রাইজিংবিডি স্পেশাল

ভালো নেই সেলাই দিদিমণিরা

কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে দেশে এক বছরে নিট ও ওভেন পোশাকের ১৪৩টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। কর্মচ্যুত হয়েছেন ৭৩ হাজার পোশাককর্মী। বেড়েছে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের দাম। রয়েছে ঋণ পরিশোধের চাপ। এর মধ্যে গার্মেন্টস খাতে নতুন আপদ হয়ে এসেছে করোনাভাইরাস। এর সাথে যোগ হয়েছে মালিকপক্ষের সামর্থহীনতা ও অসহযোগিতা। সব মিলিয়ে ভালো নেই জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জেমস আখ্যায়িত সেই 'সেলাই দিদিমণি' বা পোশাককর্মীরা।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ১২১টি কারখানার শ্রমিকরা মার্চ মাসের বেতন পাননি। চাকরিচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন অনেকে। একদিকে, করোনার আতঙ্ক, অন্যদিকে অর্থনৈতিক সমস্যা ও উৎকণ্ঠা। এ অবস্থায় খাতসংশ্লিষ্টদের আরো বেশি আন্তরিক হয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পোশাককর্মীরা।

বিজিএমইএ বলছে, এ পর্যন্ত সংগঠনটির সদস্যভুক্ত ২ হাজার ১৫৩টি কারখানার মালিক শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেছেন। এসব কারখানায় ২৩ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ জন শ্রমিক কাজ করেন। বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত তৈরি পোশাক কারখানা আছে ২ হাজার ২৭৪টি, যা মোট শ্রমিকের ৯৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এখনো ১২১টি কারখানার মালিক বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারেননি। যা মোট হিসেবের ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত ৮৩৩টি কারখানার মধ্যে ৮১৯টি কারখানার মালিক তাদের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেছে।

তবে বিজিএমইএর সদস্য নয়, যারা সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করে, এমন কিছু কারখানার শ্রমিকরা বেতন পাননি। এসবের কোনো হিসেবও নেই বিজিএমইএর কাছে।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, ‘কয়েক হাজার কর্মী বেতন পায়নি। এরা বিজিএমইএ বা বিকেএমইএর সদস্য নয়। এজন্য যেন তাদের ভালো-খারাপ দেখারও কেউ নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘করোনা মহামারির সুযোগ নিয়ে গার্মেন্ট মালিকরা ব্যাপক ছাঁটাই, কারখানা লে-অফ ঘোষণা ও শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ না করার মধ্য দিয়ে এক এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। মালিকরা সরকারের কাছ থেকে বড় বেল-আউট আদায়ে দর কষাকষির কৌশল হিসেবে শ্রমিকদের জিম্মি করেছে। এই মহামারিতে শ্রমিকদের ওপর লে-অফ, ছাঁটাই, বেতন বকেয়া রাখাসহ নানান জুলুম চাপিয়ে মালিকরা তাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করছে। তাদের এ ধরনের কার্যক্রম মহামারির সময়ে শ্রমিকদের মৃত্যুঝুঁকিতে ঠেলে দিয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘করোনা মহামারির সুযোগে গত চার সপ্তাহে গার্মেন্টস খাতে অন্তত ৩০ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই, বরখাস্ত ও জোরপূর্বক ইস্তফার ঘটনা ঘটেছে। একেকটি কারখানায় একসাথে ১০০ থেকে ১ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে।’

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শ্রম অনুবিভাগ) ড. মো. রেজাউল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এ সময়ে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করার জন্য আমাদের নির্দেশনা রয়েছে। এ ধরনের কিছু ঘটলে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আসতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে কেউ বেতন পরিশোধ না করলে অবশ্যই আমরা বিষয়টি দেখব।’

বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত ২ হাজার ২৭৪ কারখানার মধ্যে ঢাকা মহানগর এলাকায় আছে ৩৬০টি। এসবের মধ্যে মার্চের বেতন দিয়েছে ৩৩৯টি প্রতিষ্ঠান, বেতন হয়নি ২১টি কারখানায়। গাজীপুরের ৮০৮টি কারখানার মধ্যে বেতন দিয়েছে ৭৬৪টি, বাকি রেখেছে ৪৪টি। সাভার ও আশুলিয়ায় ৪৭১টির মধ্যে বেতন দিয়েছে ৪৫৮টি, বাকি রেখেছে ১৩টি কারখানা। নারায়ণগঞ্জের ২৬৯টি পোশাক কারখানার মধ্যে বেতন দিয়েছে ২৬০টি, বাকি রেখেছে ৯টি। চট্টগ্রামের ৩২৪টি কারখানার মধ্যে বেতন দিয়েছে ২৯৩টি, বাকি রেখেছে ৩১টি। প্রত্যন্ত এলাকার ৪২টি কারখানার মধ্যে বেতন দিয়েছে ৩৯টি, বাকি রেখেছে ৪টি কারখানা।

 

ঢাকা/হাসান/রফিক