রাইজিংবিডি স্পেশাল

কর কাঠামোয় ডজনখানিক পরিবর্তন এনে চূড়ান্ত হচ্ছে অর্থবিল

মোবাইল কলরেটের নতুন আরোপিত সম্পূরক শুল্ক, কোম্পানির প্রমোশনাল ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ, হাইকোর্টে আপিলে অগ্রিম জমা বৃদ্ধি, কাঁচামালে রিবেট সংক্রান্ত কড়াকড়ি ও এনবিআরের মাঠ কর্মকর্তাদের ক্ষমতা কমানোসহ বেশ কিছু পরিবর্তন নিয়ে পাস হতে যাচ্ছে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট।

বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বহু সংশোধনী প্রস্তাবের বিপরীতে জাতীয় সংসদে সদস্যদের আলোচনা থেকে প্রায় ৫১টি সংশোধন প্রস্তাব বিবেচনার আমলে নেওয়া হয়।  তবে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বিবেচনায় ১০-১২টির প্রস্তাব আমলে নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সোমবার (২৯ জুন) অর্থবিল পাস হওয়ার মাধ্যমে ২০২০-২১ অর্থবছরের ফিসক্যাল পলিসি কার্যকর করতে যাচ্ছে সরকার। ওইদিন প্রধানমন্ত্রীর সমাপণী বক্তৃতার পর চূড়ান্তভাবে পাস হবে বাজেট।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বিবেচনায় ১০-১২টির বেশি প্রস্তাব নিচ্ছে না সরকার।  জনজীবনে সরাসরি প্রভাব পড়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মোবাইলের ওপর নতুন করে আরোপিত ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাতিল হচ্ছে।  বাজেটে কোম্পানির প্রমোশনাল ব্যয় টার্নওভারের দশমিক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া হলেও সেখান থেকে সরে আসছে এনবিআর।  জানা গেছে এটি ১ শতাংশ করা হতে পারে।

তিনি বলেন, অন্যদিকে বাজেটে আপিলাত ট্রাইব্যুনাল ও আপিল কমিশনারেটে আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে দাবি করা ভ্যাটের ২০ শতাংশ অর্থ পরিশোধ বা জমা রাখার বিধান প্রত্যাহার হয়ে তা আগের ১০ শতাংশ হচ্ছে।  প্রস্তাবিত বাজেটে যেকোনো রাজস্ব কর্মকর্তাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা ও ভ্যাটের দাবিনামার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেটি পরিবর্তন করে কমিশনারের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

তবে বাজেটে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাখাতে বরাদ্দ, করপোরেট ট্যাক্স, স্থানীয় অটোমোবাইল শিল্পে ভ্যাট, ব্যাংক ডিপোজিটে এক্সাইজ ডিউটি ও রপ্তানিতে উৎসে করসহ বহু বিষয় নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা সংশোধনের প্রস্তাব দিলেও তাতে পরিবর্তন আসছে না।

বিভিন্ন সূত্রে আরও জানা যায়, ব্যবসায়ীদের দাবি ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মোবাইলের ওপর নতুন ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাতিলের পাশাপাশি আরও কয়েকটি কারিগরি বিষয়ে পরিবর্তন হতে পারে।  এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল বিলের সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট ঘোষণার পরপরই তা কার্যকরও হয়ে গেছে। কিন্তু বাড়তি সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় গ্রাহক পর্যায়ে তীব্র সমালোচনা হয়। এখন সেই অবস্থান থেকে সরে এসে আগের অবস্থানে ফিরে যাচ্ছে রাজস্ব বোর্ড।

আপিলাত ট্রাইব্যুনাল ও আপিল কমিশনারেটে অগ্রিম ফি’র বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, আপিল করার ক্ষেত্রে অগ্রিম জমা ১০ থেকে বাড়িয়ে ২০ করায় ব্যবসায়ীদের বিপুল মূলধন আটকে যাবে। ফলে অনেকেই মূলধন হারাবেন।  দীর্ঘদিন এ অর্থ আদালতে আটকে থাকবে এ শঙ্কায় অনেকেই আদালতে যাবেন না।  ফলে ন্যায়বিচারের পথ বন্ধ হবে।  তাই আমাদের দাবি ছিল পূর্ব অবস্থায় ফেরানো।

ভ্যাট আইনে পরিবর্তনের বিষয়ে জানা যায়, কোনো নিবন্ধিত ব্যক্তি করযোগ্য সরবরাহ পর্যায়ে কোনো নির্দিষ্ট কর মেয়াদে যে পরিমাণ উপকরণ ব্যবহার করেন, ওই ব্যক্তির প্রাপ্য উপকরণ কর রেয়াত সেই পরিমাণের ভিত্তিতে নিরূপণ হবে। এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ফলে কোনো ব্যবসায়ী ১০০ টাকার উপকরণ কিনলে পুরোটাই ফেরত পাবেন। প্রতি মাসে ভ্যাট রিটার্নেও সময় দেওয়া উপকরণ ব্যবহারের হিসাব অনুযায়ী রেয়াত নিতে হবে না। পাশাপাশি আমদানি পর্যায়ে ছয় দিনের মধ্যে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছিল।  সেটিও বাতিল হতে পারে।

প্রস্তাবিত বাজেটে যেকোনো রাজস্ব কর্মকর্তাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা ও ভ্যাটের দাবিনামার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। আগে এটি ছিল ডেপুটি কমিশনার পর্যায় পর্যন্ত। সবাইকে এ সুযোগ দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের হয়রানীর সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে আশঙ্কা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। এখানে পরিবর্তন করে কমিশনারের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে এনবিআর সূত্র। ঢাকা/এম এ রহমান/জেডআর