রাইজিংবিডি স্পেশাল

করোনার প্রভাবে পেছাচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন

করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের জ্বালানি খাতেও। এ খাতে দেশের সবচেয়ে বড় তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পায়রা এবং বড়পুকুরিয়ার কয়লা খনিতে জারি করা হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। এমনকি কারিগরি জনবলের অভাবে উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।

জানা গেছে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে পায়রার ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

চীনা নববর্ষের ছুটি উপলক্ষ‌্যে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে কর্মরত প্রচুর চীনা শ্রমিক ও কর্মকর্তা নিজেদের দেশে ফিরে গেছেন। চলতি মাসের প্রথমার্ধে তাদের ছুটি শেষ হলেও করোনা প্রতিরোধে অন অ্যারাইভাল ভিসা সাময়িক বন্ধ করাসহ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তারা বাংলাদেশে ঢুকতে পারছেন না। এতে এই জনবল সংকট তৈরি হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, শুধু পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রেই কর্মরত রয়েছে প্রায় তিন হাজার চীনা নাগরিক। এর মধ্যে বর্তমানে দেশে আছে মাত্র এক হাজার ২৮৫ জন। এমনকি ২৩ জন চীনা নাগরিক নিবিড় পর্যবেক্ষণেও রয়েছেন।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দুর্যোগ আসতেই পারে। করোনা ভাইরাসের বিষয়টিও তেমনই কিছু। কিন্তু এটি দীর্ঘস্থায়ী হলে আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এমনিতেই বর্তমান পরিস্থিতিতেও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। জনবল সংকটের কারণে এই দুটো প্রকল্পের নির্দিষ্ট সময়ে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’

তবে করোনায় জ্বালানি খাতে খুব একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি বলে দাবি করেছেন মন্ত্রণালয়ের অন্য একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘দেশের সব থেকে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা নির্মাণ করছেন প্রায় তিন হাজার চীনা নাগরিক। নিয়মিতই তারা চীনে যাতায়াত করেন। কিন্তু নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় ছুটিতে থাকা দেশটির নাগরিকদের আমরা বাংলাদেশে আর প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। আর যারা এখানে রয়েছেন, তাদের সম্পর্কে সর্বোচ্চ সতকর্তা অবলম্বন করা হচ্ছে। তাই এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই বলে মনে করি।’

তিনি আশা প্রকাশ করেন, খুব শিগগিরই পায়রার ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে।

এদিকে, মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়- করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে বিশেষ সতকর্তা জারি করা হয়েছে। এই দুই স্থাপনাতেই অনেক চীনা নাগরিক কর্মরত।

বিদ্যুৎকেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উৎপাদনের শুরুতে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার কথা চীনা প্রকৌশলী-কর্মীদের। যারা এখন আছে, তাদের দিয়ে সম্ভব কি না বা বিকল্প কোনো উপায় বের করা যায় কি না তা ভাবা হচ্ছে। ধাপে ধাপে বাংলাদেশি প্রকৌশলী-কর্মীদের যুক্ত হওয়ার কথা। হঠাৎ বাংলাদেশি প্রকৌশলীরা এই কেন্দ্র পরিচালনা করতে পারবেন না। এখন যারা আছেন, তাদের দিয়ে কেন্দ্রটি চালু করা যেতে পারে কিন্তু কতদিন তা চালিয়ে নেয়া যাবে তা অনিশ্চিত।

অন্যদিকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে কর্মরত পাঁচজনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এখানে প্রায় ৩০০ জন চীনা নাগরিক কর্মরত আছেন।

করোনা ভাইরাস উদ্বেগে পদ্মা সেতুর চীনা শ্রমিকদের জন্য স্থিতি অবস্থা জারি করেছে সেতু বিভাগ। অর্থাৎ কোনো শ্রমিক বাংলাদেশ ছাড়তে পারবে না আবার যারা চীনে রয়েছেন তাদেরও আপাতত ফিরতে মানা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পে বিপুল সংখ্যক চীনা শ্রমিক কর্মরত থাকায় একই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে করোনা ভাইরাস চীনে ছড়িয়ে পড়ায় সচেতনতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে কর্মরত চীনা শ্রমিকদের এবং তাদের সঙ্গে কাজ করা বাংলাদেশি শ্রমিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

শুধু পায়রা নয় দেশের আরো কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং পরিচালনায় চীনা শ্রমিকের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। শুধু কেন্দ্র নির্মাণই নয়, বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানি এবং সঞ্চালন কোম্পানিতে অনেক চীনা নাগরিক কাজ করছেন। এছাড়াও দেশের জ্বালানিখাতে বড়পুকুরিয়ার কয়লা উত্তোলন এবং মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পে কাজ করছেন চীনা নাগরিকরা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বাইরেও সরকারি-বেসরকারি আরও কিছু প্রকল্পে দেশটির শ্রমিকরা কর্মরত।

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শাহ আব্দুল মাওলা জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি চীনা নাগরিক কাজ করেন। তাই কিছু প্রভাব রয়েছে। এটি খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি, যারা এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত আছেন, তারা যেন সুস্থ থাকেন। এজন্য দেশি-বিদেশি সবার ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে আলাদা করে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।’

 

ঢাকা/হাসান/সনি