রাইজিংবিডি স্পেশাল

প্রতিবন্ধকতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে নারীদের

সাম্যবাদী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় লিখেছেন, ‘পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’ কোনো সমাজ ও রাষ্ট্র কতটা সভ্য বা উদার তা নির্ভর করে সেখানকার নারীদের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অবস্থানের ওপর। 

রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নারী উন্নয়নে ব্যাপক সক্রিয়। নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইতিবাচক ও আন্তরিক ভূমিকার কথা সবাই জানেন। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে নারীদের অবস্থান আগের চেয়ে সুসংহত হলেও সমাজে তার প্রভাব পুরোটা পড়েছে, এটা বলা যাবে না। তবে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা। এখন অনেকে নারী-পুরুষদের আলাদা করে দেখেন না। সব কর্মক্ষেত্রেই নারীদের উপস্থিতি দেখলেই তা বোঝা যায়। তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীদের পড়তে হচ্ছে নানা সমস্যায়। তবু এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা। 

কর্মক্ষেত্রে নারীদের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কতটুকু, এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সাবেক সদস্য (সিনিয়র সচিব) সাহিন আহমেদ চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে নারীদের জন‌্য প্রতিবন্ধকতা আছে। এ প্রতিবন্ধকতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমি উপজেলা ফিন্যান্স অফিসার হিসেবে কুমিল্লা সদরে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নারায়ণগঞ্জ সদরে এবং নাটোরে জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও ডেসায় দীর্ঘদিন প্রথম শ্রেণির ম‌্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের (বিইপিআরসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। আরও অনেক স্থানেই আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে আমি নিজেকে নারী হিসেবে কখনোই দেখতাম না। অন্যদের মতো আমিও সব সময় নিজেকে একজন কর্মকর্তা মনে করেছি। সবার আগে কীভাবে কাজটা আদায় করতে হবে, সে কথাই ভাবতাম। কর্মক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের ভেদাভেদ থাকা উচিত নয়। আমাদের সবাইকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে।’ 

কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের ভেদাভেদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দেশে কর্মক্ষেত্রে এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুদের ভেদাভেদ তেমন নেই। আমি মনে করি, আমাদের দৌড় ওপেন। এটাকে কে কতটা কাজে লাগায়, সেটাই দেখতে হবে। এখনো কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীরা পিছিয়ে থাকি। এটা অবশ্যই দূর করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’

নারীরা আরো সামনে কীভাবে এগিয়ে যাবে, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে নারীদের পেছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। নারীদের বাদ দিয়ে উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। নারীদেরও সামনে এগিয়ে যেতে হবে, চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। কর্মজীবনে সততা, আন্তরিকতা ও দক্ষতার সর্বোচ্চটা দিলেই নারী সামনে আরো এগিয়ে যাবে। কর্মক্ষেত্রে নিজেকে নারী ভাবলে চলবে না, চ্যালেঞ্জ নেওয়া শিখতে হবে।’

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে নারীদের কাজের পরিবেশ আগের তুলনায় অনেক ভালো। শ্রমজীবী নারীদের জন‌্য হয়রানিমুক্ত কর্মপরিবেশ আগের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে। করপোরেট জগতের দিকে যদি আমরা দেখি, সেখানে কিন্তু নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। আবার কর্মক্ষেত্রে নারী যখনই এগিয়ে চাচ্ছে, তখন সহায়ক পরিবেশের অভাবে সে এগিয়ে যেতে পারছে না। নিরাপদ যানবাহন, শিশু পরিচর্যাকেন্দ্র কম আছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘তবে, আপনি যদি চা বাগানের শ্রমিকদের অবস্থান দেখেন, সেখানে কিন্তু তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি, হলেও তা খুব সামান্য। অন্য শ্রমজীবী নারীদের কমপ্লায়েন্সে যেমন অগ্রগতি হয়েছে, সে তুলনায় চা বাগানের নারী শ্রমিকদের ততখানি অগ্রগতি হয়নি।’ 

নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘এখনো আমাদের দেশের নারীরা সাংসারিক দায়িত্ব থেকে মুক্ত হতে পারেনি। শেয়ারিং হচ্ছে না। যদি নারী-পুরুষ সবাই কাজ শেয়ার করত, তাহলে নারীদের ওপর চাপ কিছুটা কমত। কর্মজীবী নারীরা এখন অনেক বেশি চাপের মধ্যে। তাদের কারখানায় কাজ করতে হচ্ছে, আবার বাসায় গিয়েও কাজ করতে হচ্ছে।’