রাইজিংবিডি স্পেশাল

‘ছেলের ভবিষ্যতের জন্য পিঠা বিক্রি করি’

স্বামী নেই, তাই ছেলের লেখাপড়া চালানোর জন্য শহরে এসে কাজ করেন ৫০ বছর বয়সী রোকসনা বেগমকে। শীতে পিঠার চাহিদা থাকায় পিঠা বিক্রিকে সিজনাল পেশা হিসেবে নিয়েছেন রোকসনা। বিকাল থেকে শুরু করে রাত নয়টা দশটা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করেন। যে টাকা হয় তা দিয়েই চলে মা-ছেলের সংসার।

সামান্য আয় থেকে কিছু জমা করেন ছেলের ভবিষ্যতের জন্য। ঢাকাতে চার বছর ধরে শীতের সময় পিঠা বিক্রি করছেন তিনি। 

রোকসানা বেগম বলেন, ‘শীত আসলেই ভাপা ও চিতই পিঠার চাহিদা থাকে অনেক। সরিষা, ধনিয়া ও শুটকি দিয়ে চিতই পিঠা খেতে মানুষ পছন্দ করে। আর আমি এই ভর্তাগুলো নিজ হাতে তৈরি করি বলে আমার আলাদা কিছু কাস্টমার রয়েছে। চিতই পিঠার পাশাপাশি ভাপা পিঠারও চাহিদা অনেক। আমি ভাপা পিঠা তে একটু বেশি মিষ্টি ও নারকেল দেই। তাই এই পিঠটা আমার এখানে মানুষ একটু বেশি পছন্দ করে। এবং সব সময় ভাপা পিঠার জন্য লাইন থাকে।’

রোকসানা বেগমের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী। ঢাকার মিরপুর-১ থাকেন। স্বামী মারা গেছে সাত বছর। উচ্চমাধ্যমিকে পড়া ছেলে রুবেলকে নিয়ে ঢাকা থাকেন চার বছর ধরে। শীত আসলেই বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করেন তিনি। 

রোকসানা আরো বলেন, ‘প্রতিদিন কত পিস পিঠা বিক্রি করি তা জানি না, তবে দিনশেষে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মতো হয়। যে টাকা হয় তা ছেলের ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিচ্ছি। ওর বাপ নেই যা করার আমাকেই তো করতে হবে।’ 

ছেলের ভবিষ্যতের কথা উল্লেখ করে রোকসানা বেগম জানান, রুবেলের বাপ না থাকায় তারই এখন সব কাজ করতে হচ্ছে। ছেলেকে লেখাপড়া থেকে শুরু করে সবকিছুই তাকেই দিতে হয়। মাধ্যমিক পাশ করার পর পুলিশের চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু টাকা দিতে পারেননি বলে চাকরি হয়নি। এখন ছেলেটার একটা গতি হলে নিশ্চিন্ত হতে পারেন তিনি।

শীতের সময় পিঠা বিক্রি করেন বাকি সময় কিভাবে চলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাসা বাড়িতে কাজ করি। আগে মেসে রান্না করতাম। এখনো একটা  মেসে রান্না করি। 

করোনা মহামারিতে পিঠা বিক্রি কেমন চলছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনার জন্য মানুষজন একটু কম বের হয় তাই বেচাকেনাও একটু কম। তবে কিছু মানুষ আছে তাদের বাসার জন্য অনেকগুলো করে পিঠা নিয়ে যায়। সব মিলিয়ে কোনমতে চলে।