রাইজিংবিডি স্পেশাল

হয় কাউন্সিল প্রত্যাহার, নয়তো বহিষ্কার

আগামী ২৬ নভেম্বর জাতীয় পা‌র্টির জাতীয় কাউন্সিল ডে‌কে‌ছেন বি‌রোধী দলীয় নেতা ও দ‌লের প্রধান পৃষ্ঠ‌পোষক বেগম রওশন এরশাদ। এই কাউন্সিল প্রত্যাহার না কর‌লে দল থে‌কে তা‌কে বহিষ্কার করা হ‌বে। তাছাড়া, জাতীয় পার্টি থেকে কিছুদিন আগে অব্যাহতি পাওয়া মসিউর রহমান রাঙাকে পার্টির সাধারণ সদস্য পদসহ স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হ‌য়ে‌ছে। একইস‌ঙ্গে বেগম রওশন এরশাদ‌কে নয়, বরং পা‌র্টির চেয়ারম‌্যান‌ জিএম কা‌দের‌কেই বিরোধী নেতা মানা হ‌বে। তার নেতৃ‌ত্বেই দ‌লের সংসদ সদস‌্যরা এখন থে‌কে সংস‌দে যা‌বেন।

শ‌নিবার (৮ অক্টোবর) জাতীয় পার্টি প্রেসিডিয়াম সদস‌্য ও সংসদ সদ‌স্যদের যৌথ সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হ‌য়ে‌ছে। এদিন জাপার বনানী কার্যালয়ে বেলা ১১টায় শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

নাম প্রকা‌শে অনিচ্ছুক দল‌টির এক প্রেসি‌ডিয়াম সদস‌্য জানান, বৈঠ‌কে পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলের নেতাকে জাতীয় পাটি থেকে বহিষ্কার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হ‌য়ে‌ছে। একই স‌ঙ্গে এখন থে‌কে বেগম রওশন এরশাদ‌কে আর বি‌রোধী দলীয় নেতা না মানার সিদ্ধান্ত হ‌য়ে‌ছে। দল পরিচালনায় জিএম কা‌দের‌কেই একক ক্ষমতা দেওয়া হ‌য়ে‌ছে।

বৈঠ‌কে উপ‌স্থিত আরেক প্রেসিডিয়াম সদস‌্য জানান, শেষবারের মত রওশন এরশাদকে ২৬ নভেম্বর পার্টি কাউন্সিল প্রত‌্যাহা‌রের জন্য অনুরোধ করা হবে। তিনি (রওশন এরশাদ) যদি কাউন্সিলে অনড় থাকেন তাহলে তাকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হবে।

জানা গে‌ছে, এ বিষ‌য়ে দ‌লের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশনের সাথে কথা বলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রয়াত এরশাদের ভাগ্নে পার্টির যুগ্ম মহাসচিব আদেলুর রহমান আদেলকে। রওশন এরশাদ যদি ফোন না ধরেন সেক্ষেত্রে তার সন্তান সাদ এরশাদের সাথে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দল‌টির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, বৈঠকে জাপার চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন; পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সে যত বড় বা শক্তিশালী হোক না কেন। দলের মাঝে শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আমি যে কোনও কঠোর সিদ্ধান্ত নেবো।

বৈঠকে জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আমি ম্যাডামকে (রওশন এরশাদ) কিছুদিন আগে মোবাইলে বলেছিলাম- আপনি আমাদের মাতৃ সমতুল্য। আমি সবসময় আপনার সাথে ছিলাম। আপনি কাউন্সিল প্রত্যাহার করুন। তিনি আমাকে ভাল-মন্দ কিছু বলেননি। এরপর একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ ধরেননি। সিস্টেমের বাইরে যেই কাজ করবে, পার্টির বিরুদ্ধে বিভেদ সৃষ্টি করবে- সে আমার আপন ভাই হলেও তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নি‌তে হ‌বে।

দ‌লের প্রেসিডিয়াম সদস্য জ‌হিরুল আলম রু‌বেল বলেন, দলের ভেতরে থেকে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করা সহজ। আর যদি আগে থেকে চিহ্নিত ষড়যন্ত্রকারীদের দল থেকে বের করে দেওয়া হয়, তাহলে তারা পার্টির তেমন ক্ষতি করতে পারবে না।

বৈঠ‌কে ঢাকা বিভা‌গের এক প্রেসিডিয়াম সদস‌্য বলেন, আমার কাছে ম্যাসেজ আছে; সাদ এরশাদ ম্যাডামকে জিম্মি করে রেখেছেন। ঢাকায় অবস্থানরত পার্টি থেকে বহিষ্কৃত কয়েকজনের সমম্বয়ে শাদ ম্যাডামের মোবাইল জব্দ করে রেখেছেন। তাদের আস্থাভাজন ছাড়া কাউকে রওশন এরশাদের সাথে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না।

বৈঠ‌কে সিলেট বিভাগের দলীয় কর্মকাণ্ড নি‌য়ে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান এবং আতিকুর রহমান আতিকের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর হস্ত‌ক্ষে‌পে পরে প‌রি‌স্থি‌তি শান্ত হয়। এসময় প্রেসিডিয়ামের ৪১ সদস্যের মধ্যে ৩৮ জন এবং ২৬ এমপির মধ্যে ২০ জন উপস্থিত ছিলেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অ্যাড. সালমা ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য- আবুল কাশেম, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গোলাম কিবরিয়া টিপু, অ্যাড. শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, ফখরুল ইমাম, সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, এটিইউ তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, নাসরিন জাহান রতনা, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, লে. জে. মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, অ্যাড. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মিজানুর রহমান, নাজমা আখতার, আলমগীর সিকদার লোটন, এমরান হোসেন মিয়া, মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল, লিয়াকত হোসেন খোকা, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, জরিুল আলম রুবেল, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রওশন আরা মান্নান, শেরীফা কাদের, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, নুরুল ইসলাম তালুকদার, পনির উদ্দিন আহমেদ, পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান।