রাইজিংবিডি স্পেশাল

লকডাউন করোনাভাইরাসের চেয়েও ক্ষতিকর: আবু আহমেদ

বৈশ্বিক মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতির পাশাপাশি বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। কমে গেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ, একের পর এক বাতিল হচ্ছে পোশাকখাতের ক্রয়াদেশ, বন্ধ রয়েছে দেশের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রতিনিয়তই লোকসান গুণতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। আর এ সবকিছু বিবেচনায় সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতির ওপর এ প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ।

লকডাউন ও দেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে একান্ত আলাপে এসব কথা বলেন তিনি। তার মতে, বাস্তবতা মেনে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে লকডাউন তুলে দেওয়া উচিত।

আবু আহমেদ বলেন, মানুষকে যদি তার আয় থেকে দূরে রাখা হয়, সে কতদিন চলতে পারবে, আড়াই কোটি দরিদ্র মানুষকে কতদিন সরকার খাওয়াতে পারবে, তাই তাদের কাজের মধ্যে রাখতে হবে। এর মানে হচ্ছে লকডাউন উঠিয়ে দেওয়া। বাস্তবতা মানতে হবে। ইতোমধ্যে অর্থনীতির অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এটা বোঝা যাবে আরও আড়াই মাস পর। বিনিয়োগ ও রপ্তানি কার্যত বন্ধ। কনজামশন বন্ধ। দেশের মানুষ দারিদ্র্যতার দিকে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, মানুষ বেকার হলে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে। এখনই রাস্তায় ভিক্ষুক বা সাহায্যপ্রার্থী মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ছে। আমি কেবল একটা কথাই বলবো, লকডাউন করোনাভাইরাসের চেয়েও ক্ষতিকর। বিশেষ করে আমাদের মতো গরিব দেশের জন্য। কতদিন সরকার সাহায্য দেবে? সরকারের এভাবে সাহায্য মূল্যস্ফীতি হবে। ডলারের দাম বেড়ে যাবে।  আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাবে।   একটির সঙ্গে আকেটি  যুক্ত।  লকডাউন তুলে পুরোদমে উৎপাদনে যাওয়া দরকার।

প্রবীণ এ অর্থনীতিবিদ বলেন, আমাদের দেশের মানুষ কঠোর পরিশ্রমী।  তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি।  তাই সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে লকডাউন তুলে দেওয়া যায়।

আবু আহমেদ বলেন, ছোট ব্যবসা বন্ধ থাকলে বড় ব্যবসাও অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়। আমদানি-রপ্তানি যদি বন্ধ থাকে, তাহলে পাইকারি মার্কেটও বন্ধ হয়ে যায়।  যেমন- গাউসিয়া না চললে বসুন্ধরার মতো মার্কেটও চলবে না।  এর মধ্যে আম্ফানের আঘাত।  এ অবস্থায় আমাদের বসে থাকলে চলবে না।  প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে চলতে জানতে হবে।

আসন্ন বাজেট ও রাজস্ব আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজস্ব আয় নির্ভর করে পণ্যের আদান-প্রদানের ওপর।  সেখানে আজ সব বন্ধ প্রায়।  লোকাল কোম্পানিগুলো আয়ও ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দেখাবে। বৃহৎ করদাতা ব্যাংকগুলোরও আয় ঋণাত্মক।  রাজস্ব আদায়ের গতি বাড়াতে হলে লকডাউন তুলে দিতে হবে।  বিদেশি সাহায্য দিয়ে আমাদের অর্থনীতি চলবে না। স্বাভাবিক পরিবেশ না দিয়ে কেবল প্রণোদনা দিয়ে অর্থনীতিও গতি পাবে না, রাজস্বও আদায় হবে না।

পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংক কিংবা অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে খোলা আছে। পুঁজিবাজারও সীমিতভাবে খোলা রাখা উচিত।  অনেক দেশেই স্টক মার্কেট খোলা। বাংলাদেশসহ গুটি কয়েক দেশে বন্ধ।  স্টক মার্কেট চালু করা দরকার।

আবু আহমেদ আরো বলেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশের পাশাপাশি ইউরোপের দেশগুলোতে লকডাউন যদি খুলে যায়, দেখবেন আমাদের ফরেন একচেঞ্জ রিজার্ভের ওপর কেমন প্রভাব পড়ছে। সামনে আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ অপক্ষো করছে। এম এ রহমান/সাইফ/এসএম