সালতামামি ২০১৬

নারকেলের খোল থেকে তৈরি হচ্ছে বোতাম

মাগুরা প্রতিনিধি : নারকেলের খোল বা মালা এখন থেকে আর ফেলনা নয়। এই খোল দিয়ে মাগুরা শহরতলীর বরুনাতৈল গ্রামের আব্দুল হান্নান বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরি করেছেন বিভিন্ন ডিজাইনের বোতাম ও নারীদের নানা রকম অলঙ্কার। এর মাধ্যমে হান্নান নিজে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি তার কারখানায় বোতাম তৈরির কাজ করে এলাকার নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

 

হান্নান জানান, ঢাকার গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন দোকানে চীন থেকে আমদানি করা কাঠের বোতাম দেখে সর্ব প্রথম তার এই উদ্ভাবনী চিন্তা মাথায় আসে। তখন তার হাতে যথেষ্ঠ পুঁজি ছিল না। এ কারণে এক রকম ঝুঁকি নিয়েই এক সময়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কৃষক শেখ হান্নান ৫ বছর আগে সামান্য এক টুকরো জমি বিক্রি করে কিনে আনেন বোতাম তৈরির ৭টি মোটর চালিত ড্রিল মেশিন। বসত বাড়ির একটি কক্ষে সাতজন নারী শ্রমিক নিয়ে শুরু হয় তার যাত্রা। প্রথম চালানেই ঢাকার বেশ কিছু গার্মেন্টসে সুনাম অর্জন করে আব্দুল হান্নানের তৈরি করা বোতাম।

 

এরপর কঠোর পরিশ্রম তার এই পথচলাকে আরো বিস্তৃত করে। এখন তার বাড়িতে বসেছে ১৬টি মেশিন। যেখানে প্রতিদিন কাজ করছেন এলাকার দরিদ্র পরিবারের ১৫ থেকে ২০ জন মেয়ে ও গৃহবধূূ। আর তাদের হাতে প্রতিমাসে তৈরি হচ্ছে ৩ থেকে ৪ লাখ বোতাম। শুধু বোতাম নয় বোতাম তৈরির পর যে অতিরিক্ত অংশ থাকে তা থেকে তৈরি হচ্ছে নারীদের ব্যবহার উপযোগী সুদৃশ্য কানের দুল। বোতাম ও অলঙ্কার তৈরির পর নারকেলের খোলের বাকি অংশ সরবরাহ করা হচ্ছে ঢাকা, ময়মনসিংহ, ভৈরবসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা মশার কয়েল কারখানায়।

 

হান্নান জানান, নারকেলের খোল থেকে বোতাম তৈরির জন্য প্রথমে ড্রিল মেশিন দিয়ে বোতামের সাইজ অনুযায়ী নির্দিষ্ট বৃত্তাকারে পৃথক করা হয়। পরে অপর ড্রিল মেশিন দিয়ে ছিদ্র করা হয়। সবশেষে দেওয়া হয় ফিনিশিং।

 

এখানে কর্মরত নারীরা জানান, নিজ গৃহে কাজ করার পর এ কারখানায় ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা শ্রম দিয়ে প্রতিদিন তারা গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার বোতাম তৈরি করে মাসে ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা আয় করে থাকেন।

 

গৃহবধূ পারভীন বেগম জানান, তার স্বামীর একার আয়ে সংসার স্বচ্ছলভাবে চলে না। এখানে বোতাম তৈরির কাজ করে যে টাকা পান তা থেকে তার সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। তিনি আরো জানান, প্রতিদিন সংসারের কাজের ফাঁকে গড়ে ৫/৬ ঘণ্টা সময় এখানে অনায়াসেই দেওয়া সম্ভব। তার মতো কর্মরত নারীদের প্রত্যেকেরই মতামত একই রকম।

 

এ ব্যাপারে শেখ হান্নান জানান, বাগেরহাট জেলা ও স্থানীয়ভাবে ভাঙ্গারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে নারকেলের খোল কিনে তিনি বোতাম তৈরির কাজ করে থাকেন। প্রথম প্রথম এ খোলের দাম কম থাকলেও এখন সংকটের কারণে প্রতি কেজি খোল ৬ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। প্রতি ১ হাজার নারকেলের খোল থেকে ছোট বড় সাইজের ৩০ থেকে ৫০ হাজার বোতাম তৈরি হয়। যার উৎপাদন খরচ হয় ৫ হাজার ৬ হাজার টাকা। বড় সাইজের প্রতি ১ হাজার বোতাম প্রকারভেদে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা ও কমন সাইজের শার্টের বোতাম ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। তার তৈরি বোতাম ঢাকার বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, সদর ঘাটের পাইকারি বাজার ও পাটের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্রের কারখানায় বিক্রি হয়ে থাকে। এ ছাড়া বায়াররা কিনে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে থাকে বলে হান্নান জানান।

 

তিনি বলেন, পুঁজি সংকটের কারণে তার এ কারখানার পরিধি বাড়াতে পারছেন না। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে খুব সহজেই এ শিল্পে বড় ধরনের বিস্তৃতি ঘটানো সম্ভব। সেই সঙ্গে বিদেশ থেকে বোতাম আমদানির প্রয়োজনীয়তা হ্রাসসহ কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ তৈরি করা সম্ভব।

     

রাইজিংবিডি/মাগুরা/৩০ আগস্ট ২০১৫/আনোয়ার হোসেন শাহীন/দিলারা