রাইজিংবিডি স্পেশাল

অনিয়ম করে পার পাওয়া যাবে না: খোকন

করোনাভাইরাসের সংকটে সারাদেশে কর্মহীন খেটে খাওয়া ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছে সরকার। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে যাবে এ আর্থিক সহায়তা। তবে এ আর্থিক সহায়তাপ্রাপ্তদের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম দেখলে সরকার সেখানে অর্থ দিচ্ছে না। বরং অধিকতর যাচাই-বাছাই শেষে পদক্ষেপ নিচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন।

শনিবার (১৬ মে) রাতে এ বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কথোপকোথনে তিনি তুলে ধরেন অর্থ ছাড়ের পুরো ডিজিটাল প্রক্রিয়ার কথা। যেখানে অনিয়ম করে কিছুতেই টাকা পাওয়া যাবে না। তাছাড়া বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কঠোরভাবে মনিটরিং হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

আশরাফুল আলম খোকন বলেন, ‘নাম, ভোটার আইডি নম্বর এবং ফোন নম্বর অটোমেটিক রেজিস্ট্রেশন হয়। অর্থাৎ নামের সঙ্গে ভোটার আইডি কার্ডের মিল আছে কি না; আবার ভোটার আইডি নম্বরের সঙ্গে মোবাইল ফোন নম্বর ঠিক আছে কি না; এগুলো দেখা হচ্ছে। যেটাই সমস্যা আসছে সেখানে কিন্তু টাকা যাচ্ছে না। যাছাই বাছাইয়ের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

আশরাফুল আলম খোকন বলেন, ‘৫০ লাখ লোকের নতুন তালিকা করা হয়েছে। তালিকা করেছে স্থানীয় প্রশাসন, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেম্বর, শিক্ষকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। এখানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অর্থাৎ ২/৩ জায়গায় যে অভিযোগ পাওয়া গেছে যে একশজনের নামের জন্য একটি নম্বর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এভাবে নাম এলেও টাকা পাবার কোনো সুযোগ নেই।’

এখন পর্ন্ত সাড়ে ৭ লাখ টাকার মতো দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এগুলো কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করে অর্থ ছাড় হয়েছে।

১৪ মে (বৃহস্পতিবার) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এ অর্থ সহায়তা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কর্মহীনদের এ আর্থিক সহায়তার জন্য ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ কর্মসূচিতে অন্তত দুই কোটি মানুষ সহায়তা পাবে। করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন ক্ষতিগ্রস্ত নিম্নআয়ের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে।

সরকারের এ অর্থ সহায়তা কর্মসূচি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বিশেষভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

'এটা ফুললি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, সিনিয়র সচিব এবং যে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট; ওনারা মনিটরিং করছেন'।

যেকোন অনিয়ম জিরোতে নামিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে এবং তাতে সফল হচ্ছে উল্লেখ করে আশরাফুল আলম খোকন বলেন, ‘ঘটনা তো ঘটবে না এমনটা বলা যায় না। পৃথিবীর সব জায়গাতেই ঘটনা ঘটে। মূল কথা হচ্ছে, ঘটনার প্রতিকার হচ্ছে কি না। সমাধান হচ্ছে কি না সেটি মুখ্য বিষয়'।

'আমাদের এখানে যখনই এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে বা কোনো ঘটনা ঘটছে, এটার কিন্তু প্রতিকার হচ্ছে। এটা কিন্তু চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে না। যখন যে সমস্যা, অভিযোগ আসছে সেটা অনিয়ম আসছে সেটার সমাধান আসছে'।

যেকোন অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব জায়গার তালিকা নিয়ে বলা হচ্ছে যে অনিয়ম করা হয়েছে বা নম্বর উল্টাপাল্টা হয়েছে, সেই জায়গাগুলোর অভিযোগগুলো কিন্তু সবেমাত্র এলো। চালের বিষয়ে যে অভিযোগগুলো এসেছিল সেখানে কিন্তু আসার সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কারের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে'।

'সরকার যখন কোনো পদক্ষেপ নিতে চায় তখন বিষয়গুলোর তদন্ত করতে হয়। এমন যে আসলে ঘটনাটা কি ঘটেছে, কেন ঘটেছে, কারা ঘটিয়েছে, কারা জড়িত; এগুলো খুঁজে বের করা। এরপর কিন্তু পানিশমেন্টটা হচ্ছে', বলেন প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সচিব।

অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ধারাবাহিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে আশরাফুল আলম খোকন বলেন, ‘তদন্ত করে জড়িত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেই সময়টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ত্রাণের চাল নিয়ে যে অনিয়মের খবর এসেছিল, সেগুলো কিন্তু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন কিন্তু আর চাল নিয়ে অনিয়মের সংবাদ আসছে না'।

এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের নিজের ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে স্ট্যাটাস দেন খোকন। সেখানে তিনি বলেন, ‘হবিগঞ্জ, বাগেরহাট এর দুইটি ইউনিয়নসহ কয়েকটি জায়গায় কিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে। শতাধিক নামের বিপরীতে ১/২ টি ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা গেলে সবার টাকা ওই ১/২ টি নম্বরের ব্যক্তিরা পেয়ে যাবেন। দেশে মেম্বর ৪১১৩৯ জন, মহিলা মেম্বর ১৩৭১৩ জন, ইউপি চেয়ারম্যান- ৪৫৭১ জন। এর মধ্যে ৪/৫জন এ অপকর্মটি করেছেন'।

প্রথমত: এ অনিয়মটি স্থানীয় পর্যায়ে সরকারই ধরেছে। এমন না যে যাচাই বাছাই শেষে ওরা টাকা পেয়ে গেছে। আর যদি যাচাই বাছাই শেষে এ রকম তালিকা কেন্দ্রে আসে, তাও তাদের টাকা পাবার কোনো সুযোগ নাই।

কারণ নামের সঙ্গে ভোটার আইডি নম্বর ও মোবাইল নম্বর অটোমেটেড সিস্টেমে ভেরিফাই করে এরপর টাকা ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সাত লাখের বেশি পরিবারকে টাকা পাঠানো হয়েছে। প্রতিটা ভোটার আইডি নম্বরের সঙ্গে নাম ও ফোন নম্বর ভেরিফাই করে দেওয়া হচ্ছে। যেখানে ত্রুটি পাওয়া যাচ্ছে তা পুনরায় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

১৭ কোটি মানুষের দেশে ৪/৫ দুর্নীতিবাজ এরকমটি ঘটাবে না তা ভাবার কোনো অবকাশ নাই। ঘটনার প্রতিকার হয়েছে কিনা সেটা দেখেন।

এখন আর কোনো চাল চুরির খবর শোনেন? সব বন্ধ হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রাখেন। দেশ ভালো থাকবে, আপনারাও ভালো থাকবেন। ঢাকা/পারভেজ/সনি/এসএম