রাইজিংবিডি স্পেশাল

নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি প্রকল্প, ব‌্যয় বাড়ছে ১২গুণ 

নির্ধারিত সময়ে ‘গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন’ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি।  একাধিকবার সময় বাড়ানোর উদ‌্যোগ নেওয়া হয়েছে।  এতে অতিরিক্ত সময়ের পাশাপাশি ব‌্যয় বাড়ছে প্রায় ১২ গুণ।  

পরিকল্পনা কমিশন-সূত্র বলছে, শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল মাত্র ৪১০ কোটি ২৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা।  একলাফেই এখন প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা।  একই সঙ্গে বাড়ছে মেয়াদও।  ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।  এরপর একে একে ৬ বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়। এই মেয়াদেও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি।  এখন ৪ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হচ্ছে।

এই বিষয়ে ৪ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব‌্য ওই সভায় রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রধান বলেন, ‘রাজউক থেকে গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।  ৪ নভেম্বর প্রকল্পের পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই সভায় প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ও সময় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আলোচনা হবে।’

প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য প্রভাবশালীদের দখল থেকে লেক পুনরুদ্ধার, লেকের পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো, প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে নগরীর নান্দনিক সৌন্দর্য বাড়ানো, লেক ড্রাইভ সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। ড্রাইভারসেশন ড্রেনেজের মাধ্যমে লেকের দূষণ প্রতিরোধকরণ ও লেকের পানির গুণগতমান উন্নয়ন ও চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করা।

তবে, নতুন পরিকল্পনায় ৮৬ দশমিক ৪২ একরের পরিবর্তে ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে ৮০ দশমিক ১০ একর।  প্রকল্পের মোট ব্যয়ের থেকে দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে ভূমি অধিগ্রহণে।  লেক পাড়ের জমি কেউ যেন নিজের বলে দাবি না করেন, সেই পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে।

রাজউক সূত্র জানায়, হাতিরঝিল প্রকল্পের কোলঘেঁষে অবৈধ দখল থেকে গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উদ্ধার, লেকের পানি ধারণক্ষমতা পুনরুদ্ধার ও পানির গুণগত মান রক্ষাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে ঢাকা শহরের চারদিকের সৌন্দর্য বাড়ানো হবে। বিভিন্ন বিনোদনমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে লেকের পরিবেশের উন্নয়ন করা হবে।

লেকের ৯ টি জায়গায় হাতিরঝিলের মতোই নান্দনিক সেতু তৈরিসহ সেগুলোর ওপর চারটি ওভারপাস তৈরি করা হবে।  এর মধ্যে গুলশান ও বাড্ডার মধ্যে একটি এবং গুলশান-২ থেকে বারিধারা যেতে একটি সেতু নির্মাণ ছাড়াও নিকেতনে বিদ্যমান সেতুটি ভেঙে বড় সেতু তৈরি করা হবে।  

এছাড়া, শাহজাদপুরের ঝিলপাড়ে একটি, বনানী থেকে গুলশান-২ নম্বরে যেতে একটি, গুলশান-১ নম্বরের কাছে একটি, পুলিশ প্লাজা থেকে নিকেতন এবং বনানী থেকে গুলশান-২ নম্বরের পথে একটি সেতু নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্প এলাকায় ২৪ হাজার ৬২২ দশমিক ১৬ মিটার রানিং মিটার ওয়াকওয়ে, ২ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ মিটার ওয়াকওয়ে এবং ১১ হাজার ৬৪ মিটার ড্রাইভওয়ে তৈরি হবে। অন্যদিকে দেড় হাজার রানিং মিটার তীর সংরক্ষণ, ৬৯ হাজার ৬১ বর্গমিটার টার্ফিং ও ২ হাজার ৪৮০ মিটার ড্রেনেজ লাইন নির্মাণসহ ৭৫০টি ফুট ও তিন হাজার বৃক্ষরোপণ করা হবে। ২ দশমিক ১০ একর আয়তনের পার্ক, দুই হাজার মিটার ওয়াল, ২২ হাজার ১১৮ রানিং মিটার আরসিসি পাইপ স্থাপন করা হবে। 

লেকের চারপাশে সাধারণ মানুষের চলাচলের ব্যবস্থা থাকবে ২৪ হাজার ৬২২ দশমিক ১৬ রানিং মিটার। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজন অনুযায়ী তিনটি

ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে।  এর ফলে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও বাড্ডা এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসবে।

প্রকল্পের আওতায় নতুন কাজ যোগ হয়েছে। ফলে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়ছে বলে জানায় রাজউক।

রাজউক সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ১২ লাখ ৬০ হাজার ৮১৭ ঘন মিটার স্লাজ পরিষ্কার, ৫ হাজার ৩৮৫ রানিং মিটার গ্রেড সেপারেটর নির্মাণ করা। রয়েছে ৫ হাজার ৬০৭ রানিং মিটার সড়ক তৈরি, গৃহস্থালি স্যুয়ারেজের জন্য ১ হাজার ৫০০ মিটার আরসিসি পাইপ বসানো, ২ হাজার রানিং মিটার ইউ ড্রেন তৈরির কাজ0 

একইসঙ্গে ২৬০টি ইন্টারসেকশন পিট, ২ দশমিক ১০ একর পার্ক, কড়াইল বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন কাজ নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে। 

এছাড়া ১১ হাজার৭২৭ রানিং মিটার তীর সংরক্ষণ, ২ হাজার, বৃষ্টির পানি সরানোর জন্য ২ হাজার রানিং মিটার আরসিসি পাইপ, ২৭০ রানিং মিটার ফুটওভার ব্রিজ তৈরির কাজ রয়েছে এই প্রকল্পে।  পাশাপাশি লেকের পানি পরিষ্কার করা, সেরকারিভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বাইসাইকেল লেন, এক্সসারসাইজ ইয়ার্ড, স্কেটিং জোন, অবজারভেশন টাওয়ার ও লেক সাইডে সিটিং ব্যবস্থাও এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে।