রাইজিংবিডি স্পেশাল

অনলাইনে রেলের শতভাগ টিকিট বিক্রি, খুশি যাত্রীরাও

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করছে সব ট্রেন। ট্রেনের অর্ধেক আসনের টিকিটের সবগুলোই বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। বাকি অর্ধেক সিট খালি রাখা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য। এতে টিকিট কালোবাজারির সম্ভাবনা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। ভোগান্তি ছাড়াই কাঙ্ক্ষিত টিকিট পেয়ে খুশি যাত্রীরাও।

সোমবার (১ জুন) রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অনলাইনে টিকিট বিক্রিতে যাত্রীদের ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। অনলাইনে পাঁচ দিন আগে টিকিট কাটা যাচ্ছে। আমরা দেখেছি, অধিকাংশ ট্রেনেরই অর্ধেক আসনের টিকিটের প্রায় সবগুলোই বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয়, অনলাইনে টিকিট বিক্রি হওয়ায় টিকিট প্রাপ্তিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হচ্ছে। স্ট্যান্ডিং টিকিট থাকছে না এবং কালোবাজারিরা সুবিধা করতে পারবে না। কারণ, অনলাইনে টিকিট কাটতে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন নাম্বার লাগে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ট্রেনে চড়ার ক্ষেত্রেও আমরা স্বাস্থ্যসুরক্ষার বিষয়ে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছি। সংশ্লিষ্টরা বিষয়গুলো নিশ্চিত করছেন। যাত্রীদের প্রতিও আমাদের অনুরোধ থাকবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলে তারা যেন রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করেন।’

বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. মিয়া জাহান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘করোনার কারণে গত ২৫ মার্চ থেকে রেল বন্ধ থাকার পর রোববার (৩১ মে) প্রথম ধাপে আট জোড়া ট্রেন চলাচল শুরু করে। এসব ট্রেনের টিকিট অনলাইনে দেওয়া হয়। এসব ট্রেন ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঢাকায় আসে। আবার ফিরতি যাত্রায় ছয়টি ট্রেন বিকেলে ও রাতে অর্ধেক সিট খালি রেখেই ঢাকা ছেড়ে যায়।’

বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য মতে, রোববার ঢাকায় আসা ট্রেনগুলোর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা বনলতা এক্সপ্রেসের ধারণক্ষমতা ৯৮৬ জন। তবে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় এর অর্ধেক অর্থাৎ ৪৯৩টি টিকিট বিক্রির জন্য ছাড়া হয় অনলাইনে। বিক্রি হয় ৪৯২টি। চট্টগ্রাম-ঢাকা পথে সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ৪৫৪টি আসনের মধ্যে ৩৮৭টির টিকিট বিক্রি হয়। খুলনা-ঢাকা রুটের চিত্রা এক্সপ্রেসের ৪৪১টি আসনের মধ্যে ৩৪০টির টিকিট বিক্রি হয়। সিলেট-ঢাকা রুটের কালনী এক্সপ্রেসের ২৭৬ আসনের প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ১৪৩টি টিকেট বিক্রি হয়।

ফিরতি যাত্রায় প্রায় সব ট্রেনের টিকিটের চাহিদা ছিল। পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের ৪৪৮টি আসনের সবক’টি, লালমনি এক্সপ্রেসের ২৮৫ আসনের সবগুলো, চিত্রা এক্সপ্রেসের সবগুলো টিকিট বিক্রি হয়। তবে ফিরতি যাত্রায় ঢাকা-চট্টগ্রাম পথের সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলায় ৯৯ ও ৮১টি আসনের টিকিট অবিক্রিত ছিল। অর্ধেক আসনের পাশাপাশি এসব আসনও ফাঁকা রেখে ট্রেন দুটি ঢাকা ছাড়ে।

দ্বিতীয় দফায় বুধবার থেকে আন্তঃনগর ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। ওই দিন থেকে আরো ১১ জোড়া ট্রেন চলাচল করবে। ট্রেনগুলো হলো- ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার রুটের তিস্তা এক্সপ্রেস, ঢাকা-বেনাপোলের বেনাপোল এক্সপ্রেস, ঢাকা-চিলহাটির নীলসাগর এক্সপ্রেস, খুলনা-চিলহাটির রূপসা এক্সপ্রেস, খুলনা-রাজশাহীর কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস, রাজশাহী-গোয়ালন্দ ঘাটের মধুমতি এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে মেঘনা এক্সপ্রেস, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ও ঢাকা-নোয়াখালী রুটের উপকূল এক্সপ্রেস।

গতকাল রোববার রাত থেকে এসব ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। এবারও প্রত্যেক ট্রেনের অর্ধেক আসনের টিকিট বিক্রি হবে।

এদিকে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে যাত্রীদের জন্য যেসব নির্দেশনা দিয়েছে, সেগুলো হলো- বিমানবন্দর, টঙ্গী, জয়দেবপুর স্টেশনে ট্রেন থামবে না; সবাইকে কমলাপুর থেকেই ট্রেনে উঠতে হবে। এসি কেবিনে বিছানাপত্র দেওয়া হবে না। ট্রেনে খাবার বিক্রি বন্ধ থাকবে। এক কামরা থেকে অন্য কামরায় বিচরণ করা যাবে না। শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষার জন্য ট্রেন ছাড়ার এক ঘণ্টা আগে স্টেশনে প্রবেশ করতে হবে। অনলাইনে টিকিট কাটা যাবে, স্টেশনে টিকিট বিক্রি হবে না। টিকিট ছাড়া স্টেশনে প্রবেশ করা যাবে না। স্টেশনে অবশ্যই মাস্ক পরে আসতে হবে। থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হবে। কোনো অসুস্থ রোগী ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবে না। ঢাকা/হাসান/রফিক