রাইজিংবিডি স্পেশাল

কবে আসবে নিম্নবিত্তের নাগালে আলু-পেঁয়াজের দাম

সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আলু বিক্রি করছেন না ব্যবসায়ীরা। তারা কেজিতে ১০-১৫ টাকা অতিরিক্ত দাম রাখছেন।  আর পেঁয়াজের প্রচুর সরবরাহ থাকার পরও দাম কমছে না।  প্রতিকেজি আমদানি করা পেঁয়াজ ৭০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, দুর্বল বাজার মনিটরিংয়ের কারণে ‘অসাধু ব্যবসায়ীরা’ দাম বাড়িয়ে ফায়দা নিচ্ছেন। আর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কঠোর মনিটিরিং হচ্ছে। শিগগিরই আলু ও পেঁয়াজারের দাম কমে আসবে।     

শনিবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর কাপ্তান বাজার ও যাত্রাবাড়ী বাজারে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আলু বিক্রি করতে দেখা যায়নি।  ক্রেতারা বলছেন, প্রতিদিনের রান্নায় অপরিহার্য আলু ও পেঁয়াজ। এই দুটি নিত‌্যপণ‌্যের দাম বেড়ে যাওয়ায়  স্বল্প আয়ের মানুষ সংকটে পড়েছে। 

রাজধানীর যাত্রবাড়ী ও কাপ্তানবাজারে এসেছেন আব্দুর রাজ্জাক ও হাবিবুর রহমান।  তারা বলেন, ‘টিভির খবরে দেখলাম সরকার আলুর দাম খুচরা ৩৫ এবং পাইকারি ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে।  কিন্তু বাজারে তার কোনো প্রতিফলন নেই।  প্রতি কেজি আলু ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

এই প্রসঙ্গে কাপ্তান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী হরলাল বলেন, ‘কৃষক ও কোল্ড স্টোর থেকে প্রতিকেজি আলু কিনেছি ৩৭  টাকায়।  ১ টাকা লাভে করে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছি।  সরকার দাম বেঁধে দিলে হবে না, আমরা কিনেছি ৩৭ টাকায়, ৩৫ টাকায় কিভাবে বিক্রি করবো?’

 শ্যামবাজারের মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার হাজী গাফফার মিয়া বলেন, ‘দেশে আলু মজুদ আছে।  কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও কোল্ড স্টোরের মালিক সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাড়তি দামে কোল্ড স্টোর থেকে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় কিনে কেজিতে এক টাকা লাভে বিক্রি করছি।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশে রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়েছে।  সারাবছর দেশে প্রায় ১ কোটি লাখ টন আলুর চাহিদা রয়েছে।  বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টন। এই বছর করোনার কারণে আলু রপ্তানি হয়নি।  আগামী তিন মাস পর্যন্ত চলার মতো পর্যাপ্ত আলু মজুদ রয়েছে। দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেটের কারসাজি রয়েছে।’ 

এদিকে, সরকারের কঠোর হুঁশিয়ারির পরও পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হয়নি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আনতে খরচ বেশি।  এই কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়তি।  

কাপ্তান বাজারে পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নুর হোসেন বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজ ৯৫ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ৭০ টাকা বিক্রি করছি। বিদেশি পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। পেঁয়াজের সংকট কেটে যাবে, দামও কমবে।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজ দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রেখেছে সরকার। আলু- পেঁয়াজের দাম বাড়ার নেপথ্যে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।’ 

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘কোল্ডস্টোরেজ সিন্ডিকেটের কারণে আলুর দাম বেড়ে যায়। এ কারণে দেশের কোল্ডস্টোরেজে অভিযান চালিয়ে  দ্রুত আলু বাজারে ছেড়ে দেওয়ার কাজ চলছে।  নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আলু বিক্রি হবে।  একই সময়ে পেঁয়াজেরও দাম কমবে।’ 

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘কয়েক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। চলতি মাসে আরও কয়েক লাখ টন আসবে।  টিসিবির মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষ কম দামে আলু ও পেঁয়াজ কিনতে পারছেন।  শিগগিরই দাম সহনীয় হবে।’ 

কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের অনুরোধে প্রতি কেজি আলুর দাম ৩৫ টাকা পুনঃনির্ধারণ করেছে সরকার।’ এই দামে বিক্রি হচ্ছে কি না, তা মনিটরিং করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও মন্ত্রী জানান।