রাইজিংবিডি স্পেশাল

যে কারণে হাসপাতালে সিট সংকট দেখা দিতে পারে 

মাঝখানে কমলেও ফের বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। সঙ্গে মৃত্যুর হারও। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিদিনই চরিত্র পাল্টাচ্ছে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস। সামনের দুই মাস আরও বিপজ্জনক আকার ধারণ করতে পারে। এই সময়ের মধ‌্যে সবাইকে কঠিনভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ‌্যবিধি না মানলে সংক্রমণের হার বাড়তে থাকবে। একপর্যায়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তি করতে গেলে সিট সংকট দেখা দিতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মঙ্গলবারের (৩০ মার্চ) তথ‌্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ গেছে ৪৫ জনের। এই নিয়ে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৮ হাজার ৯৯৪ জন। আর  গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৪২ জন। এই নিয়ে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫ হাজার ৯৩৭ জনে।

করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটিও বাড়ানো হয়েছে। আগামী ঈদের পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে বলে গতকাল জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক আল এমরান চৌধুরী বলেন, ‘এর মধ্যে হাসপাতালে সিটের সংকট দেখা দিয়েছে। মনে হচ্ছে, সামনের দিনে এটা আরও বাড়বে। তাই জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।  সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-এর ভাইরোলজি ল্যাবের প্রধান ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নতুন করে প্রতিদিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। হঠাৎ করে কমবে না। সময় লাগবে। ভাইরাসের চরিত্রই হচ্ছে একবার শুরু হলে সেটা বাড়তে থাকে। আগামী দুই মাস সংক্রমণের হার বাড়বে।  এরপর কমতে শুরু করবে।  সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করতে হবে।  মাস্কসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরের বাইরে যেতে হবে।’

ল্যাবএইড হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মনজুর রহমান গালিব বলেন, ‘সবাইকে টিকা নিতে হবে। টিকা নেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হলেও ক্ষতির আশঙ্কা কম থাকবে।  টিকা নিলে ভাইরাসটি মানুষকে আর কাবু করতে পারবে না।  তবে, অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’

ইউনাইটেড হাসপাতালের আউটরিচ মার্কেটিং প্রধান ডা. ফজলে রাব্বী খান বলেন, ‘দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে পারবে না। করোনা রোগীদের জন্য প্রথম দিকে যেসব হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছিল, সেগুলোকে আবার চালু করতে হবে।  সামনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন‌্য আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল হক বলেন, ‘সন্দেহ নেই, করোনা দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছে।  তাই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে  চলার ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।  কারণ ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সিট সংকট দেখা দিয়েছে।  শেষে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।’ একই আশঙ্কার কথা জানালেন প্রো-অ্যাকটিভ মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মেজর (অব.) এ কে এম মাহবুবুল। তিনি বলেন, ‘করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে।  এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের অনেকেরই শারীরিক জটিলতা বেশি হচ্ছে। আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা নিতে হবে। কিন্তু আইসিইউ বেড তো খুব বেশি নেই।  আর এটা তো চাইলেই বাড়ানো যাবে না।’  

হাসপাতালে সিট সংকট ও প্রয়োজনের তুলনায় আইসিইউ সিট স্বল্পতার কথা জানালেন ল্যাবএইড হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক (সেলস) ইফতেখার আহমেদ। তিনি সবাইকে স্বাস্থ‌্যবিধি মেনে চলারও অনুরোধ জানান।