রাইজিংবিডি স্পেশাল

এখন কী করবেন এই মা

আদালতের বারান্দায় এদিক-সেদিক পায়চারি করছেন জাহানারা বেগম। একটি কাগজ হাতে নিয়ে এর কাছ থেকে ওর কাছে যাচ্ছেন। আদালত থেকে কাগজটি পেয়েছেন তিনি। কোনো উকিল ধরেননি জাহানারা বেগম। কী করতে হবে, তা জানেন না। কিছু চেনেনও না। এখন তিনি কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না।

কী হয়েছে, জানতে চাইলে জানাহারা বেগম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভালা করতে গিয়া দুই কূলই গেল। পোলাডা অমানুষ হয়ছে। তার বাপ মইর‌্যা আমারে সাগরে ভাসাই ‌গ‌্যাছে। আর পোলা আমারে ডুবাই মারতেছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহানারা বেগমের বাড়ি মাদারীপুরে। তবে বসবাস ঢাকাতেই। বিয়ের পর ভালোই চলছিল সংসার। স্বামী ছিলেন দিনমজুর। কয়েক বছরের ব্যবধানে কোলে আসে দুটি সন্তান। একটি ছেলে, অপরটি মেয়ে। এর পরেই ছন্দপতন ঘটে সংসারে। মারা যান তার স্বামী।

ছেলেমেয়েকে নিয়ে শুরু হয় জাহানারা বেগমের টিকে থাকার সংগ্রাম। ঠিকানা হয় বস্তিতে। সেখানে থেকে অন‌্যের বাসায় কাজ করে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি। ছেলে নবাব বড় হলো, কিন্তু তার দুঃখ বুঝল না। অসৎ সঙ্গে মিশে হয়েছে মাদকাসক্ত। মাদকের টাকার দাবিতে প্রায়ই জাহানারা বেগমকে মারধর করে নবাব। ব্যথায় ভোগেন, কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারেন না জাহানারা। খেয়ে না খেয়ে যে ছেলেকে বড় করেছেন, সেই ছেলে আজ তার যন্ত্রণার কারণ। ছেলের জন্য তিন বেলা খাবারও জোটে না তাদের। গৃহকর্মীর কাজ করে জাহানারা যা পান, সেটাও নিয়ে যেতে চায় নবাব। অন্যদিকে মেয়েটাও বড় হয়েছে। তাই জাহানারার দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

অনেক বোঝানোর পরও নবাব সুপথে আসেনি। তাই জাহানারা পুলিশের কাছে নালিশ জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও ঘটেছে বিপত্তি। জাহানারা বলেন, ‘ছেলে যেন সুপথে আসে, এজন্য তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে ২০ পুড়িয়া হেরোইন উদ্ধারের মামলায়।

সম্প্রতি নবাব কারাগার থেকে বের হয়েছে। কিন্তু তার কোনো পরিবর্তন হয়নি। ছাড়তে পারেনি নেশা। নেশার টাকার জন্য মায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।

২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর আদাবর থানাধীন শেখেরটেকে নবাবের কাছ থেকে ২০ পুড়িয়া হেরোইন এবং রাইয়ান তাসিন রাহিনের কাছ থেকে ৬ পিস ইয়াবা উদ্ধারের কথা জানায় পুলিশ। পরে তাদের বিরুদ্ধে আদাবর থানায় মামলা দায়ের করেন ওই থানার এসআই মনিরুজ্জামান মনি।

মামলার বিষয়ে মনিরুজ্জামান মনি বলেন, ‘প্রায় চার বছর আগে হেরোইন ও ইয়াবাসহ নবাব এবং রাইয়ানকে আটক করি। সে মোতাবেক মামলা দায়ের করি।’

নবাবের মায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে মনিরুজ্জামান মনি বলেন, ‘শোধরানোর প্রয়োজন হলে তো তাকে সংশোধন কেন্দ্রে দিতো। মায়ের মন তো। ছেলে অনেক দিন জেলে ছিল, তাই মায়ের মন নরম হয়েছে। এখন তিনি উল্টোপাল্টা বলছেন।’

মামলাটি তদন্ত করে নবাবের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন একই থানার এসআই মুহাম্মদ শাহজাহান। রাইয়ান শিশু হওয়ায় তার বিরুদ্ধে দোষীপত্র দাখিল করা হয়।

এ বিষয়ে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘মামলাটি মাদক সম্পর্কিত। বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি তদন্ত করি। আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ পেয়েছি, তার পরিপ্রেক্ষিতে চার্জশিট দাখিল করি।’

নবাবের মায়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উনি বয়স্ক আর অসুস্থ। অনেক দিন হয়ে গেছে। হয়তো ভালো করে মনে করতে পারছেন না।’

এদিকে, পুলিশ নবাবের বিরুদ্ধে যে ধারায় অভিযোগ করেছে, তা প্রমাণ হলে তার ৫ থেকে ১০ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে পারে।