এম.শাহীন গোলদার, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা জেলার মানুষ বহুকাল ধরেই আম চাষে জড়িত। দেশের জন্য আম একটি মৌসুমি ফল হলেও জেলায় এটি প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিণত হয়েছে। গাছের পরিচর্যা থেকে আম কেনাবেচা পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে এ অঞ্চলে। এদিকে গাছে গাছে আমের সমারোহে আমবাগান হাতবদল হতে শুরু করেছে।
সাতক্ষীরা জেলায় এবার আমের ফলন সন্তোষজনক। ইতোমধ্যেই জেলার আম গাছগুলোতে নানা জাতের বাহারি আমে এখন সয়লাব। অনুকূল আবহাওয়া পরিবেশ ও কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী পোকাদমনে সেক্স ফেরোমন পদ্ধতি ব্যবহার করে জেলার চাষিরা ফলিয়েছে বিষমুক্ত আম। আমের বাম্পার ফলনের আশায় বুক বাঁধছিলেন আমবাগান মালিকরা। এরই মধ্যে গাছে গাছে আমের সমারোহে মৌ মৌ গন্ধে সোনালি-হলুদের মিশ্রণে আম পাকতে শুরু করেছে জেলার আমের বাগানে।
সাতক্ষীরা জেলা জুড়ে গাছে গাছে এখন আম আর আম। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অভ্যন্তরে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ার পর এবছর সাতক্ষীরার মিষ্টি বিষমুক্ত আম যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের বাজারে।
প্রসঙ্গত, যে সাতটি নাম নিয়ে সাতক্ষীরার নামকরণ ‘আম’ তার অন্যতম। চিংড়ির পাশাপাশি হিমসাগর ও ন্যাংড়া আমের রাজধানী বলা হয় সাতক্ষীরা জেলাকে। পারিবারিকভাবে ছাড়াও বানিজ্যিকভাবে জেলা ব্যাপী আমের চাষ হয়েছে এবারও প্রচুর। সাতক্ষীরা সদর, তালা, কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও কলারোয়ায় আমের চাষ বেশি।
সার্বিক বিষয়ে তদারকি করে জেলা কৃষি অফিস জেলায় এবার ৩৬২০ হেক্টর জমিতে প্রতি হেক্টরে সাড়ে ১৩ মেট্রিক টন হিসেবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন।
সাতক্ষীরার মিষ্টি ও সুগন্ধযুক্ত বাহারি আম হিমসাগর, গোপালভোগ, নেংড়া, গোবিন্দভোগ, কিষানভোগ, গোলাপখাস, শরিফখাস, রানী পছন্দ, লতা, বোম্বাই, রুপালি, মল্লিকা, কালাপাহাড়, আম্রপালি ও কাঁচামিঠা আমের কোনটিরই কদর কম নয় রাজধানিসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে। সাতক্ষীরার বাজারে এখন আমের প্রাচুর্য।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাতক্ষীরার আমের চাহিদা থাকায় শুধু সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড়বাজার থেকেই প্রতিদিন ১৫টি ট্রাক ভর্তি আম যাচ্ছে দেশের সে সব অঞ্চলে। সব বাগানেই এখন আমপাড়ার ধুম পড়েছে।
আমের গুনগতমান ভাল এবং সুস্বাদু হওয়ায় ইতোমধ্যে জেলার ২০জন আমচাষির বাগান থেকে যুক্তরাজ্যে রপ্তানীর জন্য দেশের আম রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট সাতক্ষীরা থেকে আম নিয়ে গেছে ৩ হাজার ৩৪ কেজি। ল্যাবে পরীক্ষার পর বিষমুক্ত নিশ্চিত হওয়ার পর প্রথম দফায় রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানটি ২১৬০ কেজি আম যুক্তরাজ্যে পাঠিয়েছে।
এরআগে বাংলাদেশ থেকে আম রপ্তানীর ব্যাপারে বিশ্বের শীর্ষ পণ্য ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল প্রকিউরমেন্ট লজিষ্টিকসের সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, হার্টেজ ফাউন্ডেশন ও এফএওর একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ হার্টেজ ফাউন্ডেশন এর কারিগরি সহয়তায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় খুচরা পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট সাতক্ষীরার চাষিদের কাছ থেকে বাজারমূল্য ছাড়া অধিকমূল্য দিয়ে আম ক্রয় করছে। অধিক দামের নিশ্চয়তা পাওয়ায় জেলার চাষিরা এখন রাসনিক পদার্থ ব্যবহার বন্ধ করে দিয়ে পোকা দমনে সেক্সফেরোমন পদ্ধতি ব্যবহার করে আম চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
আমবাগানের মালিক আব্দুল হাই সিদ্দিক, আব্দুল করিম, রেবেকা খাতুন জানান, এ বছর জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার উদ্যোগে জেলার ২০জন চাষিকে আমচাষে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যুক্তরাজ্য তাদের উৎপাদিত আমই কিনে নিচ্ছে। এই তালিকায় রয়েছে হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি। বিদেশের বাজারে প্রথম পর্যায়ে হিমসাগর আম গেলেও কিছুদিন পর থেকে যেতে শুরু করবে ল্যাংড়া ও আম্যপাালি।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, বিভিন্ন উপজেলার ধানের জমিতে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার আমবাগান। ফলে এ অঞ্চলে আম চাষে নীরব বিপ্লব ঘটেছে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ খামারবাড়ীর উপ-পরিচালক কাজী আবদুল মান্নান জানান, এ জেলায় বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে হিমসাগর, ল্যাংরা, গেবিন্দভোগ, আম্রপালি, বোম্বাই, লতা আম বেশি চাষ হয়। সাতক্ষীরার এ আম রাজধানী ঢাকাসহ দেশেÑবিদেশে পরিচিতি লাভ করেছে।
রাইজিংবিডি/সাতক্ষীরা/২৭ মে ২০১৫/শাহীন/টিপু