রাইজিংবিডি স্পেশাল

খাবার জুটছে না প্রতিদিন পোলাও খাওয়া মানুষগুলোর

চাকরিটা দিন মজুরীর। তাতে কী, প্রায় প্রতিদিনই তারা পোলাও-কোরমা কিংবা কাচ্চি বিরিয়ানি খেতেন। কারণ, তারা বিয়ে-শাদি কিংবা বড় বড় সব কর্পোরেট আয়োজনের বয়-বেয়ারা।

সবাইকে রাজকীয় খাবার পরিবেশন করে সবার শেষে সেই দামি খাবার দিয়ে তারাও আহার করেন। কিন্তু এখন তাদের দুবেলা নিয়মিত খাবারই জুটছে না।

করোনা পরিস্থিতির কারণে বিয়ে-শাদিসহ সব ধরনের সামাজিক এবং কর্পোরেট আয়োজন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামে ১০ হাজারেরও বেশি বয়-বেয়ারা, কমিউনিটি সেন্টারের শ্রমিক পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছেন।

দৈনিক ভিত্তিক আয়ে নির্ভরশীল এসব শ্রমিক ‘কাজ নাই, বেতন নাই’ পদ্ধতিতে শ্রম দিয়ে জীবন নির্বাহ করার কারণে এখন তাদের পরিবার নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। দেশের করোনা পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে, কখন আবার সবকিছু সচল হবে সেই অপেক্ষায় দিন গুণছেন তারা।

বেকার হয়ে যাওয়া শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৯ মার্চ থেকে চট্টগ্রাম মহানগরী এবং জেলার প্রতিটি উপজেলায় বিয়ে, মেজবানি, সামাজিক অনুষ্ঠান, কর্পোরেট অনুষ্ঠানসহ সব ধরনের ভোজ সভা, পার্টি বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে নগরীর বড় বড় অনেক রেস্টুরেন্ট, কমিউনিটি সেন্টার, পার্টি সেন্টার।

ফলে এসব কমিউনিটি সেন্টার বা পার্টি সেন্টারে সাথে সংশ্লিষ্ট খাবার পরিবেশনকারী বয় বেয়ারা, বাবুর্চি, সহকারী বাবুর্চি, ইভেন্ট বয়, ডেকোরেশন শ্রমিক, রেস্টুরেন্টের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনকারী শ্রমিকরা পুরোপুরি বেকার হয়ে গেছেন।

কিছু বড় বড় রেস্টুরেন্ট তাদের ওয়েটার, শ্রমিক এবং বাবুর্চিদের বেতন পরিশোধ করে ছুটি দিলেও কমিউনিটি সেন্টারের সাথে সংশ্লিষ্ট বয়-বেয়ারা, শ্রমিকরা কোনো মুজুরি পাচ্ছেন না। দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করা ১০ হাজারেরও বেশি বয়-বেয়ারা, ডেকোরেশন শ্রমিক এখন অত্যন্ত মানবেতর অবস্থায় দিন পার করছেন।

চট্টগ্রামের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ওয়েটারের কাজ করেন আনোয়ার হোসেন। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘প্রায় এক মাস ধরে কোনো কাজ নেই। আমরা বিয়ে-শাদিতে খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব পালন করি। এই পেশার সাথে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে আছি। এর আগে কখনোগ্নে কঠিন পরিস্থিতি আসেনি।’

আনোয়ার জানান, যেদিন বিয়ে শাদি বা সামাজিক অনুষ্ঠান থাকে, সেদিন ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন এবং উপরি টিপস পাওয়া যায়। সেই টাকা দিয়েই আমাদের সংসার চলে। কিন্তু কাজ না থাকায় সব আয় রোজগার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন পরিবার নিয়ে অত্যন্ত কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে। আগে যেখানে প্রতিদিনই পোলাও কোরমা খাওয়ার সুযোগ ছিল- সেখানে এখন দুবেলা পেটপুরে খাওয়াই জুটছে না।

বাবুর্চির সহকারী মো. ইব্রাহিম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমাদের আয়ের সব দুয়ার বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ঘরে বসে বেকার সময় কাটাচ্ছি। একমাস ধরে কোনো কাজ নেই। আমাদের সহায়তা করারও কেউ নেই। কিছু সঞ্চয় ছিল, তাই দিয়ে কয়েকদিন ধরে চলেছি। এভাবে আর ১০ দিনও চলবে না। এই অবস্থায় আগামী দিনগুলোতে আমাদের কী হবে কিছু জানি না।’

চট্টগ্রাম এন মোহাম্মদ কনভেনশন সেন্টারের কর্ণধার মঞ্জুরুল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনায় কনভেনশন সেন্টারে যাবতীয় বিয়ে শাদি অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। কনভেনশন সেন্টারে যে বয় বেয়ারারা কাজ করেন তারা আসলেই এক মাস ধরে বেকার হয়ে আছেন। তাদের কাজ না থাকলে বেতন থাকে না। তবু যেটুকু পারছি আমরা তাদের সহায়তা করে যাচ্ছি।’ রেজাউল/সনি