সালতামামি ২০১৬

পাহাড়ি ঘাসে ভর করে দিনবদলের স্বপ্ন

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার রশিদপুর চা-বাগানের কাছে ফয়জাবাদ হিলস আশ্রয়ণে ৪০টি পরিবারের বসবাস। এখানের বাসিন্দারা পাহাড়ি সবুজ ঘাসের ওপর নির্ভর করে সৎপথে রোজগারের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন গরু পালন।

 

পাহাড়ি তাজা সবুজ ঘাসে গরু মোটাতাজা হচ্ছে। এসব গরু লাখ টাকা মূল্যেও বিক্রি হচ্ছে। এভাবে গরু পালন করে ভাগ্যবদলের চেষ্টা করছেন এখানের বাসিন্দারা। দেখা যায়, তারা খাওয়া ও ঘুম ছাড়া বাকি সময় ব্যয় করছেন গরু পালনের পেছনেই। স্বাবলম্বী হয়ে তারা চায় এ পাহাড়েই পাকা ঘরের নিশ্চয়তা তৈরি করতে। এ ক্ষেত্রে সরকারিভাবে আর্থিক সাহায্যও চাইছে তারা। পাহাড়ি ঘাসকে কাজে লাগিয়ে গরু পালন করে দিনবদলের স্বপ্ন দেখছেন তারা।

 

পরিদর্শনকালে আশ্রয়ণের বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া (২৫) জানান, তার তিনটি গরু রয়েছে। এগুলোকে তিনি পাহাড়ের সবুজ ঘাস খেতে দিচ্ছেন। গরুগুলো মোটাতাজা হচ্ছে। একটি গরু ৭০ হাজার টাকা বিকোচ্ছে। আরেকটি গরু দুধ দিচ্ছে। দুধ বিক্রি থেকে প্রতিদিনই টাকা আসছে। এ টাকায় তার পরিবার চলছে।

 

এখানকার আরেক বাসিন্দা জুয়েল মিয়া (২২) জানান, তার ছয়টি গরু রয়েছে। একই ভাবে এখানের প্রতিটি পরিবার গরু পালন করে যাচ্ছে। এতে তারা সফলতার মুখ দেখছেন। এখানে পালন করা গরুর সংখ্যা হবে প্রায় ২৫০টি। দিন দিন তারা গরু পালনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন। গরু পালনের সঙ্গে গরুর দুধ বিক্রি করেও তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

   

অন্যদিকে তারা অল্প জমিতেও গরুর গোবর দিয়ে বিষমুক্ত নানা ধরনের ফসলের আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। আবার গরুর গোবর তারা লেবু চাষি ও চা-বাগানের কাছে বিক্রি করছেন। এ থেকেও আয় হচ্ছে। সরকারি আর্থিক সহায়তা পেলে তারা অনেক দূর এগিয়ে যাবেন। এমনটাই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করছেন এসব বাসিন্দা। 

 

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এখানের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান এগিয়ে নিতে নানাভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরো সহায়তা করা হবে। তারা প্রত্যেকেই গরু পালন করে লাভবান হচ্ছেন।’

 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিরাজুল হক বলেন, ‘পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর ঘাস জন্মে। এসব ঘাস দিয়ে গরু পালন করলে যে কেউ লাভবান হবেন। আমাদের পক্ষ থেকে এখানে সার্বিকভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরো করা হবে। এখানে গরুর সমস্যা হলে আমাদের জানাতে হবে। তবেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে আমাদের পক্ষে।’

 

স্থানীয় সমাজসেবক সামিউল ইসলাম বলেন, ‘আশ্রয়ণবাসীর সুখেদুঃখে আমরা তাদের পাশে রয়েছি। তাদের জীবনযাত্রার মানকে আরো এগিয়ে নিতে সরকারি আর্থিক সহায়তা করা প্রয়োজন।’

 

রাইজংবিডি/হবিগঞ্জ/২৮ আগস্ট ২০১৬/মামুন/টিপু/এএন