রাইজিংবিডি স্পেশাল

৫০ হাজার টাকায়ও গ‌্যাসের ‘বৈধ সংযোগ’ মিললো না? 

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নে অন্তত ১০ হাজার অবৈধ গ‌্যাস সংযোগের সন্ধান পেয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ‌্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। ব‌্যবহারকারীরা বলছেন, ২০১৫ সালে নেওয়া এসব ‘অবৈধ গ‌্যাস-সংযোগ’কে বৈধ করার জন‌্য ‘গ্যাস কমিটি’ গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটি একেকটি সংযোগের জন‌্য ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত গ্রাহকের কাছ থেকে নিয়েছিল।  কিন্তু দীর্ঘ ৬  বছরেও এসব সংযোগ বৈধ হয়নি। পরন্তু সম্প্রতি এসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নে মাঠে নেমেছে তিতাস। 

রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের কামারপাড়া, দক্ষিণপাড়া, নগরপাড়া, পিরুলিয়া, দেলপাড়া, নয়ামাটি, তালাশপুর, ছনেরটেক গ্রামে ঘুরে জানা গেছে,  এখানে ১০ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ ছিল।  

গ্রাহকরা বলছেন, এসব সংযোগ নেওয়ার জন্য তারা নিজেদের গরু-ছাগল, গহনা ও জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েছেন ‘গ্যাস কমিটি’কে। ওই সময় কমিটি বলেছে, কাগজপত্র ঠিক করে দেওয়ার জন্যই তারা এই টাকা নিচ্ছে। এসব অবৈধ সংযোগ দিয়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ‘গ‌্যাস কমিটি’র বজলুর রহমান বজলুর বিরুদ্ধে। 

তবে, গত ২৪ মার্চ এই অবৈধ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেয় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। তবে, গ‌্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্নের পর  চনপাড়া  পুনর্বাসন কেন্দ্রসহ কায়েতপাড়ার ৪২ গ্রামের ১০ হাজার পরিবার রান্নার কাজে  চরম বিপাকে পড়েছে। তাদের অভিযোগ, কোনো নোটিশ ছাড়াই  এসব সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। 

নাম প্রকাশ না করার শ‌র্তে রূপগ‌ঞ্জের একজন গণমাধ্যমকর্মী বলেন, ‘গ্যাসের লাইন কাটা হ‌য়ে‌ছে। এখন তারা শুরু করবে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা বিরাট এক সিন্ডিকেটের কাজ। আমাদের এলাকায় থাকতে হবে, তাই জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। একারণে এসব বিষয়ে কোনো কথা বলি না।’

চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের একজন মুদি দোকানি বলেন, ‘গ্যাস সংযোগ নেওয়ার সময় গ‌্যাস কমিটির বজলুর রহমান বজলুকে ২৫ হাজার টাকা কিস্তিতে তুলে এনে দিয়েছেন। ওই সময় কথা ছিল, গ্যাস সংযোগের কাগজপত্র ঠিক করে দেবেন তিনি। এতদিনেও সেই কাগজ ঠিক করে দেননি। বরং কিছুদিন আগে বজলুর লোকেরা এসে হুমকি দিয়ে বলেছেন, তাদের মিছিল-মিটিংয়ে না গেলে গ্যাসের সংযোগ কেটে দেবেন। শেষ পর্যন্ত লাইন কেটেও দেওয়া হয়েছে।’

দেলপাড়া এলাকার  চাকরিজীবী বলেন, ‘স্বর্ণের চেইন আর গরু  বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম গ্যাসের সংযোগের জন্য। এখন শুনি সেই সংযোগ অবৈধ। তাই তিতাস লাইন কেটে দিয়েছে। আমরা এখন কিভাবে রান্নার কাজ করবো?’

রূপগঞ্জের কায়েতপাড়ার গ্যাসলাইন কেটে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন রূপগঞ্জ থানার ইনস্পেক্টর (তদন্ত) জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারা গত ২৪ মার্চ পুরো কায়েতপাড়া ইউনিয়নের গ্যাসের মূল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সময় এলাকাবাসী যেন কোনো ঝামেলা করতে না পারে, সে জন‌্য তিতাস গ্যাসের টিমের সঙ্গে পুলিশও ছিল।’

রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ সংযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য তিতাসের মহাব্যবস্থাপক মো. ইয়াকুব খানের মোবাইলফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে তিতাসের সোনারগাঁও জোনের ব্যবস্থাপক মিছবাহুর রহমান বলেন, ‘শুনেছি ওই এলাকায় অনেক অবৈধ গ্যাসসংযোগ রয়েছে। এসব সংযোগ বন্ধ করার জন্য আমাদের লোকজন কাজ করছে। এরমধ্যে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আশেপাশের ইউনিয়নেও অভিযান চালিয়ে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।’

টাকা নিয়ে অবৈধ গ‌্যাস সংযোগ দেওয়ার অভিযোগ রাইজিংবিডির কাছে অস্বীকার করেছেন বজলুর রহমান বজলু। তিনি বলেন, ‘আমি এস‌বের স‌ঙ্গে কোনোভা‌বে জ‌ড়িত নই। শত্রুতা ক‌রে কেউ আমার বিরু‌দ্ধে এসব ব‌লে‌ছে।’এরপরই তি‌নি কল কে‌টে দেন। পরবর্তী সম‌য়ে একাধিকবার কল দিলেও তিনি আর রি‌সিভ ক‌রেন‌নি।