সালতামামি ২০১৬

‘বৃক্ষমাতা’ চুমকি খাতুন

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরা : একেকটি গাছের চারা যেন তার একেকটি সন্তান। স্নেহময়ী  মায়ের মতো পরম যত্নে তাদের আগলে রাখেন তিনি। ছায়া, পানি, সার, ওষুধের সঙ্গে সন্তানের মমতায় বড় হয় গাছপালা। ‘বৃক্ষমাতা’খ্যাত এই নারীর নাম চুমকি খাতুন (২৮)। বাড়ি মাগুরা শহরতলির পশ্চিম স্টেডিয়াম পাড়ায়। স্বামীর নাম ফারুক হোসেন মোল্যা। বৃক্ষের এই কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে গত জুলাই মাসে পেয়েছেন বৃক্ষরোপণে বিশেষ অবদানের জন্য জাতীয় পুরস্কার। এছাড়া স্থানীয়ভাবে পেয়েছেন এক ডজনেরও বেশি পুরস্কার। সঙ্গে জয় করেছেন অভাব। স্বামী আর দুই সন্তান নিয়ে এখন তার স্বচ্ছল সুখের সংসার। সাত শতক জমি থেকে শুরু করে এখন দশ একরে গড়ে তুলেছেন নার্সারি। বছরে ৩০০ প্রজাতির ফলদ, বনজ, ফুল ও ঔষধি গাছের প্রায় এক লাখ চারা উৎপাদন হয় তার নার্সারিতে। সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে আয় করেন ৫ লাখ টাকারও বেশি। চুমকি খাতুনের সফল হওয়ার সুখ্যাতির গল্প এখন মানুষের মুখে মুখে। প্রতিদিন তার নার্সারি দেখতে অসংখ্য মানুষ আসেন। তাদের পরামর্শ দেন তিনি। তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে নার্সারি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অন্তত ৫০ জন যুবক ও যুব মহিলা। ১৯৯৮ সালে বেকার ফারুকের সাথে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি এলাকার মেয়ে চুমকির বিয়ে হয়। শ্বশুর প্রান্তিক কৃষক আইন উদ্দিন মোল্যার অভাবের সংসার। বিয়ের কয়েক দিনের মাথায় তাদের সংসার আলাদা হলে অথৈ সাগরে পড়ে যান। দু’বেলা দু’মুঠো ভাতেরই কোন ব্যবস্থাই ছিল না তাদের। চুমকি খাতুন দমে যাওয়ার পাত্র নন। শ্বশুরের কাছ থেকে পাওয়া বাড়ির পাশে মাত্র সাত শতাংশ জমিতে নার্সারির কাজ শুরু করেন। স্বামীর নামে নার্সারির নাম দেন ‘ফারুক নার্সারি’। এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শহরতলির স্টেডিয়াম পাড়ার কুকনা এলাকায় তাদের নার্সারির ব্যাপ্তি বেড়ে দশ একর ছাড়িয়েছে। যোগ হয়েছে অসংখ্য নতুন প্রজাতির উন্নত জাতের গাছের চারা।নিজের নার্সারিতে উৎপাদিত গাছের চারা বিক্রি করে তার সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। জমি, বাড়ি, নগদ টাকা সবই হয়েছে। এক ছেলে এক মেয়ে ভালো স্কুলে পড়ছে।  পাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারীরা নার্সারিতে গাছের চারা কিনতে আসেন। স্থানীয় ৫০ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিক নার্সারিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কাজের অবদানের স্বকৃীতি হিসেবে জুলাই মাসে বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০১৪ পেয়েছেন চুমকি খাতুন। ‘ছ’ বিভাগে তিনি সারাদেশের মধ্যে হয়েছেন তৃতীয় হন। চুমকি খাতুন জানান, প্রধানমন্ত্রী আমার হাতে জাতীয় পুরস্কার দিয়ে জড়িয়ে ধরেন। এক জীবনে এটাই আমার কাছে বড় পুরস্কার। আমি আর কিছু চাই না। চুমকি খাতুনের স্বামী ফারুক হোসেন মোল্যা বলেন,  ১৫ বছর আগেও দু’বেলা পেট ভরে খাবারেই সংস্থান হতো না। দরিদ্রতার কারণে নবম শ্রেণির পর আর পড়া হয়নি। একটি নার্সারিই তার পরিবারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এজন্য তিনি স্ত্রী চুমকির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক পার্থ প্রতীম সাহা বলেন, মাগুরার ফারুক নার্সারি জেলার রোলমডেল। তাদের সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে নার্সারি ব্যবসা করছেন অনেক যুবক। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে জাতীয় পুরস্কার নিয়ে মাগুরাবাসীর সম্মান বাড়িয়েছেন ‘বৃক্ষমাতা’খ্যাত চুমকি খাতুন।’

   

রাইজিংবিডি/মাগুরা/২৩ আগস্ট ২০১৫/আনোয়ার হোসেন শাহীন/মুশফিক