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। আমাদের কাছে সরকারের কোনো ধরনের বকেয়া থাকলে আমরা অবশ্যই তা পরিশোধ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা মনে করি, এরপরও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিরীক্ষা আপত্তির সমস্যা সমাধান সম্ভব। সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সদয় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বিটিআরসি উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেবে বলে আমরা আশা করি।

চিঠিতে রবি দাবি করেছে, এমন একটি অডিট ফার্ম দিয়ে রবির বার্ষিক নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়, যারা নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার মৌলিক অনেক বিষয় মেনে কাজ করেনি। অডিট ফার্মের দেয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে নিরীক্ষা আপত্তির বিষয়ে রবির কোনো বক্তব্য লিপিবদ্ধ করা হয়নি।

অর্থমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে গ্রামীণফোনের নিরীক্ষা কার্যক্রম শুরুর পর রবি ২০১৩ সালে বিটিআরসিকে চিঠি দিয়ে তাদের নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করার অনুরোধ জানায়। এরপর ২০১৬ সালে লাইসেন্স পাওয়ার দীর্ঘ ১৭ বছর পর এ নিরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়, যদিও লাইসেন্সে প্রতি বছর নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলা আছে। দীর্ঘ ১৭ বছর পর নিরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ায় অনেক বিষয়ের নথি এবং ব্যাখ্যা দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। একসঙ্গে ১৭ বছরের নিরীক্ষা কার্যক্রম রবির মতো মোবাইল অপারেটরদের অযাচিত চাপের মুখে ফেলেছে।

চিঠিতে রবি দাবি করেছে, বেশ কয়েকটি বিতর্কিত বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অর্থ দাবি করা হয়েছে। এসব বিষয়ে সমাধান চেয়ে রবি বিটিআরসিকে চিঠি দিলেও আজ পর্যন্ত তা সুরাহা হয়নি। প্রযুক্তিগত দিক দিযে টেলিযোগাযোগ একটি অগ্রসরমান শিল্প। এ শিল্পের নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ বিষয়ে অভিজ্ঞ অডিট ফার্ম প্রযোজন। টেলিযোগাযোগ ব্যবসা প্রক্রিয়ার ওপর যথাযথ জ্ঞান না থাকার কারণে অডিট ফার্ম না বুঝে নিরীক্ষা দাবি উপস্থাপন করেছে প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে রবির এনওসিসহ সব ধরনের অনুমোদন দেয়া বন্ধ থাকার পাশাপাশি ০১৬ নম্বর সিরিজের নতুন নম্বর ব্যবহারের অনুমোদনও দেয়া হচ্ছে না। অথচ গ্রামীণফোন তাদের ০১৭ এর পাশাপাশি ০১৩ সিরিজের নম্বর বাজারজাত করে নতুন গ্রাহক সংগ্রহ করছে। রবির তুলনায় গ্রামীণফোনের নিরীক্ষা আপত্তির পরিমাণ ১৭ গুণ বেশি হলেও সেসব পদক্ষেপ কমিশন এখন পর্যন্ত নিয়েছে তার প্রভাব রবিকেই বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এর ফলে চলতি বছরে রবির প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বিানিয়োগ বাতিল হতে চলেছে বলে দাবি করা হয়েছে। ঢাকা/হাসনাত/সাইফ