রাইজিংবিডি স্পেশাল

পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে তিন মাসের বেতন পাবেন শ্রমিকরা

করোনভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৫ হাজার কোটি টাকার সহায়তা তহবিল বিতরণে চূড়ান্ত নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। নীতিমালা চূড়ান্ত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ বন্ডের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করবে। এ তহবিল থেকে তিন মাসের বেতন পাবেন শ্রমিকরা।

মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি গাইডলাইন বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। গাইডলাইনে বলা হয়েছে, যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান ৮০ শতাংশ পণ্য রপ্তানি করবে, তারাই এ তহবিলের সুবিধা নিতে পারবে।

গত ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের ঘোষণা দেন।

প্রধানমন্ত্রী এ তহবিল গঠনের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেছেন, পোশাক খাতে এক মাসের বেতন দিতে দরকার হয় ৪ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে, পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণের যোগানদাতা এক্সেসরিজ শিল্পমালিকরাও এ তহবিল থেকে সহায়তা চেয়েছেন।

সূত্র জানায়, যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের অন্তত ৮০ শতাংশ রপ্তানি হয়, সেসব প্রতিষ্ঠান এ তহবিল থেকে অর্থ নেওয়ার যোগ্য হবে। পাশাপশি সংকট চলাকালে তথা এপ্রিল, মে ও জুন মাসের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা এ তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে হবে। 

এর আগে এ তহবিল থেকে শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ বিষয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলো এ তহবিল থেকে ২ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে। এই ঋণ নেওয়ার পর প্রথম ৬ মাস কোনো কিস্তি দিতে হবে না। তবে ঋণ নেওয়ার দুই বছরের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করতে হবে।

এছাড়া, চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে টাকা না দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করবে। তার বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিকারকদের ঋণ দেবে।

গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত তহবিল গঠনের সবকিছু চূড়ান্ত করেও সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করেনি অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশেই আজ মঙ্গলবারও প্রজ্ঞাপন জারি না করে আরো যাচাই-বাছাই করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংককেই নীতিমালা করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা কিছু গাইডলাইন দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটা নির্দেশনা দিয়েছি। তারা এ গাইডলাইনের আলোকে বিস্তারিত পর্যালোচনা করে একটা নীতিমালা প্রণয়ন করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিকারকরা এই তহবিল থেকে ঋণের জন্য আবেদন করবেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে শিল্প মালিকদের নামে ঋণ হিসেবে তহবিল থেকে অর্থ দেওয়া হবে। এই ঋণের মেয়াদ হবে ২ বছর। এর মধ্যে ৬ মাস গ্রেস পিরিয়ড থাকবে। সরকার কোনো ধরনের সুদ নেবে না। যে ২ শতাংশ সুদ শিল্প মালিকদের কাছ থেকে নেওয়া হবে, তা ঋণ বিতরণকারী ব্যাংক সার্ভিস চার্জ হিসেবে নেবে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত নয়, তারা এ তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য যোগ্য হবে না।

 

ঢাকা/হাসনাত/রফিক