রাইজিংবিডি স্পেশাল

রাজস্ব ঘাটতি ৫৬ হাজার কোটি টাকা, উত্তরণে পথ খুঁজছে এনবিআর

রাজস্ব ঘাটতির মুখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।  ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) রাজস্ব ঘাটতি ৫৬ হাজার কোটি টাকা।

করোনারা কারণে সংকটে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।  মার্চে রাজস্ব আদায় ধস নেমেছে।  এ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক।

মার্চে মাইনাস ২.৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে ঘাটতি হয়েছে প্রায় ১১ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা।  যেখানে ৩১ হাজার ৩২৩ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৯ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা।  প্রবৃদ্ধির হিসেবে মূল্য সংযোজন করে মাইনাস ১৬.১০ ও কাস্টমস খাতে মাইনাস ৩.৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।  তবে আয়করে ১০.৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।

জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত এনবিআরের সর্বশেষ হিসেব অনুয়ায়ী প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশের বেশি।  চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ২ লাখ ২১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮ কোটি টাকা।  ঘাটতি ৫৬ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা।  এ সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সীমিত পরিসরে এনবিআরের আওতাধীন সব অফিস খুলে দেওয়া হয়েছে। কাজ শুরু করেছে সব শুল্ক স্টেশন।  সংকট উত্তরণে এনবিআরের ঊর্ধ্বতনদের মধ্যে অনলাইন বৈঠক হচ্ছে। 

অর্থনীতিবীদ অধ্যাপক আবু আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, এ মুহূর্তে  এনবিআরের করণীয় কিছু নেই। রাজস্ব আদায় গতিশীল অর্থনীতির ওপর নির্ভর করে। রাজস্ব আদায়ের গতি বাড়াতে হলে লকডাউন তুলে দিতে হবে।  তা না হলে সামনে আরো ভয়াবহ পরিণতি দেখা যাবে।  আমদানি-রপ্তানি কিংবা ক্রয়-বিক্রয় যদি বন্ধ থাকে তাহলে রাজস্ব কোথা থেকে আসবে।  ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয়ে ইতিমধ্যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।  শুধু প্রণোদনা দিয়ে অর্থনীতি গতি পাবে না, রাজস্বও আদায় হবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরে একজন কর্মকর্তা বলেন, মার্চে মোটামুটি রাজস্ব এসেছে। করোনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় ছুটি কয়েক দফা বাড়ানো হয়।  দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়।  এপ্রিলজুড়ে সবকিছু বন্ধ থাকায় ভ্যাট, আয়কর ও আমদানি শুল্ক আদায় নেই বললেই চলে। 

এনবিআর থেকে প্রাপ্ত হিসেব অনুযায়ী, জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ২০ হাজার ২৬০ কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে আমদানি শুল্কে।  এ সময়ে ৬৮ হাজার ২৪৬ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ৪৭ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।  ভ্যাটে ৮১ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় ৬৪ হাজার ১১১ কোটি টাকা। ঘাটতি ১৭ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। ভ্রমণসহ আয়কর ৭১ হাজার ৩২৬ কোটি টাকার বিপরীতে আহরণ হয় ৫২ হাজার ৯১১ কোটি টাকা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ঘাটতি তো আগেই ছিল। লক্ষ্যমাত্রা আগেই বেশি ধরা হয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কর জরিপের মাধ্যমে করদাতা শনাক্ত করতে হবে।  যারা করযোগ্য আয় করেন তাদের করের আওতায় আনতে হবে।  বিশ্বব্যাংক, আইডিবি, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের মতো সংস্থাগুলো পরিস্থিতও বেশ ভালো।  ইতিমধ্যে কিছু ঋণ পাওয়া গেছে।  বাজেট ঘাটতি পূরণে আরো পাওয়া যাবে। 

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক থাকলে অর্থবছর শেষে আড়াই লাখ বা ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব হতো। করোনার কারণে কতটুকু সম্ভব হবে—তা ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবীদরা। এম এ রহমান/সাইফ