সালতামামি ২০১৬

রেজিয়া এখন অনুকরণীয়

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ : রেজিয়া আক্তার হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার হাওরাঞ্চল স্নানঘাট ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের গৃহবধূ। স্বামী জামাল মিয়া বেকার। তাই সংসার চলছিল না। কী করা যায়, ভাবছিলেন রেজিয়া। টুকিটাকি কিছু করারও চেষ্টা করছিলেন। তাতে ৩ ছেলে, ৩ মেয়ে, স্বামী-স্ত্রীসহ ৮ জনের অভাবের সংসারে কিছুই হচ্ছিল না। খেয়ে পড়ে বাঁচাটাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

 

ঠিক এমন একটি অবস্থায় স্বাবলম্বী হওয়ার উপায় খুঁজে পেল রেজিয়া। হাঁসের খামার গড়ার পরিকল্পনা এল মাথায়। সামান্য কিছু পুঁজি দিয়ে হাঁসের বাচ্চা ক্রয় করে শুরু করেন লালন-পালন। শুরু হলো রেজিয়ার ব্যস্ততম কর্মময় জীবন। ধীরে ধীরে সফলতার মুখ দেখতে পেলেন। এভাবেই ১০ বছরে রেজিয়া এখন স্বাবলম্বী। নামমাত্র পুঁজি দিয়ে শুরু করা সেই রেজিয়ার খামারে বর্তমানে ১২০০ হাঁসের বাচ্চা রয়েছে। রেজিয়াকে এখন আর অভাব নিয়ে হিমশিম খেতে হয় না। সংসারের চাকাও পুরোপুরি সচল। দুর্দিন কাটিয়ে তার সংসারে ফিরছে সুদিন।

 

হাঁসের খামারের আয়ে জমিও কিনেছেন রেজিয়া। বাড়িতে গরুর খামার গড়ে তুলতে চারটি গরু কিনেছেন। রেজিয়া মনে করেন আরও ভালদিন অপেক্ষা করছে তার জন্য। এ মনোবল নিয়ে তিনি হাঁস পালন অব্যাহত রেখেছেন। তার এক প্রতিবেশী বলেন, ‘রেজিয়া কঠোর শ্রম দেন, এ জন্যই দিন ফিরেছে তার।’

 

রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপকালে রেজিয়া বলেন, ‘মনে বিশ্বাস রাখতে হবে। আর কঠোর পরিশ্রম করতে পারলে পরিশেষে ভাল ফল আশা করা সম্ভব।’

 

তিনি বলেন, ‘বানিয়াচংয়ের ভাটিপাড়া থেকে ক্রয় করে বাড়ি নিয়ে আসা পর্যন্ত প্রতিটি হাঁসের ৩৫ টাকা খরচ হচ্ছে। তিন মাস পালন করলেই হাঁস ডিম পাড়ে। হাঁস ডিম না পারলে বিক্রি করে দেই। ভালই আয় হচ্ছে।’

 

হবিগঞ্জ-সিলেট জেলা সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, ‘শ্যামপুর পরিদর্শনকালে রাস্তায় রেজিয়ার হাঁস চড়ানোর দৃশ্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি তার পাশে থাকব। তার হাঁস খামারকে আরও এগিয়ে নিতে আমার সার্বিক সহযোগীতা থাকবে। রেজিয়ার মত কর্মঠ নারী ঘরে ঘরে দেখতে চাই।’

 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বেকার নারীদের অনুকরনীয় হতে পারেন রেজিয়া। তাকে অনুসরণ করে বেকার নারীদের বাড়ি বাড়ি কর্মসংস্থান গড়ে তোলা প্রয়োজন। তাতে করে যেমনভাবে দেশ উপকৃত হবে, তেমনি বেকার নারীদের কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে।

     

রাইজিংবিডি/ হবিগঞ্জ/৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫/মামুন/টিপু