রাইজিংবিডি স্পেশাল

পোশাক খাত অপ্রচলিত বাজারেও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি

দেশের পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশই আসলেও প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মাঝারী ও ছোট আকারের কারখানা, কাজ হারাচ্ছেন শ্রমিকরা৷

এ খাতের ব্যবসায়ীরা রপ্তানির আয়ের প্রধান গন্তব‌্য ইউরোপ, আমেরিকা ছাড়াও অপ্রচলিত বাজারগুলোতে (অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চীন, জাপান, ভারত, চিলি, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্কসহ আরো কয়েকটি দেশ) জায়গা করে নিতে কাজ করে যাচ্ছে। বাজারগুলোতে প্রবৃদ্ধিও ছিল ভালো। তবে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে চলতি অর্থবছরে অপ্রচলিত এ বাজারগুলোতে।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘পোশাক খাতে বর্তমানে খুবই খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। আমাদের বেশিরভাগ অর্ডার ভিয়েতনাম ও ভারতে চলে যাচ্ছে। প্রতিযোগী দেশগুলো থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়ছি। এর থেকেও ভয়াবহ পাকিস্তানের থেকেও আমরা খারাপ করছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ৬০টি কারখানা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। ২৯ হাজার ৫৯৪ জন শ্রমিক বেকার হয়েছে। আমাদের এখন দরকার সরকারের পলিসি সাপোর্টের। না হলে এ খারাপ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়।’

এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে নতুন বাজারগুলোতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমেছে ৬ দশমিক ০৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি হয়েছে ১২৮ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার। অন্যদিকে গত বছরের একই সময়ে এ খাতের রপ্তানি আয় ছিলো ১৩৬ কোটি ৪৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার।

নতুন বাজারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি হয়েছে জাপানে। গত অর্থবছরে দেশটিতে ২৯ শতাংশ বেড়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১০৯ কোটি ডলারের। ভারতে ৫০ কোটি ডলার, কোরিয়ায় ২৮ কোটি ডলার, চীনে ৫১ কোটি ডলার, অস্ট্রেলিয়ায় ৭২ কোটি ডলার, ব্রাজিলে ১৬ কোটি ডলার। তবে ২৭ শতাংশ কমে গেছে তুরস্কে পোষাক রপ্তানিতে।

বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি মূলত ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা নির্ভর। রপ্তানির ৮২ শতাংশই যায় এ দুটি বাজারে। তবে কোনো কারণে এসব বাজারে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা রপ্তানি তথা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধিতে ভিয়েতনাম অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যমতে, ভিয়েতনাম চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার ৩৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৪৫৬ কোটি ডলারের পোশাক, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি। যা ভাবিয়ে তুলেছে দেশের পোশাক রপ্তানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে।

সরকারও এ সকল বাজারের বাইরে নতুন ও অপ্রচলিত বাজার খুঁজতে ও রপ্তানি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এসব বাজারে রপ্তানির জন্য দেওয়াও হচ্ছে ৪ শতাংশ নগদ সহায়তা। ফলে নতুন বাজারে রপ্তানি বাড়তে শুরু করেছে।

অন্যদিকে ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে চীনের বাজারে পোশাক রপ্তানি করে আয় করেছে ১৩ কোটি ৮৭ লাখ ১০ হাজার ডলার। অথচ গত বছরের একই সময়ে চীন থেকে পোশাক খাতের রপ্তানি আয় ছিল ১৭ কোটি ৮ লাখ ২০ হাজার ডলার। বছরের ব্যবধানে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ।

এছাড়া জুলাই-অক্টোবর সময়ে চিলিতে পোশাক রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩ কোটি ৮২ লাখ ৯ হাজার ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিলো ৩ কোটি ৮৬ লাখ ১০ হাজার ডলার। এই বাজারে প্রবৃদ্ধি কমেছে দশমিক ৮৩ শতাংশ।

অস্ট্রেলিয়ার বাজারে আলোচিত সময়ে এ খাতের রপ্তানি আয় হয়েছে ২৩ কোটি ৬৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার। এই বাজারেও পোশাক রপ্তানিতে ভাটা দেখা দিয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ২৫ কোটি ২৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার। ঢাকা/নাসির/সাজেদ