রাইজিংবিডি স্পেশাল

করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন সাংবাদিক, বাড়ছে আতঙ্ক

পেশাদারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন গণমাধ্যম কর্মীরা। ইতোমধ‌্যে কয়েকজন গণমাধ‌্যম কর্মী আক্রান্ত হয়েছে। অনেকে বাধ্যতামূলত কোয়ারেন্টাইনেও রয়েছেন। ফলে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারে নিয়োজিত গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে।

জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ১৫ জন গণমাধ্যম কর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া, গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট আরো তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

এরমধ্যে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির একজন ক্যামেরাপার্সন, যমুনা টিভির একজন সংবাদকর্মী, দীপ্ত টিভির চার সংবাদকর্মী, এটিএন নিউজের একজন সংবাদকর্মী, যমুনা টিভির নরসিংদী প্রতিনিধি, একাত্তর টিভির গাজীপুর প্রতিনিধি, বাংলাদেশের খবরের একজন সংবাদকর্মী, দৈনিক সংগ্রামের এক সংবাদকর্মী, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা পত্রিকার সম্পাদক, রেডিও টুডের নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি, ভোরের কাগজের বামনা উপজেলা (বরগুনা) প্রতিনিধি এবং আরটিভি অনলাইনের একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

এছাড়া মাছরাঙা টিভির সাধারণ সেকশনের একজন কর্মকর্তা, চ্যানেল আইয়ের অনুষ্ঠান বিভাগের একজন কর্মী এবং বাংলাভিশনের একজন গাড়ি চালক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

গণমাধ্যম কর্মীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের ঝুঁকি বিবেচনায় শুরু থেকে গাইডলাইসহ কোনো ধরনের প্রস্তুতি না নেওয়ায় আক্রান্তের ঘটনা ঘটছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এখনো কোনো গাইডলাইন তৈরি করা না হলে ঝুঁকি আরও বাড়বে।

ঝুঁকি বিবেচনায় গণমাধ্যমকর্মীরা সরকারের কাছে প্রণোদনা দাবি করছেন। তবে সাংবাদিক ইউনিয়ন বলছে, তারা সরকারের কাছে অনুদানের জন্য আবেদন জানিয়েছে।

গণমাধ্যমকর্মী প্রশান্ত মিত্র বলেন, ‘সংবাদ সংগ্রহের কাজে বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়। মনের ভেতরে আতঙ্ক কাজ করে। এ কারণে আক্রান্ত হব ধরে নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।’

করোনাভাইরাস প্রকোপ শুরুর পর সার্বিকভাবে গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ ও আক্রান্ত সাংবাদিকদের নিয়মিত খোঁজ রাখছেন নিউ এজ পত্রিকার সাংবাদিক আহম্মদ ফয়েজ।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর গণমাধ্যমের প্রস্তুতি, সঙ্কট, ঝুঁকি ও শঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘পেশার কারণে গণমাধ্যম কর্মীদের নানা ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে এমন একটা প্রস্তুতি থাকে। কিন্তু এখন করোনাভাইরাসের যে পরিস্থিতি এটির জন্য সারা পৃথিবীর কোনো সেক্টরই প্রস্তুত ছিল না। চিকিৎসা ক্ষেত্র, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনা কিছুই প্রস্তুত ছিল না। একইভাবে সারা দুনিয়ার গণমাধ্যমও প্রস্তুত ছিল না।

‘এ কারণে অন্যান্য সেক্টরের মতোই করোনাভাইরাস ইস্যু আমাদের গণমাধ্যমের জন্য নতুন ইস্যু। কিন্তু অন্যান্য সেক্টরগুলো এই ইস্যু আসার পরবর্তীতে ফেস করার জন্য যে প্রস্তুতি নিয়েছে, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এই প্রস্তুতির একটু ব্যতিক্রম হচ্ছে। সাধারণত যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্তিরতা বা অন্যকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যে ধরনের প্রস্তুতি দেখা যায়- শুরুর দিকে দেখা গেছে আমাদের মিডিয়াগুলো ওই ধরনের প্রস্তুতির দিকে যাচ্ছে। যেটা একটা আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত ছিল। এখানে আমাদের ডিফেন্সিভ হওয়া উচিত ছিল।

‘প্রেস কাউন্সিল, তথ্য মন্ত্রণালয়, পিআইবিসহ গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট যেসমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আছে তাদের কাছ থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা গণমাধ্যম পায়নি। স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়েও কোনো নির্দেশনা আসেনি। সাংবাদিক সংগঠনগুলোও কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া লাগতে পারে বা নেওয়া উচিত- সে বিষয়ে পরিস্কার সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।

‘গণমাধ্যমকে হ্যান্ডেল করার যে সার্বিক ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার, সে ব‌্যাপারে সবগুলো স্টেক হোল্ডার সম্মিলিতভাবে ফেল করেছে। এরফলে ১৫ জন সাংবাদিক ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে।’’

আহম্মদ ফয়েজ বলেন, ‘‘সাংবাদিকদের সমস‌্যা একজন ডাক্তারের থেকে ভিন্ন। একজন ডাক্তার যখন কোনো রোগীকে সেবা দিতে যা, তখন তিনি জানেন যে একজন রোগীকে ফেস করছেন। কিন্তু সাংবাদিক যখন নিউজ কাভার করতে যান, তখন তিনি জানেন না যেখানে যাচ্ছেন সেখানে সংক্রমণের ঝুঁকি কিংবা রোগী আছে কী না। এ বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারিনি।

‘এ কারণে গণমাধ্যম কর্মীরা এক ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় চলে গেছে। একজন আক্রান্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা দেখেছি ২০ থেকে ৪০ জন গণমাধ্যম কর্মীকে কোয়ারেইন্টাইন এবং আইসোলেশনে যেতে হচ্ছে। এটা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কীভাবে ঝুঁকি কমিয়ে কাজ করা যাবে সেই পদ্ধতি নির্ধারণ না করতে পারলে বহু প্রতিষ্ঠানের বিষয়টি বিপজ্জনক পরিণতি হবে।’

‘গণমাধ্যম কর্মীদের প্রণোদনার বিষয়ে যে দাবি উঠছে, সে বিষয়ে আমাদের মালিক, সাংবাদিক সংগঠনগুলো এবং সরকারের মধ্যে কোনো সমন্বয় না থাকায় এটা নিয়ে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।’ বলে মনে করেন আহম্মদ ফয়েজ।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, ‘এখন স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। এখানে মালিক বা যে যে প্রতিষ্ঠানের তাকেই সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যিনি অসুস্থ হবেন, তার চিকিৎসার ব্যয়ভারও ওই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বহন করতে হবে। বকেয়া বেতন থাকলে সেগুলো পরিশোধের জন্য জোরালো দাবি জানিচ্ছ।’

প্রণোদনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আসলে প্রণোদনার কথা বলছি না। এখন যেহেতু ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে, আমরা সরকারকে বলছি সাংবাদিকদের অনুদানের ব্যবস্থা করার জন্য। এজন্য তথ্যমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটা চিঠি পাঠিয়েছি। এ ব্যাপারে যোগযোগ অব্যাহত আছে।’

 

ঢাকা/নূর/সনি