রাইজিংবিডি স্পেশাল

স্বজনদের হাতেই বেশি যৌন হয়রানির শিকার হয় শিশুরা

করোনা মহামারির মধ্যে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এর মধ্যে শতাধিক ঘটনা নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গত সাড়ে ৩ মাসে সারা দেশে সাড়ে ২৩ হাজার শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে বলে একটি বেসরকারি সংগঠনের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতা আরও বাড়াতে পারলে শিশুদের এ ধরনের হয়রানি থেকে রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘শিশুদের ওপর যৌন হয়রানি বন্ধে কাজ করছি। এর অংশ হিসেবে এরকম অনেকগুলো ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। যৌন হয়রানির প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে অনেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। তদন্তে আমরা জেনেছি, শিশুদের ওপর যৌন হয়রানি স্বজনদের দ্বারাই বেশি হয়। সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় বিষয়গুলো প্রকাশ করতে চাচ্ছি না।’

কতগুলো ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না, উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এগুলো নিয়ে তো আমরা সব সময়ই কাজ করছি। বিশেষ করে, যেসব বিষয় স্পর্শকাতর ও চাঞ্চল্যকর, সেগুলো নিয়ে কাজ করছি।’

মার্কিন সংগঠন ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেড চিলড্রেন (এনসিএমইসি)’ শিশুদের ওপর যৌন হয়রানি বন্ধে কাজ করে। তারা সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যেখানে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন বন্ধ, পর্নোগ্রাফি নির্মূলসহ শিশুদের নানা অধিকারের কথা আছে।

সংগঠনটির পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, গত সাড়ে ৩ মাসে বাংলাদেশে সাড়ে ২৩ হাজারের বেশি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে ২০২০ সালে আগস্টে তুরাগ থানাধীন এলাকার ১১ বছর বয়সী এক কন্যা শিশুর তথ্য দেওয়া হয়েছে। শিশুটি বেড়াতে এলে ঘুমন্ত অবস্থায় তার ওপর যৌন নিপীড়ন চালায় ফুপা। এর ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করা হয়। পরে তা অনলাইনে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ বিষয় সংগঠনটির নজরে এলে তারা সিআইডিকে জানায়। পরে ওই ব‌্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই বছর শাহজাহানপুরে চকলেটের লোভ দেখিয়ে ডেকে নিয়ে ১০ বছরের এক শিশুর ওপর যৌন নির্যাতন চালায় পাশের বাসার এক ব্যক্তি। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে থানায় মামলা হয় এবং নির্যাতনকারী মোবারককে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ এখনও এ ঘটনার তদন্ত করছে। এরকম প্রায় ১০০ মামলা তদন্ত করছে সিআইডি। একইভাবে মার্কিন সংগঠনটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে তার মধ্যে চাঞ্চল্যকর ঘটনাগুলোর বিষয়ে তদন্ত চলছে। অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ‌্য অনুযায়ী, গত ১১ মাসে সারা দেশে ২ হাজার ৭১৩টি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ জানানো হয়নি।

একই সময়ে নির্যাতনের শিকার হওয়া প্রায় ১১ হাজার নারী ও শিশু সরকারি নয়টি ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সেবা নিয়েছেন। ভুক্তভোগী শিশুদের হাসপাতালে চিকিৎসাসেবাও দেওয়া হয়। তবে বিচার পাওয়ার হার খুবই কম।

তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে স্বজনদের দ্বারা। পারিবারিক কারণে বা লোকলজ্জায় অনেকে তা প্রকাশ করেন না। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এবং পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ বলবৎ থাকার পরও তা কার্যকর না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা দিনের পর দিন বাড়ছে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিয়া খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘যৌন হয়রানি থেকে শিশুদের রক্ষায় অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে। নিয়মিত সন্তানের খোঁজ নিতে হবে, সার্বক্ষণিক নজরদারি করতে হবে।’

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নেহাল করিম বলেন, ‘যৌন হয়রানি শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ বিষয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।’