রাইজিংবিডি স্পেশাল

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আসছে স্বাস্থ্য বিমা

উন্নত বিশ্বের মতো সরকারি চাকরিজীবী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য চিকিৎসা বিমা চালুর চিন্তা করা হচ্ছে।  কেউ অসুস্থ হলে পরিবারের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে, বা অন্যের কাছে হাত পাততে না হয়, সেজন্য সরকারি চাকরিজীবীদের চিকিৎসায় সমন্বিত স্বাস্থ্য বিমা নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

২০১৮ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের মুক্ত আলোচনায় সরকারি কর্মচারীদের স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনার লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি কর্মচারীদের ক্যানসারসহ নানা মরণঘাতী রোগের চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে সর্বস্ব হারায় এবং অনেক সময় বিভিন্ন সংস্থার দ্বারস্থ হতে হয়।  এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ  পেতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, কোনো সরকারি চাকরিজীবী কিংবা পরিবারের সদস্য অসুস্থ হলে তার পুরো চিকিৎসার ব্যয় বহন করা হবে চিকিৎসা বিমার আওতায়। এজন্য প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবীর বেতন থেকে অল্প পরিমাণ অর্থ (যা এখনো নির্ধারণ হয়নি) কেটে নেয়া হবে।

সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরীর সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়।  ওই বৈঠকে সরকারি কর্মচারীদের স্বাস্থ্য বিমা চালুর লক্ষ্যে কর্মচারীদের ছয় সদস্যের পরিবারকে (স্বামী-স্ত্রী, দুই সন্তান, বাবা-মা/শ্বশুর-শাশুড়ি) ভিত্তি ধরে জীবন বীমা করপোরেশন (জীবীক) ও সাধারণ বীমা করপোরেশনকে (সাবীক) দুটি পৃথক প্রস্তাবনা দিতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, দুই সরকারি বিমা কোম্পানির প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করার আগে জরুরি ভিত্তিতে একটি ওয়ার্কশপ আয়োজন করে বিশ্বের অন্যান্য দেশের  অভিজ্ঞতা বিনিময়ের লক্ষ্যে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ)  প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, জীবন বীমা করপোরেশন ও সাধারণ বীমা করপোরেশনের প্রস্তাব অনুসারে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে স্বাস্থ্য বিমা পরিকল্পনা তৈরি করার একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।  সরকারের দুই বিমা কোম্পানির এ পরিকল্পনা অনুসারে সরকারি কর্মচারীদের জনপ্রতি বিমার অঙ্ক হবে পাঁচ লাখ টাকা।  সাধারণ বীমা করপোরেশনের হাসপাতালে ভর্তি প্রিমিয়াম হবে ছয় হাজার টাকা আর জীবন বীমা করপোরেশনের হবে সাত হাজার ৮১৪ টাকা।

জীবন বীমা করপোারেশনের প্রিমিয়াম বৃদ্ধির শতকরা হার ধরা হয়েছে ৩১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সাধারণ বীমা করপোরেশনের প্রেগন্যান্সি প্রিমিয়াম এক হাজার ১০০ টাকা, অন্যদিকে জীবন বীমা করপোরেশনের একই প্রিমিয়াম হবে পাঁচ হাজার ৪৬৮ টাকা।  জীবন বীমা করপোরেশনের প্রিমিয়াম বৃদ্ধির শতকরা হার হচ্ছে ৩৯৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।

দেশে হাসপাতালগুলোতে সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোারেশন সরকারি কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুবিধায় দিতে পারে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা।  হাসপাতালে অবস্থান করার প্রতি বছর সর্বোচ্চ ২৩ দিন ধরা হয়েছে।  রুম ভাড়ার ক্ষেত্রে প্রকৃত খরচ অথবা সর্বোচ্চ সীমা সাধারণ বীমা করপোরেশনের ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার, আর জীবন বীমা করপোরেশনের ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা।  একবার ভর্তিতে হাসপাতালের অবস্থান সর্বোচ্চ সীমা সাধারণ বীমা করপোরেশনের ক্ষেত্রে ১২ দিন আর জীবন বীমা করপোরেশনের ক্ষেত্রে ২০ দিন।

সাধারণ বীমা করপোরেশনের ডাক্তারের পরামর্শ ফি সর্বোচ্চ সীমা হবে পাঁচ হাজার, অন্যদিকে জীবন বীমা করপোরেশনের প্রস্তাব হচ্ছে ডাক্তারের পরামর্শ ফি ১২ হাজার ৫০০ টাকা। ডাক্তারি ব্যবস্থাপত্র অনুসারে প্রতি বছর ওষুধপত্র প্রকৃত খরচ অথবা সর্বোচ্চ সাধারণ বীমা করপোরেশন ধরেছে ৭৫ হাজার টাকা এবং জীবন বীমা করপোরেশন ধরেছে ৪২ হাজার ৫০০ টাকা।  সাধারণ বীমা করপোরেশন প্রতি বছর ডাক্তারি পরীক্ষার প্রকৃত খরচ অথবা সর্বোচ্চ খরচ ধরেছে ২০ হাজার টাকা, আর জীবন বীমা করপোরেশন ধরেছে ১০ হাজার টাকা।

প্রতি বছর অস্ত্রোপচারের জন্য সাধারণ বীমা করপোরেশনে প্রকৃত খরচ অথবা সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা ধরা হয়েছে।  আর জীবন বীমা করপোরেশন ধরেছে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। আনুষাঙ্গিক সেবা যেমন অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন, ব্লাড ট্রান্সফিউশন, ইনসেনটিভ কেয়ার সুবিধার প্রকৃত খরচ অথবা সর্বোচ্চ সাধারণ বীমা করেপোরেশন ধরেছে ৩২ হাজার ৫০০ টাকা আর জীবন বীমা করপোরেশন ধরেছে ৮০ হাজার টাকা। স্বাভাবিক সস্তান প্রসবের ক্ষেত্রে সাধারণ বীমা করপোরেশন ১৫ হাজার টাকা, জীবন বীমা করপোরেশন ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা, এভরশনের ক্ষেত্রে সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশন ৩০ হাজার টাকা ধরেছে। সিজারিয়ান প্রকৃত খরচ অথবা সর্বোচ্চ খরচ সীমা ৩০ হাজার এবং এক লাখ টাকা প্রস্তাব করেছে।

সরকারি কর্মচারীদের স্বাস্থ্য বিমা প্রবর্তনে ডাটা সংগ্রহের বিষয়টি খুবই জরুরি। অর্থ বিভাগের আওতাধীন আইবাস ডাটাবেজে সব সরকারি কর্মচারীদের ডাটাবেজ যুক্ত করতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও গবেষণা সেলের তথ্যানুযায়ী, দেশে সরকারি চাকরিজীবী ১৩ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৩ জন।

এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির এক লাখ ৪৬ হাজার ৭৯১ জন, দ্বিতীয় শ্রেণির এক লাখ ১৭ হাজার ৭৬১ জন, তৃতীয় শ্রেণির  আট লাখ ২৬ হাজার ৫১৭ জন এবং চতুর্থ শ্রেণির রয়েছে  দুই লাখ ৫১ হাজার ৩৮৪ জন।  চিকিৎসা বিমা চালু হলে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের প্রত্যেকের চিকিৎসার খরচ জোগান দেয়া হবে।

 

ঢাকা/হাসনাত/সাইফ