সালতামামি ২০১৬

পাবনার মুড়ি গ্রাম

শাহীন রহমান, পাবনা : রমজান মাসে ইফতারীর তালিকায় অন্যতম হচ্ছে মুড়ি। কেমিক্যালে প্রস্তুত মুড়ির ভিড়ে আসল মুড়ির স্বাদ পাওয়া যেন এখন কঠিন। মুড়ির আসল স্বাদ পেতে পাবনার ‘মুড়ি গ্রামের’ মুড়ি তুলনাহীন। হাতে তৈরি এ মুড়ি যথার্থই স্বাস্থ্যসম্মত।

 

বর্তমানে দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন পাবনার মুড়ি গ্রামের নারী-পুরুষ। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তাদের এই ব্যস্ততা। কয়েক পুরুষ ধরেই মুড়ি তৈরির কাজে নিয়োজিত এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ। তাদের দীর্ঘদিনের শ্রম ও সাধনায় মুড়ি তৈরি এ অঞ্চলে শিল্পের রূপ নিয়েছে।

 

পাবনা শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের ছোট্ট গ্রাম মাহমুদপুরকে পাবনা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষ চেনে ‘মুড়ি গ্রাম’ হিসাবে। কয়েক যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় এ গ্রামের মানুষদের জীবিকার প্রধান অবলম্বন মুড়ি তৈরি ও বিপণন। এ গ্রামের মুড়ির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সারা বছর ধরে মুড়ি তৈরি হয়। তবে রোজার মাস এলেই তাদের ব্যস্ততা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

 

মুক্তিযুদ্ধের আগে এই গ্রামে প্রথম মুড়ি তৈরি শুরু করেন হাসান আলী। সেই থেকে শুরু, এখনও সবাই বাপ-দাদার পেশা হিসেবে মুড়ি উৎপাদনকে ধরে রেখেছেন। মুড়ি তৈরি এখন মাহমুদপুরের গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী শ্যামপুর, বিল কোলা, গোপীনাথপুর, ভবানীপুর, রাঘবপুর সহ আরও বেশ কয়েকটি গ্রামে।

 

মাহমুদপুর ও পার্শ্ববর্তী শ্যামপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই চলছে মুড়ি তৈরির কাজ। শ্যামপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী (৫৫) জানান, শৈশব থেকেই তিনি মুড়ি তৈরি ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত। তিনি জানান- গ্রামের পুরুষরা হাট থেকে ধান কেনা, ধান ভাঙ্গানো, উৎপাদিত মুড়ি বাজারে বিক্রি এবং নারীরা ধান সেদ্ধ, শুকানো, মুড়ি তৈরি সহ নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন।

 

মুড়ি তৈরি কাজে নিয়োজিত হাছিনা বেগম, মীরা, সুফিয়া খাতুন জানান- মূলত স্বর্ণা, বিআর ১১, বিআর ২৯, আউশ ধান থেকে তারা মুড়ি তৈরি করেন। এর মধ্যে আউশ ধানের মুড়ির স্বাদ ভালো হওয়ায় বাজারে তার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এক মন ধান থেকে ২২ থেকে ২৪ কেজি মুড়ি তৈরি হয়। সকল খরচ বাদ দিয়ে এক মন ধানের মুড়ি বিক্রি করে তাদের হাতে লাভ থাকে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।

 

এ বিষয়ে পাবনা বিসিকের শিল্পনগরী কর্মকর্তা প্রকৌশলী জে এন পাল বলেন, ‘মাহমুদপুর গ্রামের মুড়ি তৈরির বিষয়টি আমাদের জানা। তারা কেমিক্যালমুক্ত মুড়ি তৈরি করেন এটা খুবই ভাল। এ সমস্ত কুটির শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করার পরিকল্পনা আমাদের আছে। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সহজ শর্তে কিছু ঋণসহ অন্যান্য সুবিধা পেতে পারবেন।’

       

রাইজিংবিডি/পাবনা/২৮ জুন ২০১৫/ শাহীন রহমান/টিপু