রাইজিংবিডি স্পেশাল

ক্ষতির মুখে মোবাইল অপারেটররা

করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন অফিস বন্ধ থাকায় মানুষ বাসায় ইন্টারনেটে সময় কাটাচ্ছেন।

ইন্টারনেট ব্রাউজিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় পার করছেন অনেকে। আর এ সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাসায় বসে  ইউটিউবে বিভিন্ন লেকচার দেখছেন শিক্ষার্থীরা।

ফলে ইন্টারনেটের ব্যবহার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়লেও ক্ষতির মুখে রয়েছে অপারেটররা।

অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এমটব) বলছে, ডাটাভিত্তিক ইন্টারনেটের ব্যবহার ১৫-২০ শতাংশ বাড়লেও এ থেকে অপারেটরদের আয় এখনও সন্তোষজনক নয়। আবার ভয়েস কল ২০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে অপারেটররা।

মোবাইল টেলিকম খাতে করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে এমটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল  (অব.) এস এম ফরহাদ বলেন, 'অর্থনীতির অন্যান্য সমস্ত খাতের মতোই টেলিকম খাতও চলমান করোনাভাইরাস মহামারির কারণে কঠিন সময় অতিক্রম করছে। মোবাইল সেবাদাতারা গ্রাহকদের সেবা ব্যবহারের ধরন পর্যবেক্ষণ করে আশঙ্কা হয়, এই প্রবণতা সামগ্রিক আয়ের উপর প্রভাব ফেলবে।

তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে অপারেটররা ডেটা প্যাকের মূল্য ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করেছে। যার ফলে প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ডেটা ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ডেটা ব্যবহারের হার দ্রুত বাড়লেও এ থেকে অপারেটরদের আয় এখনও সন্তোষজনক নয়। বিশেষত উদ্বেগজনক হলো যে গত কিছুদিন ধরে ভয়েস কল ২০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।

অপারেটররা বলছে, মানুষদের চলাচলের সীমাবদ্ধতার কারণে খুচরা চ্যানেলের মাধ্যমে মোবাইলে টাকা রিচার্জের হার প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে। এ সঙ্কটকালে টেলিকমকে জরুরি পরিষেবা হিসেবে ঘোষণা করা হলেও দেখা যাচ্ছে যে সরকারী নির্দেশাবলীর ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঠিক ধারণা না থাকায় টেলিকমের খুচরা কর্মকাণ্ডগুলো বিশেষত টপ-আপ বা রিচার্জ পরিষেবাদিগুলোর কর্মকাণ্ডে বাঁধা আসছে।

মোবাইলের স্থানীয় স্টোর এবং অন্যান্য রিচার্জ আউটলেটগুলো যেন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে সে জন্য আইন প্রয়োগকারীদের সহযোগিতা চেয়েছে অপারেটরগুলো।

প্রাতিষ্ঠানিভাবে বা রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হল, ভাড়া বাসায় ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করেন তাদের বেশিরভাগই এখন ব্যবহার বন্ধ রেখেছেন। যার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্রডব্যান্ড সেবাও।

ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, এ সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়ছে ঠিক আছে। কিন্তু ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়েনি। কারণ এর ব্যবহার বাসাবাড়ির চেয়ে করপোরেটে কেন্দ্রিক বেশি। কর্পোরেট অফিস বন্ধ থাকায় ব্রডব্যান্ডের ব্যবহার কমেছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে আগামী ৫-৬ এপ্রিলের মধ্যে সরকারের কাছে আইএসপিএবির পক্ষ থেকে একটা প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। তাতে আর্থিক প্রণোদনার বিষয়টিও উল্লেখ থাকতে পারে। যেসব প্রতিষ্ঠান করপোরেট ইন্টারনেট সেবা দেয় তারা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।

রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, রবির ডাটা ব্যবহার ২১ শতাংশ বেড়েছে। তবে ভয়েস কলের পরিমাণ কমেছে ৮ শতাংশ।

তবে ডাটা মূল্যে ভর্তুকি এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনামূল্যে এবং খরচের তুলনায় কম মূল্যে দেওয়ার কারণে আয়ের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে না। বরং ভয়েস ট্রাফিক কম হওয়ায় ক্ষতির মুখে রয়েছে। মোবাইল রিচার্জ কমেছে ১৭ শতাংশ। রিটেইল পয়েন্টে টেলিকম সেবা বিক্রি ৬০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যার ফলে আমাদের সার্বিক রাজস্ব ১৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

বাংলালিংক জানিয়েছে, অপারেটরটির ডাটা ব্যবহার ১৮ শতাংশের মতো বেড়েছে, তবে ভয়েস কল কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ। তবে ইন্টারনেট প্যাকেজে দাম প্রায় ৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে। সবমিলিয়ে এখনো লাভের সম্ভাবনা নেই।  তবে সরকারের জরুরি নির্দেশন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সেবা অব্যাহত রাখতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।

দেশের সর্ববৃহৎ মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটারনাল কমিউনিকেশন মোহাম্মদ হাসান বলেন, ডেটা ব্যবহার বাড়লেও আমাদের ভয়েস কলে ট্রাফিক কম হচ্ছে। এছাড়া ডাটার ক্ষেত্রে অনেক ছাড় চলছে। সবমিলয়ে একটি মিশ্র প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

 

ঢাকা/ইয়ামিন/এসএম