রাইজিংবিডি স্পেশাল

আনপ্রেডিক্টেবল মহানগর উত্তর

প্রভাবশালীদের বলয় ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে ঘুরপাক খাওয়া ঢাকা মহানগর উত্তরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব কার হাতে যাচ্ছে, বিষয়টি বেশ আনপ্রেডিক্টেবল নেতা-কর্মীদের কাছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটের নেতৃত্ব বাছাইয়ের সমীকরণও বেশ কঠিন বলে মনে করছেন তারা।

শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগের সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  বিকেলে দ্বিতীয় অধিবেশনে ঢাকা দুই মহানগরের উত্তর-দক্ষিণের নতুন নেতাদের নাম ঘোষণা করা হবে।

২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল একেএম রহমতুল্লাহকে সভাপতি ও সাদেক খানকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর উত্তরের কমিটি ঘোষণা করা হয়।  মহানগরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমিটি ঘোষণার পর থেকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব না থাকলেও বিভিন্ন বিষয়ে মতৈক্য সৃষ্টি হয়।  মহানগর ও ওয়ার্ডের কমিটি দিতে গিয়েও বারবার অভিযোগের মুখে পড়ে বর্তমান নেতৃত্ব।  এমনকি তৃণমূল নেতা-কর্মীরা প্রমাণসহ নানা অভিযোগ গণভবনে দলীয় প্রধানের কাছে জমা দেয়ায় কমিটি বাতিলের মতো ঘটনা ঘটে।  এ নিয়ে প্রভাবশালী নেতৃত্ব হওয়া স্বত্ত্বে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে  প্রশ্নের মুখে আছে বর্তমান সভাপতি সাধারণ সম্পাদক।

দলীয় সূত্র বলছে, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক হিসাব-নিকাশ আর বিচার-বিশ্লেষণ করছেন দলীয় হাইকমান্ড।  কে নেতৃত্বে আসবে সেটি হিসেব-নিকাশ করছেন নেতা-কর্মীরা।  গত তিন বছরে মহানগরের দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে বিশ্লেষণ করছেন।  জুয়া, মাদক, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অনুপ্রবেশকারী, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অপকর্মের বিস্তর অভিযোগ নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিবেচ্য হবে।

এদিকে কাউন্সিল ঘিরে পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে শীতল যুদ্ধ শুরু হয়েছে।  দীর্ঘদিন লবিং করতে দৌড়ঝাঁপ করছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। বর্তমান কমিটির নেতৃত্ব যেমন স্বপদে বহাল থাকতে চান, তেমনি পদপ্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন অনেক নেতা।  উত্তরে বিকল্প বে‌শি থাকায় ক‌মি‌টি গঠন কেমন হ‌বে, সে‌টি ‌আচ করা বেশ ক‌ঠিন।  এজন্য বলা হ‌চ্ছে  আন‌প্রে‌ডি‌ক্টেবল।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগে সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন উত্তরের সহ সভাপতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এম এ কাদের খান, আসলামুল হক, বজলুর রহমান।  সাধারণ সম্পাদকের আলোচনায় আছেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, হাবিব হাসান, দপ্তর সম্পাদক সাইফুল্লাহ সাইফুল, কোষাধ্যক্ষ ওয়াকিল উদ্দিন, সহ প্রচার সম্পাদক আজিজুল হক রানা।

মহানগর নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা কাউন্সিলের মাধ্যমে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির একটি চ্যালেঞ্জিং কমিটি উপহার দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

এ সম্পর্ক জানতে চাইলে সম্মেলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা মহানগর উত্তর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।  আওয়ামী লীগের সবগুলো কমিটিতেই নবীন প্রবীণের সমন্নয় থাকে।  এই দুই ইউনিটের নেতৃত্বেও নবীন প্রবীণের সমন্নয় থাকবে।’

‘দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, ইমেজ নষ্ট, এমন কেউ নেতৃত্বে আসতে পারবে না। যারা নেতৃত্বে আসবে, তাদের অবশ্যই তিনটি ক্রাইটেরিয়ো থাকতে হবে।  এর মধ্যে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তার দলের সাথে সম্পৃক্ততা, কর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা ও দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা থাকতে হবে। কোনো অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে সব ক্রাইটেরিয়া থাকলেও বাদ পড়বেন।’

মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান রাইজিংবিডিকে জানান, ‘উত্তরে প্রায় এক হাজার কাউন্সিলর থাকবে’।  দক্ষিণের  দপ্তর থেকে খবর নিয়ে জানা যায়, ‘দক্ষিণেও প্রায় এক হাজার কাউন্সিলর থাকবে।’ ঢাকা/পারভেজ/সাইফ