রাইজিংবিডি স্পেশাল

নারী নেতৃত্ব তৈরিতে শীর্ষে আওয়ামী লীগ

গত এক দশকে নারীর ক্ষমতায়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দলেও নারী নেতৃত্বের হার বাড়িয়েছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব বিকশিত করতে আওয়ামী লীগের এই উদ্যোগের ধারে কাছে নেই অন্য কোনো রাজনৈতিক দল।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, শুধু দলে নয়, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর সম-অধিকার, ক্ষমতায়ন এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায় দলটি। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারই নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। গত ১০ বছরে সমাজে নারীর অবস্থান যেমন পরিবর্তন হয়েছে, তেমনি নারী নেতৃত্বও বিকশিত হয়েছে। ভবিষ্যতে দল ও সরকারে নারীর আরো সম্পৃক্ততা বাড়াতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের ৩৩ শতাংশ কোটা পূরণেও দলটি এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন নেতারা।  

২০০৮ সালে হওয়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী কোটা পূরণের ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ শর্ত পূরণে যেসব দল ব্যর্থ হবে, আইন অনুযায়ী তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে বলেও আরপিওতে বলা আছে। কিন্তু বেশিরভাগ দল এখন পর্যন্ত এক্ষেত্রে আরপিও অনুসরণ করছে না।

তবে কোটা পূরণে অন্য সব রাজনৈতিক দল অনেক পিছিয়ে থাকলেও এক্ষেত্রে বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলের একুশতম জাতীয় সম্মেলনে ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটির চারটি পদ ফাঁকা রেখে এখন পর্যন্ত ৭৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন পদে ২১ জন মহিলা প্রতিনিধি আছেন। এই সংখ্যা প্রায় ২৮ শতাংশ। এর আগের কমিটিতে নারীর প্রতিনিধিত্বের হার ছিল ১৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে নারীর প্রতিনিধিত্ব। বাকি চারটি পদের একটিতে কোনো নারী নেতৃত্ব এলে দলে নারীর প্রতিনিধিত্ব হবে প্রায় ২৯ শতাংশ। আর দু’টি পদে নারী এলে সেই হার বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৩০ শতাংশ। চারটি পদেই নারী নেতৃত্ব এলে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটিতে নারীর প্রতিনিধিত্ব দাড়াবে ৩১ শতাংশ।

দলের ২১ তম জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ৩৩ শতাংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে তার দল কাজ করছে। দ্রুত এই কোটা পূরণ করা হবে। অর্থাৎ গত ১০ বছরে এ শর্ত পূরণে অন্য দলগুলো তেমন উদ্যোগী না হলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নারীর সংখ্যা বেড়েছে এবং ক্রমেই তা শর্ত পূরণের দিকে এগোচ্ছে।

আওয়ামী লীগে নারী প্রতিনিধির মধ্যে রয়েছেন সভাপতি শেখ হাসিনা, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ডা. দীপু মনি। দলের বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকমণ্ডলীর পদে আছেন ৬ জন নারী। তাদের মধ্যে অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক বেগম ওয়াসিকা আয়েশা খান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা। কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদে আছেন ৮ জন। তাদের মধ্যে বেগম আখতার জাহান, অধ্যাপক মেরিনা জাহান, পারভীন জাহান কল্পনা, হোসনে আরা লুৎফর ডালিয়া, অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম রুমি, অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, মারুফা আক্তার পপি, অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া সরকার ঝর্না।

নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে ইসির কাছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, দলের তিন সহযোগী সংগঠন-বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও মহিলা শ্রমিক লীগের শতভাগ সদস্য নারী। তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব সৃষ্টি ও নারীর ক্ষমতায়নে সংগঠনগুলো কাজ করছে। ২০২০ সালের মধ্যেই সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আওয়ামী লীগ সক্ষম হবে।

তবে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে বা কেন্দ্রীয়ভাবে নারী নেতৃত্ব যেভাবে বিকশিত হচ্ছে, তৃণমূল পর্যায়ের সেটি খুব কম। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তৃণমূল পর্যায়ে নারী প্রতিনিধি সেই অর্থে আসছে না। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, কেন্দ্রের মতো তৃণমূলের নারী নেতৃত্ব বিকশিত হওয়া প্রয়োজন এবং দল সেভাবেই কাজ করছে। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে এর প্রভাব দেখা যাবে বলেও জানান তারা। 

আওয়ামী লীগের ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই দলটিতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল। ভাষা আন্দোলনে যেসব ছাত্রী ও শিক্ষিকা অংশগ্রহণ করেছিলেন, পরবর্তী সময়ে তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের সক্রিয় সদস্য হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নারীর মর্যাদা দিয়েছে জন্মলগ্ন থেকেই। যার একটি ভালো উদাহরণ ১৯৬৪ সালে পুনরুজ্জীবিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের খসড়া ম্যানিফেস্টোতে। সেখানে মৌলিক অধিকার অংশে বলা হয়েছে:

‘নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পাকিস্তানের প্রতিটি নাগরিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বীকৃত প্রতিটি মৌলিক অধিকার ভোগের অধিকারী। যথার্থ নাগরিকদের ধর্ম, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু জীবনযাপনের অধিকার ও সুযোগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সকল নাগরিকের মৌলিক প্রয়োজনীয় খাদ্য, বাসস্থান, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ন্যায়সঙ্গত উপায়ে উপার্জনের ব্যবস্থা থাকিতে হইবে। আইনের চোখে সকলে সমান বলে পরিগণিত হবে।’

“নারীকে অনগ্রসর রেখে সমাজ উন্নত হতে পারে না। নারী শিক্ষা লাভ করবে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেবে, স্বাবলম্বী হবে; আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই এক্ষেত্রে স্পষ্ট এবং অকপট”, বলছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা।

নারী নেতৃত্ব বিকশিত করতে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা জানতে চাইলে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নারী লিডারশিপ তৈরি করতে এবং তাদের আরো সুযোগ দিতে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সবসময় সতর্ক থেকেছে। ভবিষ্যতে শুধু ৩৩ শতাংশ কোটা নয়, আরো বেশি নারী নেতৃত্ব আওয়ামী লীগে আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি এবং তারা তাদের নেতৃত্বগুণেই দলের প্রতিনিধি হবেন।’  ঢাকা/পারভেজ/সাজেদ