রাইজিংবিডি স্পেশাল

মেঘনা ও গোমতী সেতুর টোল আদায়কারী সংস্থার মেয়াদ বাড়ছে

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা ও গোমতি সেতুর টোল প্লাজার সার্ভিস প্রোভাইডার সংস্থা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেডের (সিএনএসএল) কাজের মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় আরও ছয় মাস বাড়ছে। প্রথম মেয়াদে বাড়ানো সময়সীমা আগামীকাল ৩১ মার্চ শেষ হওয়ার কথা। এজন্য চুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর প্রস্তাব সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে বলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, মেঘনা ও গোমতি সেতুর টোল প্লাজা এবং এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে টোল আদায়ের চুক্তির মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো ও বিদ্যমান রেটে সার্ভিস চার্জ তথা অর্থ পরিশোধ সংশ্লিষ্ট ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থিত মেঘনা সেতু ও গোমতী সেতুর টোল প্লাজায় কার্যক্রম পরিচালনা করে টোল আদায় করার লক্ষ্যে সফল দরদাতা সিএনএসএল-কে মোট আদায়কৃত টোল রাজস্বের শতকরা ১৭.৭৫ হারে সার্ভিস চার্জ (ভ্যাট ও আইটি ছাড়া) দেওয়ার লক্ষ্যে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির অনুমোদনক্রমে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটির সঙ্গে ২০১৬ সালের ৭ মার্চ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের চুক্তি হয়।

টোল প্লাজা দুটিতে স্থাপিত এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে অতিরিক্ত ওজনবাহী যানবাহন থেকে আদায়কৃত মাশুল (জরিমানা) থেকে সার্ভিস প্রোভাইডারের প্রাপ্য অংশ দেওয়ার জন্য টোল আদায়ের মূল চুক্তির ভেরিয়েশন প্রস্তাব বিবেচনা করে সিএনএসএল-কে মোট আদায়কৃত মাশুলের ১৪ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ (ভ্যাট ও আইটি ছাড়া) দেওয়ার লক্ষ‌্যে সরকারি ক্রয় কমিটির অনুমোদনক্রমে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ কর্তৃক ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একই দিনে সাপ্লিমেন্টারি চুক্তি হয়।

সূত্র জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টোল আদায় কার্যক্রম ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে বিবেচনা করে প্রস্তাব সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে চুক্তিতে বর্ণিত টোল প্লাজা দুটির পরিচালনা কার্যক্রম ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর হিসেবে গণ্য করে চুক্তি সম্পাদন করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী ওই সার্ভিস দুটির  চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ ছিল ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। কিন্তু সে সময়ের পরিস্থিতি বিবেচনায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মেঘনা সেতু ও গোমতী সেতু থেকে টোল আদায় এবং এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে জরিমানা আদায় কাজে নিয়োজিত সিএনএসএলের চুক্তির মেয়াদ প্রথম দফায় ছয় মাস বাড়িয়ে ও বিদ্যমান রেটে সার্ভিস চার্জ তথা অর্থ পরিশোধ সংশ্লিষ্ট ভেরিয়েশন প্রস্তাব নিয়ম অনুযায়ী সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়। কমিটি ভেরিয়েশন প্রস্তাবটি অনুমোদন দেয়। সে অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চুক্তির মেয়াদ আগামী ২০২১ সালের ৩১মার্চ তারিখে শেষ হবে।

সূত্র জানায়, নতুন অপারেটর নিয়োগের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) আহ্বান করেন। কিন্তু ইওআই’র কার্যক্রমের ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকায় নতুন সার্ভিস প্রোভাইডার নিয়োগের কার্যক্রম এখনও বন্ধ আছে। আদালতের স্থগিতাদেশ ভ্যাকেট করতে ইতোমধ্যে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, নানা কারণে আদালতের স্থগিতাদেশ ভ্যাকেট করতে কিছু সময় লাগতে পারে। এ অবস্থায় ২০২১ সালের ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টোল প্লাজার কাজ চলমান রাখার সুবিধার্থে সিএনএসএলের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

আলোচ্য সেবা কাজের চুক্তির আওতাধীন পাঁচ বছর (২০১৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২০সালের ৩০ সেপ্টেম্বর) ও পরবর্তী প্রথম দফায় বর্ধিত ছয় মাস সময়ে আদায় করা টোল ১ হাজার ৭৭৩ কোটি ৩৭লাখ ৯৯ হাজার টাকা। সার্ভিস প্রোভাইডারের সার্ভিস চার্জ ১৭.৭৫ শতাংশ অনুযায়ী চুক্তিমূল্য দাঁড়ায় ৩১৪কোটি ৭৭ লাখ ৪৯ হাজা টাকা। বর্ধিতব্য ছয় মাসে সম্ভাব্য টোল আদায় ১৬২ কোটি ৪৩ লাখ ৮ হাজার টাকা হলে ১৭.৭৫ শতাংশ হিসেবে সার্ভিস প্রোভাইডারকে ২৮ কোটি ৮৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। ফলে, টোল আদায়ের ক্ষেত্রে ছয় মাস সময় বাড়ানো হলে চুক্তিমূল্য বাড়নোর হার দাঁড়ায় ২২ শতাংশ। অপরদিকে, ২০১৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সময় পর্যন্ত ১ হাজার ৩৭৭ দিন ও পরবর্তী প্রথম দফায় বর্ধিত ছয় মাসের মধ্যে ২০২০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ২০ মার্চ পর্যন্ত সময়ে সর্বমোট মাশুল (জরিমানা) আদায় ১২২ কাটি ৮১ লাখ ৭১ হাজার টাকায় সার্ভিস প্রোভাইডারের চার্জ ১৪ শতাংশ অনুযায়ী সম্ভাব্য চুক্তিমূল্য দাঁড়ায় ১৭ কোটি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বর্ধিতব্য ছয় মাসে সম্ভাব্য মাশুল আদায় ১৪ কোটি ৫১ লাখ ৯১ হাজার টাকা হলে ১৪ শতাংশ  হিসেবে সার্ভিস প্রোভাইডারকে ২ কোটি ৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। ফলে, এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে মাশুল আদায়ের ক্ষেত্রে ছয় মাস অতিরিক্ত সময় বাড়ানো হলে চুক্তিমূল্য বৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ১২.১ শতাংশ।