রাইজিংবিডি স্পেশাল

হঠাৎ গার্মেন্টস বন্ধের সিদ্ধান্তে দুর্ভোগে শ্রমিকরা

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ‌্যেই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় কর্মস্থলে ফিরেছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা।  মূলত অসহায় শ্রমিকরা চাকরি বাঁচানো বা বেতন পাওয়ার আশায় একরকম যুদ্ধ করে কর্মস্থলে ফিরেছেন।  এর মধ‌্যে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত হঠাৎ গার্মেন্ট বন্ধের ঘোষণায় তারা পড়েছেন উভয় সঙ্কটে।  এর মধ‌্যে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারের সাধারণ ছুটি বাড়ানোর ঘোষণায় তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। 

আর পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই হঠাৎ করেই গার্মেন্টস বন্ধ ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ এবং শ্রমিকদের উপর ‘জুলুম’ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরাসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করেই পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে গার্মেন্টস খোলা বা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া উচিত ছিল বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ও বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ)। সংগঠন দুটির পূর্বপ্রস্তুতি না থাকা এবং নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতাই এ খাতের শ্রমিকদের বেকায়দায় ফেলেছে। এ সঙ্কটময় পরিস্থিতে তাদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তারা না পারছে বাড়ি ফিরতে, না পারছে দীর্ঘ সময় ঢাকায় থাকতে।

তাই শ্রমিকদের ভোগান্তি ও মানবিকতার কথা বিবেচনায় এনেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে শ্রমিকরা বলছেন, শনিবার থেকে স্বল্পসংখ্যক পোশাক কারখানা খুলেছে। তবে অধিকাংশই খোলার কথা রোববার থেকে। সেজন্যই উপায় না পেয়ে যে যেভাবে পেরেছেন কর্মস্থলে ফিরছেন। মূলত চাকরি বাঁচানো বা বেতন পাওয়ার আশায় কর্মস্থলে ফিরেছেন তারা। এক্ষেত্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিকে উপেক্ষা করেছেন তারা।

জানা গেছে, হঠাৎ করে গার্মেন্টস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে শ্রমিকরা দুর্ভোগে পড়েছেন।  সাধারণ ছুটির এ পরিস্থিতিতে তারা রাজধানীতে এসেছেন মার্চের বেতন পাবেন সেই আশায় এবং একইসঙ্গে চাকরি হারানোর ভয়েই।  শ্রমিকদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা থাকলে, এ পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে তারা কর্মস্থলে আসতেন না। কিন্তু এখন তারা ঢাকায় এসে মহাবিপদে পড়েছেন। কারণ আপাতত নিজ বাসস্থানে থাকার জায়গাটি ছাড়া তাদের কাছে পর্যাপ্ত টাকা নেই। ফলে ওই সময় পর্যন্ত টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা।

এ বিষয়ে বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান মিতালি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিকেএমই’র নির্দেশনানুযায়ী আমরা গার্মেন্টস বন্ধ রেখেছি। তবে হঠাৎ করে গার্মেন্টস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে শ্রমিকরা বিভ্রান্ত এবং শতভাগ বিপদগ্রস্ত। তারা অঘোষিত লকডাউন পরিস্থিতিতেও রাজধানীতে এসেছেন মার্চের বেতন পাবেন সেই আশায়। একইসঙ্গে তাদের মধ্যে চাকরি হারানোর ভয়ও ছিল। শ্রমিকদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা থাকলে, এ পরিস্থিতিতে তারা কাজে আসতেন না। এ মুহূর্তে তারা ঢাকায় এসে উভয় সংকটে পড়েছেন। তাই শ্রমিকদের ভোগান্তি ও মানবিকতার কথা বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত ও পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ মঈন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘রোববার গার্মেন্টস খুলেছি শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য। শ্রমিকদের বেতন দিয়ে আগামী এক সপ্তাহের জন্য তা বন্ধ করে দিয়েছি। তবে এ মুহূর্তে গার্মেন্টস শ্রমিকরা থাকা-খাওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এখন ঢাকায় তাদের নিজ নিজ বাসায় নিরাপদে থাকা উচিত।’

আর গার্মেন্ট বন্ধ রাখার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিভাবে সিদ্ধান্ত নিলে শ্রমিকদের এতো ভোগান্তি পোহাতে হতো না বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।

স্টাইল ক্রাফটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সামস আলমাস রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দেশের এ সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করেই ফ্যাক্টরি বন্ধ রেখেছে স্টাইল ক্রাফট। ইতোমধ্যে শ্রমিকদের সব দেনা পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সামর্থ‌্য অনুযায়ী তাদেরকে সহায়তা করা হবে।’

তবে এ মুহূর্তে শ্রমিকদের ডেকে আনাটা ভুল সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

এদিকে মানবাধিকার বাস্তবায়ন কমিশনের যুগ্ম মহাসচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঢাকায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। তাদেরকে যেভাবে ডেকে আনা হয়েছে সেটা জুলুমের পর্যায়ে পরে।’

শনিবার (৪ এপ্রিল) দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারো শ্রমিকের কর্মস্থলে ফেরার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পোশাক কারখানা ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানায় বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক। একইসঙ্গে ওইদিন দিবাগত রাত ১২টার দিকে সরকারের ছুটির সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানায় বিকেএমইএ’র সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান। ঢাকা/এনটি/জেডআর