রাইজিংবিডি স্পেশাল

ডিএনসি’র নতুন ইউনিফর্ম: গচ্চা যাবে ৫ কোটি টাকা?

প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ করে তৈরী করা হয়েছে নতুন ইউনিফর্ম। পদমর্যাদা অনুযায়ী বন্টণও করা হয়েছে। তবে, সে পোশাক পরতে পারছেন না মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্য একটি বাহিনীর ইউনিফর্মের সঙ্গে মিল থাকায় বাধ সেধেছে তারা। নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরতে না পারায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে নানা অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। প্রশ্ন উঠেছে—কেন যাচাই-বাছাই না করেই এত টাকা খরচ করে তৈরী করা হয়েছে এসব ইউনিফর্ম?

গত বছরের ২৩ মে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের জন্য পদবী অনুসারে ব্যাজ নির্ধারণ করে ‘পোশাকসামগ্রী প্রাধিকার বিধিমালা-২০২১’ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। পোশাকের রঙ নির্ধারণ করা হয় ‘টার্কিশ ব্লু’। অধিদপ্তরের বিভিন্ন ইউনিটে কাপড় বিতরণ ও পোশাক তৈরির কাজও সম্পন্ন হয়। রঙ উল্লেখ করে অধিদপ্তর থেকে স্থানীয় পর্যায়ে পোশাক তৈরি করতে বলা হয়। সবাই পোশাক তৈরিও করে ফেলেন। ২১ জুলাই অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় জানায়, ১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন পোশাক পরতে হবে। কিন্তু, অগাস্টের শেষদিকে এসে মৌখিক নির্দেশনায় ওই পোশাক পরিধানের বিষয়টি স্থগিত রাখতে বলা হয়। এ কারণে অনেকের মধ্যে ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অনেকেই চান না মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পূর্ণাঙ্গ বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠুক। তাদের কারণেই পোশাক পরিধানে নানা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী অতিরিক্ত পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, প্রসিকিউটর, পরিদর্শক, সহকারী প্রসিকিউটর, উপ-পরিদর্শক, সহকারী উপ-পরিদর্শক, সিপাহী, ওয়ারলেস অপারেটর ও গাড়িচালক সবার ইউনিফর্ম পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। টার্কিশ ব্লু রঙের সেলুলার কাপড়ের ফুল ও হাফ হাতা শার্ট, ডিপ নেভি ব্লু রঙের প্যান্ট এবং অধিদপ্তরের লোগোসম্বলিত টুপি পরবেন কর্মকর্তারা। নারী সদস্যরা টার্কিশ ব্লু রঙের বুশ শার্ট ও ডিপ নেভি ব্লু রঙের প্যান্ট পরবেন।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, অতিরিক্ত পরিচালকদের র‌্যাঙ্ক ব্যাজে থাকবে একটি শাপলার সঙ্গে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি শাপলাসম্বলিত চার কোণা বিশিষ্ট দুটি পিপস ও কলার রিবন। উপ-পরিচালকদের র‌্যাঙ্ক ব্যাজ হবে এক শাপলার। তবে, ওই পদে চাকরির বয়স চার বছর পূর্ণ হলে শাপলার সঙ্গে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি শাপলাসম্বলিত চার কোণা একটি পিপস যুক্ত হবে। সহকারী পরিচালকদের র‌্যাঙ্ক ব্যাজ হবে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি শাপলাসম্বলিত চার কোণা দুটি পিপস। চাকরির বয়স চার বছর অতিক্রম করলে আরেকটি পিপস যুক্ত হবে। পরিদর্শক ও প্রসিকিউটেরর র‌্যাঙ্ক ব্যাজে থাকবে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি শাপলাসম্বলিত চার কোণা একটি পিপস। সহকারী পরিদর্শক ও প্রসিকিউটেরর র‌্যাঙ্ক ব্যাজে চার ডানাযুক্ত দুটি এবং উপ-সহকারী পরিদর্শকের ব্যাজে থাকবে একটি স্টার ও কালো রঙের রিবন। সিপাহী এবং ওয়ারলেস অপারেটরদের পোশাকে থাকবে ডিএনসি লেখা শোল্ডার স্ট্রিপ, আর গাড়ি চালকের থাকবে শোল্ডার স্ট্রিপের সাথে কালো রঙের রিবন। নতুন প্রজ্ঞাপনে সিপাহী থেকে অতিরিক্ত পরিচালক পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পোশাকের বিধান করা হলেও মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং পরিচালকের ইউনিফর্ম বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই। এভাবে সারা দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৩ হাজারের বেশি সদস্য ইউনিফর্ম তৈরি করেন।

অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, ইউনিফর্ম জটিলতা বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন শীর্ষ কর্মকর্তারা। সেখানে আপাতত ৬ মাসের জন্য ওই ইউনিফর্ম পরার কথা আলোচনা উঠে আসে। কিন্তু, শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের এ সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিপ্তরের ইউনিফর্মের সঙ্গে অন্য একটি বাহিনীর ইউনিফর্মের কিছুটা মিল আছে। বিষয়টি কিভাবে সমাধান করা যায়, তা চিন্তা করছি।’

বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জাতিসংঘের ইউএনওডিসির (ইউনাইটেড ন্যাশনস অন ড্রাগ অ্যান্ড ক্রাইম) সদস্য। দেশের মাদক সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরই তাদের অবহিত করতে পারে। দেশে মাদক নির্মূলের জন্য অধিদপ্তরের সদস্যদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করে থাকে ইউএনওডিসি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মকো তারা মাদক সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলা সরাসরি তদন্ত করতে পারে। ২০১৪ সালের প্রজ্ঞাপন অনুসারে অধিদপ্তরের সিপাহী থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খাকি রঙের ইউনিফর্ম পরতেন। সেই ইউনিফর্মের রঙ নিয়ে বাহিনীর সদস্যরা আপত্তি তোলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাত বছর পর নতুন পোশাক পরিধান বিধিমালা জারি করা হয়। তবে নতুন পোশাক তৈরি হলেও এখনো তারা তা পরতে পারছে না। এ কারণে রাষ্ট্রের প্রায় ৫ কোটি টাকা গচ্চা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।