মহাসিন আলীমেহেরপুর, ১৭ এপ্রিল : মুজিবনগর আম্রকাননের যে স্থানটিতে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা ও শপথ গ্রহণ হয় সেই স্থানে ১৯৮৭ সালে গড়ে ওঠে স্মৃতিসৌধ। স্বাধীন বাংলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ধরে রাখতে গড়ে তোলা হয় মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ।বাংলাদেশের ইতিহাস খুঁজতে সারা বছর মুজিবনগরে লোক সমাগম হয়ে থাকে। মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের কোন কোন ইতিহাস আছে তা এখনো অনেকের অজানা। ১৯৭৪ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর স্মৃতি মিউজিয়ামের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তদানীন্তন সরকারের শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম। একই দিনে বঙ্গবন্ধু তোরণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনছুর আলী। ১৯৮৭ সালে এরশাদ সরকার ১৪ কোটি টাকা ব্যায়ে সেখানে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ এবং রেষ্ট হাউজ নির্মাণ করেন। স্মৃতিসৌধে লাল মঞ্চ : এটি স্বাধীনতার রক্তাক্ত সূর্য। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণের স্থানে ২৪ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট প্রশস্ত সিরামিক ইটের তৈরি আয়তকার লাল মঞ্চটিকে স্থান দেওয়া হয়েছে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের মূলভিতের মাঝখানে। যেখানে দাঁড়িয়ে অধ্যাপক ইউসুফ আলী স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।২৩টি স্মৃতিস্তম্ভ : স্বাধীনতার রক্তাক্ত সূর্য হতে বিচ্ছুরিত ২৩ রশ্মির শেষাংশ দ্বারা ২৩ স্তম্ভ বোঝানো হয়েছে। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানি শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙ্গালীর স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিক। দেয়ালগুলোর প্রথমটির উচ্চতা ৯ ফুট ৯ ইঞ্চি এবং দৈর্ঘ্য ২০ ফুট। পরবর্তী প্রতিটির দেয়াল ক্রমান্বয়ে দৈর্ঘ্য এক ফুট ও উচ্চতা ৯ ইঞ্চি করে বেড়ে গেছে। যার অর্থ হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ৯ মাস ধরে যুদ্ধ করেছিলো। শেষ দেয়ালের উচ্চতা ২৫ ফুট ৬ ইঞ্চি ও দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট। প্রতিটি দেয়ালের ফাঁকে অসংখ্য ছিদ্র আছে। যেগুলো পাকিস্থানী শাসক গোষ্ঠির অত্যাচারের চিহ্ন হিসেবে প্রদর্শিত হচ্ছে।এক লক্ষ বুদ্ধিজীবীর মাথার খুলি : স্মৃতিসৌধের ভূতল থেকে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি উঁচু বেদীতে অসংখ্য গোলাকার বৃত্ত দ্বারা এক লক্ষ বুদ্ধিজীবীর খুলি বোঝানো হয়েছে।৩০ লাখ শহীদ : স্মৃতি সৌধের ভূ-তল থেকে ৩ ফুট উচ্চতার বেদীতে অসংখ্য পাথর দ্বারা ৩০ লাখ শহীদ ও মা-বোনের সম্মানের প্রতি ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা ও স্মৃতিচারণ প্রকাশ করা হয়েছে। পাথরগুলোর মাঝখানে ১৯টি রেখা দ্বারা তৎকালীন ১৯ টি জেলা বোঝানো হয়েছে।১১টি সিঁড়ি : স্মৃতিসৌধে আরোহনের জন্য ১১টি সিঁড়ি রয়েছে। যা মুক্তিযুদ্ধকালীন সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভিক্ত করা হয়েছিলো তা বোঝানো হয়েছে।সাড়ে ৭ কোটি ঐক্যবদ্ধ জনতা : লাল মঞ্চ ও ২৩ টি দেওয়ালের মাঝে অসংখ্য নুড়িপাথর মোজাইক করা আছে। এটা সাড়ে ৭ কোটি ঐক্যবদ্ধ জনতার প্রতীক।রক্তের সাগর : পশ্চিম পাশে স্মৃতিসৌধের প্রথম দেওয়ালের পাশ দিয়ে শহীদের রক্তের প্রবাহ বয়ে গেছে। যাকে রক্তের সাগর বলা হয়।২১ ফেব্রুয়ারির প্রতীক : স্মৃতি সৌধের প্রধান ফটক থেকে যে রাস্তটি মূল স্মৃতি সৌধের রক্তের ঢালকে স্পর্শ করেছে। সে রাস্তাটি ভাষা আন্দোলনের বা ২১ ফেব্রুয়ারির প্রতীকি অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এ রাস্তায় সকল প্রকার যান চলাচল নিষিদ্ধ।বঙ্গোপসাগর : স্মৃতিসৌধের উত্তর পাশের আমবাগান ঘেঁষা যে স্থানটি মোজাইক করা রয়েছে তা দ্বারা বঙ্গোপসাগর বোঝানো হয়েছে। যদিও বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের দক্ষিণে তবুও শপথ গ্রহণের মঞ্চটির সাথে সামাঞ্জস্য রক্ষার জন্য এটিকে উত্তরে স্থান দেওয়া হয়েছে।
রাইজিংবিডি/শাহ মতিন টিপু