রাইজিংবিডি স্পেশাল

দুর্ভোগে দূরপাল্লার শ্রমিকরা, সাহায‌্যের আশ্বাস মালিকদের

চলমান লকডাউনে দেশের গণপরিবহন বন্ধ। সিটির মধ্যে গত কয়েকদিন গণপরিবহন চলাচল করলেও তা এখন চলছে না। আর গত ৫ এপ্রিল থেকে দূরপাল্লার পরিবহনও বন্ধ। যার জন্য দূরপাল্লার পরিবহনের শ্রমিকদের দিন কাটছে খুব কষ্টের মধ্যে।  

করোনার কারণে গতবছর দীর্ঘদিন পরিবহন বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পরিবার নিয়ে চরম দুর্দশায় দিন পার করছেন গণপরিবহনের শ্রমিকরা। আর এখন আবারও সেই করোনার থাবা পড়েছে তাদের ওপর। গত বছরের ধাক্কা তারা সামাল দিতে না দিতেই আবারও লকডাউনের কারণে পরিবহন বন্ধ। এখন এই ধাক্কা কিভাবে সামাল দেবেন, তা জানা নেই তাদের। 

এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে মালিকদের কাছে খাবার ও সাহায্যের দাবি জানিয়েছেন দূরপাল্লার পরিবহণ শ্রমিকরা। এই বিষয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, গত বছর করোনার সময়ও আমরা বাস মালিকদের বলেছিলাম শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।

রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় বসে থাকা দ্রুতি পরিবহনের হেল্পার মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, ‘করোনা আমাদের সব কিছুই পাল্টে দিয়েছে। গত এক বছর ধরে এই করোনার কারণে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। রাস্তায় বাস না নামলে  টাকা কোথায় পাবো? খুব কষ্টের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল গতবছর। ভেবেছিলাম, এই বছর আল্লাহ ভালোভাবেই পার করবে। কিন্তু এবারও সেই করোনার থাবা। কী করবো, কিছুই ভাবতে পারছি না।’

মোহাম্মদ বেলাল হোসেন  বলেন, ‘গতবছর করোনার সময় পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে আমাদের কিছু সাহায্য করেছিল। কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত ছিল না। এবারও হয়তো কিছু সাহায্য করতে পারে। কিন্তু লকডাউন দীর্ঘ হলে কতটা কষ্টে আমাদের থাকতে হবে, সেটা আসলেই এবার আমাদের জানা নেই।’

ইয়ার-৭১ পরিবহনের চালক আক্কাছ মিয়া বলেন, ‘দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ হওয়ার পর পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। লকডাউনের কারণে দেশের পর্যটন এলাকা বন্ধ থাকায় কয়েকদিন আগে থেকেই আমাদের বাস বন্ধ ছিল। কিছু টাকা জমানো ছিল, সেই টাকা দিয়ে আপাতত কোনোভাবে চলছি। কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলতে পারবো, জানি না। গতবছরের মতো লকডাউন দীর্ঘ হলে ভোগান্তির আর শেষ থাকবে না।’ 

একই বাসের ম্যানেজার সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘শ্রমিকরা যেমন বেকার হয়ে পড়েছেন,  তেমনি মালিকরাও বিপাকে। করোনার কারণে যানবাহন না চলায় ব্যাংকঋণে কেনা গাড়ির কিস্তির টাকা কিভাবে পরিশোধ করবেন, সেই চিন্তাও রয়েছে মালিকদের। শ্রমিকদের কষ্ট দেখে আমাদেরও খারাপ লাগে, কিন্তু বাস বন্ধ থাকায় বিপদ। তাই তাদের সাহায্য করার ইচ্ছে থাকলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে মালিকরা পারছেন না। তবে অল্প হলেও শ্রমিকদের সাহায্য দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যে পরিবহন বন্ধ। পরিবহন বন্ধ থাকা মানেই হচ্ছে শ্রমিক মালিক উভয়েরই রোজগার বন্ধ। আমার নিজেরও বাস আছে। গতবছর করোনার সময় আমার কোম্পানির শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন জেলায় ২০ লাখ টাকা দিয়েছি। অনেক মালিকই এ রকম টাকা দিয়েছে। এ বছরও শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে মালিকদের চিঠি দেওয়া হবে। অনেকে ইতোমধ্যে শ্রমিকদের সাহায্যও করছেন।’ 

খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘এনা পরিবহনের শ্রমিকদের জন্য আগামী সপ্তাহে মহাখালী বাস টার্মিনালে সাহায্য করবো। তাদের সংসার চালানোর জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় যা যা দরকার, সেগুলো দেওয়া হবে। এমনকি আর্থিকভাবেও সাহায্য করা হবে। আমি বলবো, মালিকরা যেন এই দুঃসময়ে শ্রমিকদের খাবারের বিষয়ে সহায়তা করেন। কারণ তারা বাঁচলে আমরা বাঁচবো। ’