রাইজিংবিডি স্পেশাল

সভাপতি শেখ হাসিনা, সম্পাদক কে?

নেতাকর্মীদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা এবং সরকারে তার অপরিহার্যতার কারণে রেকর্ড নবমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাচ্ছেন শেখ হাসিনা। বিষয়টি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে একেবারেই দ্বিমত না থাকলেও সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন, সেটিই এখন দলের সব স্তরে সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন।  যদিও কে আসছেন এই পদে-তা নিয়ে কোনো ধরনের ইঙ্গিত মিলছে না।

গত কয়েকদিন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এবং দলের কার্যালয় ঘুরে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রতি সম্মেলনের আগে সাধারণ সম্পাদক কে হবেন, সেটি নিয়ে কিছুটা ধারনা পাওয়া গেলেও এবার সেই সুযোগ নেই। সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম আলোচনায় আছে, তারাও তো বটেই, নীতি নির্ধারনী পর্যায়েরও কারো কাছে কোনো তথ্য নেই। কেউ কেউ বিভিন্ন নেতার পক্ষে নিজের মতো করে যুক্তি দাঁড় করিয়ে পদটির জন্য যোগ্য হিসেবে মূল্যায়ন করছেন। তবে সাধারণ সম্পাদক পদটি এবার সবচেয়ে বড় চমক হিসেবে রাখছেন শেখ হাসিনা। বিষয়টি নিয়ে সম্মেলনে নেতাকর্মীদের আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে শতগুন।

সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য এবার আলোচনায় আছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিএম মোজাম্মেল হক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, কেন্দ্রীয় সদস্য আজমত উল্লাহ খান।

সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন, জানতে চাইলে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কাউন্সিলরদের মাইন্ড সেট আমাদের নেত্রী ভালো করেই জানেন। আমাদের কাউন্সিলররাও তাকিয়ে থাকবে আমাদের নেত্রী কাকে চান, কীভাবে চান, কীভাবে নেতৃত্ব থাকবে। নতুন নেতৃত্বকে কোন মডেলে সাজাবেন তার টিম।’

“এ ব্যপারে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। একুশ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এটা নিয়ে আল্লাহ পাক জানেন, আর নেত্রী জানেন। আমি কিছু জানি না।”

মো. আব্দুর রহমান বলেন, সাধারণ সম্পাদক হবো কি না আমি জানি না এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা সে ব্যাপারে আমাকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিতে চান কি না সেটাও আমার জানা নেই। তবে যদি এটা কোন কারণে হয়, যদি মনে করেন বা এ রকম কোন অবস্থা হয়, তাহলে আমি মনে করি, আমার প্রধান চ্যালেঞ্জই হবে উনার যে ভাবনা, উনার যে রাজনৈতিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য-সেটিকে বাস্তবায়ন করতে নিজেকে নিবেদিত করা। এটাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।

বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক কে হবেন, এটার দায়িত্ব আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার ওপর। উনি সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক, উনিই নেবেন। আমি রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমাদের দলীয় প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমাকে যে দায়িত্ব দেবেন, আমি সেটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেবো। আমাকে যেখানে যে জায়গায় দেয়া হোক। সাধারণ সম্পাদক হওয়াটা আমার মূল লক্ষ্য না, দলটাকে ভালো, আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, জনগণের সেবার উপযোগী রাজনৈতিক দল গড়ে তুলতে যা প্রয়োজন, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি সেসব করছি।’

“ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের যে দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়েছে, আমি চেষ্টা করেছি অত্যন্ত পরিচ্ছন্নভাবে, সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে। সংসদ সদস্য হিসেবে, আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত যে জায়গায়, যেখানে ছিলাম আমি সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আমার যোগ্যতা, মেধা-মনন দিয়ে আমি চেষ্টা করেছি কাজ করার।”

সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা আমাদের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখতিয়ার। যারা কাউন্সিলর, আমরা যারা থাকবো, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সভানেত্রীকে দায়িত্ব দেবো। কারন তিনি তার দীর্ঘ ৩৮ বছরের পথচলায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে যেভাবে দেখেছেন, বুঝেছেন, পর্যবেক্ষন করেছেন; এর থেকে বেশি পর্যবেক্ষন এ দলের মধ্যে আর কারো নেই। বরং তিনি অতীতে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা সঠিক ছিল। দলকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে যুগোপযোগী ছিল। সভানেত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই চূড়ান্ত বলে বিবেচনা হবে।’

প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০টি জাতীয় সম্মেলন হয়েছে আওয়ামী লীগের। এসব সম্মেলনে খন পর্যন্ত সভাপতি হয়েছেন সাতজন। এর মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তিনবার করে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ আটবার, আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ দুইবার এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও আবদুল মালেক উকিল একবার করে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। আর সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন একবার নির্বাচিত হয়েছেন দলের আহ্বায়ক।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ১০ জন। সবচেয়ে বেশি চারবার করে হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিল্লুর রহমান। এছাড়া তাজউদ্দিন আহমেদ তিনবার, আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দুইবার করে, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, আবদুল জলিল এবং ওবায়দুল কাদের একবার করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

২০ ডিসেম্বর বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দু’দিনব্যাপি আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করবেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা।

এরই মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকায় ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে শোভা পাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। পাশাপাশি লাগানো হচ্ছে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্রসংবলিত ফেস্টুন।

মঞ্চ এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে, যেন দেখে মনে হবে পদ্মা নদীর মাঝে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পাশে ভাসমান পাল তোলা নৌকায় বসে সম্মেলন হচ্ছে। নিচের জলরাশিতে ভাসমান বিশাল পাল তোলা নৌকা। সেই নৌকায় লেখা ২১তম জাতীয় সম্মেলন-২০১৯। এর ঠিক পেছনেই আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশাল ছবি। আরও আছে জাতীয় চার নেতা ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর ছবি। আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের মূল মঞ্চ এভাবেই তৈরি করা হয়েছে। মূল মঞ্চের পেছনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ছবি ছাড়াও ঠাঁই পেয়েছে জাতীয় চার নেতা- তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম এ মনসুর আলী এবং এএইচ এম কামারুজ্জামানের ছবি। এছাড়া আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম চার নেতা- মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের ছবি আছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং মঞ্চ ও সাজসজ্জা কমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘এবারের সম্মেলন জাঁকজমকপূর্ণ নয়, বরং সাদামাটাভাবে আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে কোনো ধরনের সাজসজ্জা হবে না। সম্মেলনে সব মিলিয়ে ৫০ হাজার কাউন্সিলর, ডেলিগেটস ও নেতাকর্মী অংশ নেবেন।’ ঢাকা/পারভেজ/সাজেদ