রাইজিংবিডি স্পেশাল

ফুটপাতে জমজমাট ঈদের কেনাবেচা

‘বাইচ্ছা লন ২০০, যেটা খুশি সেটা লন ২০০’। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের ফটকের সামনে নতুন পাঞ্জাবি বিক্রি করতে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টায় এভাবে অনবরত বলে যাচ্ছেন বিক্রেতা। ক্রেতারাও সস্তায় পাঞ্জারি পেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। কোনটা কে কার আগে নেবেন, চলছে সেই প্রতিযোগিতা।

শুধু বায়তুল মোকাররম নয়, ঈদের আগের দিন রাজধানীর ফুটপাতগুলো যেন জনারণ‌্যে পরিণত হয়েছে। দোকানগুলো মুখর ক্রেতাদের আনাগোনায়। ফুটপাতে উপচেপড়া ভিড়ে বিক্রেতাদের মুখেও হাসি, যারা অনেকদিন পর সুযোগ পেয়েছেন স্বস্তিতে ব্যবসা করার। মূলত সাধ আর সাধ্যের মধ‌্যে সমন্বয় ঘটাতে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ‌্যবিত্ত মানুষরা কেনাকাটা করেন এসব জায়গায়। তবে, কিছুটা কম দামে ভালো পণ‌্য কিনতে এখানে আসেন মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে অনেক উচ্চবিত্তও।

শুক্রবার (১৪ মে) বাংলাদেশে পালিত হবে মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে মানুষকে স্বাস্থ‌্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে ঈদ করতে অনুরোধ জানিয়েছে সরকার। তবে উৎসবপাগল বাঙালি ভয়ঙ্কর করোনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দলে দলে নেমে পড়েছেন কেনাকাটায়। অনেক মানুষের মুখে দেখা যায়নি মাস্ক। যেখানে শরীরের সঙ্গে শরীর মিলে যায়, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা তো অসম্ভব। এর পরিণাম কী হবে, সে হিসাব-নিকাশ শিকেয় তুলে আপাতত কেনাকাটা ও ঈদ উৎসবের বাইরে আর কিছু ভাবছেন না তারা।

বৃহস্পতিবার (১৩ মে) বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জমজমাট কেনাবেচা হচ্ছে ফুটপাতে। এর মধ্যে বেশি জমে উঠেছে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর-পশ্চিম গেটের সামনে, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল জনতা ব্যাংকের সামনে, মতিঝিল শাপলা চত্বরের চারদিক, ফকিরাপুল এলাকা, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ হকার্স সমিতি মার্কেট ও গুলিস্তান মোড়ের চারপাশের ফুটপাত, নয়াপল্টনের ভিআইপি সড়কের ফুটপাত, মৌচাক মার্কেটের সামনে, রামপুরা বাজারের সামনে, গোলাপ শাহ মাজার সংলগ্ন ফুটপাত, বঙ্গবাজার, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, ঢাকা কলেজের সামনে, গাউছিয়া, ইডেন কলেজের সামনে ও মিরপুর এলাকায় মিরপুর-১, মিরপুর ১০সহ মিরপুরের বিভিন্ন ফুটপাতে। প্রধান সড়কের পাশে এবং অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে হকারদের ঈদ আয়োজন।

বায়তুল মোকাররমের পাঞ্জাবি বিক্রেতা সায়েদুল ইসলাম জানান, গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ বেশি বিক্রি করেছেন তিনি। করোনার মধ্যেও এত ক্রেতা হবে, তা কখনো ভাবেননি তিনি। গভীর রাত পর্যন্ত কেনাবেচা করতে পারবেন বলে মনে করছেন তিনি।

শিশুদের কাপড় বিক্রেতা মুন্সী জামিলও এত ক্রেতা দেখে অবাক। তিনি জানান, কয়েক মাসের মন্দা অবস্থা কাটাতে পেরে খুব ভালো লাগছে তার। তিনি বলেন, ‘মামা, একদম শেষ হয়ে গেছিলাম। কী যে অবস্থা। এই ঈদে ভালোই ইনকাম হচ্ছে।’

বছর ঘুরে আসে ঈদ উৎসব। পরিবারের প্রিয় মুখগুলোকে দিতে হয় সাধ্যমতো ঈদ উপহার। ফুটপাতগুলোতে সব বয়সী মানুষের পোশাকই পাওয়া যাচ্ছে। দোকানিরা ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে দোকানগুলোতে ঈদকে সামনে রেখে পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন। জুতা থেকে শুরু করে শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রি-পিস, কমসেটিকস, পারফিউম; কী নেই! ঈদ সামনে রেখে পুরো ফুটপাতগুলোই এখন ঈদ মার্কেট। তুলনামূলক কম দাম হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসা এসব অস্থায়ী দোকান।

ঈদে ছেলেমেয়েদের জন্য শেষ মুহূর্তে জামা-কাপড় কিনতে এসেছেন পেশায় মেকানিক মানিক মিয়া। এখান থেকে কাপড় কিনেই রওনা দেবেন শরীয়তপুরের উদ্দেশে। মানিক মিয়া জানান, কাজের চাপে কেনাকাটা করার সময় পাননি। তাই, আজ এসেছেন পরিবারের জন্য কাপড় কিনতে।

এদিকে গাউছিয়া মার্কেটে দেখা গেছে, শেষ সময়ে সাজগোজের জিনিস কিনছেন তরুণীরা। সেখানকার প্রসাধন সামগ্রীর দোকানগুলোতেও প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে।

তবে ফুটপাতের এই কেনাবেচা যতটা মনোযোগ দিয়ে করছেন ক্রেতা আর বিক্রেতারা, স্বাস্থ্যবিধিই মানার ক্ষেত্রে ঠিক ততটাই উদাসীন তারা।